অবৈধ ইটভাটার কারণে কমছে ফসলি জমি। অন্যান্য কৃষকদের জমির ক্ষতি করে ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ভাটায়। মাটি কাটার কারণে ধ্বসে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাশ্ববর্তী জমি। এভাবে চলতে থাকলে একসময় চাষযোগ্য জমির অভাব দেখা দিবে। তাই ফসলি জমি রক্ষায় অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধে ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ৫৬ জন কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দা।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ও মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার অবৈধ ইটভাটা স্বাধীন ব্রিকসের মালিকদের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর অভিযোগ দেন তারা।
হরিরামপুর উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে তিনটি। ভাটাগুলো হলো স্বাধীন ব্রিকস, সততা ব্রিকস ও আমিন ব্রিকস। তিনটি ভাটাই বলড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। কৃষকরা বলছেন, গত কয়েকবছরে শুধু বলড়াতেই কমেছে অন্তত ১০ একরেরও বেশি ফসলি জমি। এসব মাটি কেটে ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ভাটা তিনটির কোনোটিরই পরিবেশ ছাড়পত্রসহ প্রয়োজনীয় বৈধ কাগজপত্র না থাকার পরেও চলছে বছরের পর বছর। মাঝে মাঝে জরিমানা করা হলেও অদৃশ্য কোনো কারণে বন্ধ হয়না এসব ইটভাটা।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। এছাড়া, ইটের কাঁচামাল হিসেবে কৃষিজমির মাটি ব্যবহারও নিষিদ্ধ।
কয়েকজন কৃষক বলেন, ভাটা নির্মাণের পর থেকে ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। ফসলি জমির মাটি দিয়েই ভাটায় ইট প্রস্তুত করা হয়। ইট পোড়ানো ধোঁয়ার গন্ধে শ্বাসকষ্ট হওয়ায় অনেক সময় জমিতে কাজ করতেও সমস্যা হয় কৃষকদের। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত ভাটাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি সরজমিনে স্বাধীন ব্রিকসের পাশে কয়েকটি জমি থেকে মাটি কাটতে দেখা যায়। এসব মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়। মাটি কাটার কারণে পার্শ্ববর্তী লতিফ মোল্লা, মোশারফ ও মোতালেবের জমির বেশকিছু অংশ ধ্বসে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক লতিফ মোল্লা বলেন, গতবছর আমার ৬ শতাংশ জমির পাশের জমি থেকে মাটি কাটার কারণে আমার জমির কিছু অংশ ধ্বসে পড়েছিল। পরে ইটভাটার পার্টনার সজিব বলেছিল জমি বেঁধে দিবে। আর দেয়নি। এবছর আবার মাটি কাটার জন্য আমার জমি ধ্বসে পড়েছে। আমরা তাদের কিছু বলতে পারিনা। তারা ইচ্ছা করেই এমনভাবে মাটি কাটে, যাতে চারপাশের জমি ধ্বসে পড়ে এবং তাদের কাছেই বাধ্য হয়ে বিক্রি করে।
ধ্বসে পড়া আরেক জমির মালিক মোশাররফ বলেন, আমার ২০ শতাংশ জমির একাংশ ধ্বসে পড়েছে। গভীর রাতে ইচ্ছাকৃতভাবে এমনভাবে মাটি কাটে যাতে পাশের জমির মাটি ধ্বসে পড়ে। এরপর জমির মালিকরা যাতে তাদের কাছেই জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন। রাতের বেলায় আমাদের পক্ষে তো আর জমিতে গিয়ে বসে থাকা সম্ভব না।
স্থানীয় আরেক কৃষক সাহেব আলী বলেন, ইটভাটার জন্য বছর বছর কৃষি জমির পরিমাণ কমছে। ফসলের উৎপাদন কমে গেছে। তাদের মাটি কাটার কারণে পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভাটার ধোঁয়ার গন্ধে জমিতে কাজ করতেও সমস্যা হয়।
তবে, মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে স্বাধীন ব্রিকসের একাংশের মালিক শীতল চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে পরে কথা বলবো।’
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহরিয়ার রহমান অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গতকাল একটা অভিযোগ পেয়েছি। সেটা এসিল্যান্ড কে দেয়া হয়েছে। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
মুঠোফোনে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপসী রাবেয়া বলেন, "ইউএনও অফিস থেকে অভিযোগের বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো আমি হাতে পাইনি। অবৈধ এ বিষয়গুলোতে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।"
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :