এবার সরিষার বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্যদাম নিয়ে হতাশ সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের চাষিরা। তাদের অভিযোগ, প্রতিবছর সার ও কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম বাড়লেও তুলনামূলকভাবে বাড়ে না সরিষার দাম। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে সরিষার বাম্পার ফলন হলেও বাজারের দাম নিয়ে হতাশ কৃষকেরা।
অনেকের মতে, বাজারে আমদানিকৃত ভোজ্য তেলের আমদানি ও বাজারদর ঠিক রাখতে কৃত্রিম এ সংকট তৈরি করে সরিষার নাষ্যমূল্য থেকে কৃষকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহ হারবেন।
এবার ৫ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন চান্দাইকোনা ইউনিয়নের কৃষক গোলাম ইয়াজদানী তালুকদার। সব জমিতেই ফলন হয়েছে ভালো। তবে যে লাভের আশা তিনি করেছিলেন তা পূরণ না হওয়ার শঙ্কায় কাটছে তার দিন। একই এলাকার কৃষক আবু সুফিয়ান ও আব্দুল খালেক। তাদের জমিতে এবার বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। তবে সরিষার ন্যায্যদাম না পেয়ে হতাশ তারাও।
তাদের অভিযোগ প্রতিবছর বাড়ছে কৃষি উপকরণের দাম। সেই সঙ্গে বেড়েছে উৎপাদন খরচও। কিন্তু সে অনুযায়ী মূল্য পায় না। তারা আরো জানায়, বোরো ধানের খরচ পুষিয়ে নিতে প্রতিবছর এই আবাদ করে থাকি। এই আবাদটি কৃষকদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তবে আমরা প্রকৃত দামে সরিষা বিক্রি করতে পারছি না। বাইরের বড় বড় মহাজনেরা এখনো এলাকায় সরিষা কিনতে আসেননি। এবার প্রতি মণ ২ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার ২শত টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
উপজেলার আরেক কৃষক আলামিন তালুকদার বলেন, বাপ—দাদার আমল থেকেই আমরা কৃষি কাজের ওপর চলি। প্রতি বছরই
বাড়ছে কৃষি উপকরণের দাম। চলতি মৌসুমে আমি মোট ৬ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। সরিষার মণ চার হাজার টাকা হলে আমরা লাভবান হতাম। দাম না বাড়লে সরিষার চাষ করে পুষিয়ে উঠা সম্ভব হচ্ছে না।
জানা যায়, এবার কৃষকেরা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী দেশীয় জাতের ওপর নির্ভরশীল না থেকে উচ্চফলনশীল জাত
ব্যবহার করায় এবং অন্যান্য উপকরণ সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করায় উৎপাদন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যেই জমি থেকে সরিষা তোলা শেষ হয়েছে।
রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ জানান, এ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। এবার রোগবালাই দেখা যায়নি। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখায় ভালো ফলন হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে এই মুহূর্তে বাজারে সরিষার ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাচ্ছে না এটা সত্যি।
কৃষকদের একটু ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, এই মুহূর্তে সরিষা ভাঙিয়ে ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার করা যায়, আর কিছুদিনের মধ্যেই এই সংকট কেটে যাবে। নিজেরাই মজুত করে বাজারে ধীরে ধীরে সরিষা ছাড়লে ন্যায্যদাম পাবেন কৃষকরা। এছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে সঙ্গে নিয়ে কৃষকদের ন্যায্যদাম পেতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে তথ্যমতে, রায়গঞ্জ উপজেলায় ৫৯ হাজার ২৬১ জন চাষী রয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকেরা। কৃষি প্রণোদনার আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ে ৪ হাজার ৩৮০ কৃষকেরা মাঝে বিনা মূল্যে সার ও সরিষা বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/আ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :