রাজশাহীতে দুই বোনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। হঠাৎ করে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে চার দিনের ব্যবধানে তাদের মৃত্যু হয়। দুই শিশুর মধ্যে বড় জন শনিবার বিকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মারা যায়। চার দিন আগে বুধবার ছোটজনকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
ভাইরাসজনিত কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণ করছেন চিকিৎসকরা। তবে কোন ভাইরাসে তারা আক্রান্ত হয় তা নিশ্চিত হতে পারেননি। এমন অবস্থায় দুই শিশুর বাবা-মাকে কোথাও যেতে না দিয়ে হাসপাতালেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
দুই শিশুর বাবা-মা সাংবাদিকদের বলেন, শিশুরা না ধুয়ে কুড়িয়ে আনা বরই খেয়েছিল। তারপর তাদের জ্বর আসে। তাদের নাম মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া। ২ মার্চ দুই বছর বয়স হতো মুনতাহা মারিশার এবং ৩০ মে পাঁচ বছরে পা রাখত মুফতাউল মাশিয়া।
তাদের বাবা মনজুর রহমান রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তার স্ত্রী পলি খাতুন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, বাচ্চা দুটো নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও তাদের বাবা-মা জানান, তারা খেজুর রস খায়নি। তবে না ধুয়ে বরই খেয়েছিল। এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোন ভাইরাসও হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, সেটা আসলেই কী তা জানতে হাসপাতালে মারা যাওয়া মারিশা আর তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রোববার রিপোর্ট হবে। তখন জানতে পারব।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শনিবার বিকাল ৫টার দিকে আইসিইউতে মারা যায় বড় মেয়ে মাশিয়া। এরপর শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকরা। তাদের রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে।
বিকালে স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পর দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। বুধবার বিকালে ছোট মেয়ে মারিশা মারা যাওয়ার পর তাকেও সেখানে দাফন করা হয়।
শিশুদের মা বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিল। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা ও মাশিয়া। সেদিন তারা ভালই ছিল। একসঙ্গে খেলেছে।
পরদিন বুধবার বেলা ১১টার দিকে ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। বার বার পানি খাচ্ছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সম্মিলিত সামরিক হাসাপাতালে (সিএমএইচ) আসেন।
একুশে সংবাদ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :