ছদ্মনাম আঁখি ও পরশ। সাপাহার উপজেলার ১৬ বছর বয়সী কিশোরী আঁখি গত বছরের ৯ জানুয়ারি প্রেমিক পরশের কর্মস্থল ময়মনসিংহে পালিয়ে যায়। এরপর এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা দেন তারা। বসবাস শুরু করেন ময়মনসিংহের একটি ভাড়া বাসায়। পরশ সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। এরপর ২২ জানুয়ারি বাড়ি ফিরে আসেন আঁখি। ততদিনে তার বাবা পরশের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মামলায় পরশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর আদালত ওই মামলায় পরশকে কারাগারে পাঠিয়ে আঁখিকে তার পরিবারের জিম্মায় দেন।
ঠিক এমনই বেশ কিছু প্রেম সম্পর্কিত মামলার শুনানি হয়েছে বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) নওগাঁ আদালতে। মূলত বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এমন উদ্যোগ নেন আদালত কর্তৃপক্ষ। আদালতের বিচারক মেহেদী হাসান তালুকদার সকাল ১১টায় এজলাসে বসে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি শুনানিতে উপস্থিত যুগলদের ধর্মীয় অনুশাসন ও পিতা-মাতার আদেশ মেনে চলা, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, আত্মনির্ভরশীল হওয়া এবং শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করেন।
শুধু তাই নয়; শুনানির জন্য আদালতে আসা প্রেমিক যুগলদের ‘লাভ ক্যান্ডি’ ও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মকবুল হোসেন। আদালতে ৩৬টি মামলার শুনানি হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ এ আদালতে যেসব মামলার শুনানি হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মামলা হলো-
কয়েক বছর আগে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার এক কিশোরী সনাতন ধর্মের এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সেই সময় ওই কিশোরীর বয়স ছিল ১৪ বছর। সে তখন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পড়ত। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই মেয়েটির পরিবার এই সম্পর্কের কথা জানতে পারে। এ সম্পর্কে পরিবারের মত না থাকায় মেয়ে ও ছেলে দুজনই একসঙ্গে আত্মহত্যার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল। পরে ২০২১ সালের ২০ জুন তারা পালিয়ে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় মেয়েটির বাবার করা অপহরণ মামলায় ছেলেটিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পোরশা উপজেলার ১৬ বছর বয়সী রুবাইয়ার (ছদ্মনাম) ২০২২ সালের ৯ জুলাই প্রেমিক জাহিদের (ছদ্মনাম) সঙ্গে ঘুরতে বের হন। আর এটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় রুবাইয়ার। জাহিদ তাকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় রুবাইয়ার বাবা বাদী হয়ে জাহিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে এ মামলায় পুলিশ প্রেমিক জাহিদকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের বিষয়ে পিপি মকবুল হোসেন বলেন, ‘আজ ভিন্ন মাত্রায় আদালত বসেছে। ট্রাইব্যুনালের অসম প্রেমে জড়ানো ও তা থেকে অভিভাবকদের অপহরণ এবং বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের মামলাগুলো শুনানির জন্য রাখা হয়। বিচারক সংশ্লিষ্টদের পড়াশুনার পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধে ও গুরুজনদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলার উপদেশ দেন।’
নওগাঁ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ‘মামলাগুলো ভিন্ন ভিন্ন দিনে শুনানি করলে বিচারক মহোদয় সবাইকে একই উপদেশ দিতে পারতেন না। মামলাগুলো একইদিনে শুনানির উদ্যোগ নিয়ে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :