বিএমডিসি’র অনুমোদন ছাড়াই প্রতারণার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রাজশাহীর বেসরকারী শাহমখদুম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস-এর ৭ জন শিক্ষার্থী পৃথকভাবে রাজশাহীর সিএমএম (চন্দ্রিমা থানা) আমলী আদালতে যাথাক্রমে ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি ও ২১ জানুয়ারি মামলাগুলো দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলা আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
পৃথক মামলার বাদীরা হলেন, মেহেদী হাসান মুন্না, নিশাত তাসনিম সিয়াম, নাইমুল ইসলাম মকুল, ধনঞ্জয় কুমার, আব্দুল্লাহ আল সাকিব, জিন্নুরাইন কাবা, আল ইমরান। একই অভিযোগে আরো ৩২ জন ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী বিভিন্ন জেলায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে মামলাকারী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন।
পৃথক এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে, শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান স্বাধীন, অধ্যক্ষ ডাঃ ফাতেমা সিদ্দিকা, চেয়ারম্যান মোঃ জিল্লুর রহমান, সহকারী পরিচালক ডাঃ মোজাম্মেল হক বেলাল, গভর্নিং বডির সদস্য মোছাঃ বিউটি বেগম, মোঃ মিঠু, মোঃ টিটু, মোঃ কবির হোসেন, প্রশাসনিক কর্মবর্তা মোঃ নাজমুল হোসেন, মোঃ মাসুদ রানা ও মোসাঃ সানজিদা আক্তার বিথিকে।
মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহীর বেসরকারী শাহমখদুম মেডিকেল কলেজে বিএমডিসি অনুমোদন নাই অথচ পত্রিকায় প্রতারণামূলক ভর্তি বিজ্ঞাপন দিয়ে আসামীরা ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির জন্য উৎসাহিত করে। বাদীরা তাদের অভিযোগে উল্লেখ করেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সান্তান হলেও মেধাবী ছাত্র হওয়ায় তাদের পিতারা জমি বিক্রি করে ছেলেকে ডাক্তার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করেন।
আসামীগণের প্রতিষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রতারণামমূলক ও বিশ্বাসভঙ্গ করার জন্য প্রকাশ করেছে যা বাদী বা তার পরিবারের লোকজন বুঝতে পরেনি। এই প্রেক্ষেতে ৩৯ জন শিক্ষার্থীর প্রত্যেকের নিকট থেকে ১১ লাখ থেকে ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় আসামীরা। প্রথম অবস্থায় কোন শিক্ষার্থীই আসামীদের বিশ্বাসভঙ্গের বিষয়টি বুঝতে পারেনি।
আসামীরা যথারীতি মেডিকেল কলেজের অভ্যন্তরীন পরীক্ষাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিক বিষয়গুলো কৌশলে পরিচালনা করেছেন। কিন্তু ১ম বর্ষ বৃত্তিমূলক পরীক্ষা অর্থাৎ ১ম বর্স এমবিবিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। তখন সকল শিক্ষার্থী শাহমখদুম মেডিকেল কলেজ সম্পর্কে অবগত হন যে, এই প্রতিষ্ঠানের বিএমডিসি এর কোন অনুমোদন নেই।
প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহী মেডিকেল বিশ্বিবদ্যালয়ের অধিভূক্ত নহে কিংবা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেই। সেই কারণে শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস ১ম বর্ষ বৃত্তিমূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও রেজিস্ট্রেশন করতে পারছে না। এমতাবস্থায় অষ্টম ও নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু করেন এবং আসামীগণকে এই বিষয়ে বলতে গেলে আসামীগণ একদলভূক্ত হয়ে তাদের সাথে মারমূখি আচরণ করেন এবং হত্যার হুমকী দিয়ে হোস্টেল থেকে বের করে দেয়।
সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর দুপুর ২টায় ভূক্তভোগী ছাত্র-ছাত্রীরা শাহমখদুম মেডিকেল কলেজের ১ নম্বর মেইন গেটে ২নং আসামী (শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ-এর অধ্যক্ষ) ছাড়া অন্য আসামীদের পেয়ে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের বিষয়টি জানতে চায়। সেসময় আসামীরা অকপটে স্বীকার করে যে, ‘তোদের সাথে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা করেছি এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছি এবং শাহমখদুম মেডিকেল কলেজ বিএমডিসি এর কোন অনুমোদন নেই, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধিভূক্ত নহে। যা পারিস তা করে টাকা আদায় করে নিস। পারলে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা কর।’
আসামীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ এবং জীবনের মূল্যবান সময় বিনষ্ট করে অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করেছে। মামলায় তারা ন্যাবিচারে স্বার্থে আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা ও সুবিচারের আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে, রাজশাহী শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজ প্রতিপক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির উচ্চপর্যায়ে তদন্ত দাবি করে ৩৯ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জরুরি পদক্ষেপ দাবি করেন এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, রাজশাহী সিটি মেয়র, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও রাজশাহী জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :