নীলফামারীর ডিমলায় দেড়কোটি টাকার গাছ বিয়াল্লিশ লক্ষ আটষট্টি হাজার দুইশত এগারো টাকা মূল্য নির্ধারণ করে সস্তা মূল্যে নিলামের অভিযোগ উঠেছে। দরপত্রের গাছগুলোর বয়স ১৬ বছর হওয়ার কথা থাকলেও তিন শতাধিক গাছের বয়স ৩০-৩৫ বছর। এনিয়ে নিয়ে মঙ্গলবার (২০ জানুয়ারী) মোঃ মহিউল আলম নামে এক ব্যক্তি বিক্রয়ের দরপত্র স্থগিত চেয়ে নীলফামারী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারী ৫নং গয়াবাড়ী ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন প্রজাতির ৩৮ (আটত্রিশ) গ্রুপের গাছ বিক্রয়ের লক্ষ্য দুই সড়কের দু’ধারের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কর্তনের প্রয়োজনে বিক্রয়ের নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় বনবিভাগের মাধ্যমে এই নিলামের ব্যবস্থা করেন। নিলামে ১৫৫৯টি গাছের সরকারি মূল্য ধরা হয় মাত্র ৪২লাখ ৬৮ হাজার ২শত ১১টাকা।
কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, দরপত্রে উল্লেখিত প্রকল্পের গাছগুলোর ন্যূনতম বাজারমূল্য ১কোটি ৫০লাখ টাকার বেশি। মূল্য নির্ধারণ অত্যন্ত কম হওয়ায় সংশ্লিষ্ট উপকার ভোগীরা বঞ্চিত হয়েছেন। সরকারও হারাতে যাচ্ছে বড় অঙ্কের রাজস্ব।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৫নং গয়াবাড়ী ইউনিয়নের টেপাখড়িবাড়ী সীমানা হতে নাউতাড়া ইউনিয়নের সীমানা পর্যন্ত এবং পশ্চিম খড়িবাড়ী হতে খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ সীমানা পর্যন্ত গয়াবাড়ী ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন প্রজাতির ৩৮ (আটত্রিশ) গ্রুপের গাছ বিক্রয়ের নিমিত্ত পূণরায় দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্রের গাছগুলো বাংলাদেশ সরকার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার অর্থায়নে স্থানীয় সরকার, প্রকৌশল অধিদপ্তর ও কেয়ার বাংলাদেশের সহযোগিতা (BULD) প্রকল্পের আওতায় রোপিত বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। বন বিভাগের কর্মকর্তারাদের সাথে যোগসাজশে আনুমানিক তিন শতাধিক অতিরিক্ত গাছে নাম্বার দিয়ে ২০২৩ সালে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
দরপত্রের গাছগুলোর বয়স ১৬ বছর হওয়ার কথা থাকলেও তিন শতাধিক গাছের বয়স আনুমানিক ৩০-৩৫ বছর। এতে বিয়াল্লিশ লক্ষ আটষট্টি হাজার দুইশতএগারো টাকা মূল্যে নির্ধারণ করা হলেও এর বাস্তব আনুমানিক মূল্য এক কোটি তিরিশ লক্ষ টাকা প্রায়।
নিয়মানুযায়ী জমির মালিক ও পরিচর্যাকারীদের লভ্যাংশ পাওয়ার কথা থাকলেও এখনো তাদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়নি। এ নিয়ে আইনী জটিলতা দেখা দিলে ২০২৩ সালে উল্লেখিত দরপত্র বাতিল হয়। কিন্তু সৃষ্ট আইনী জটিলতার নিরসন না করেই পূর্ব মূল্যে গাছ বিক্রয়ের পুনঃ দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সে হিসেবে উল্লেখিত প্রকল্পের আওতায় রোপিত গাছের বর্তমান মূল্য আনুমানিক এককোটি তিরিশ লক্ষ প্রায়। এই অর্থ থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার, পরিচর্যাকারী ও জমির মালিক। এছাড়াও উল্লেখিত দরপত্রের গাছগুলোর দুই ধারে বোরো ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের অর্থযোগানকারী খাদ্য শস্য রোপণ করা হয়েছে। এই মুহূর্তে উল্লেখিত দরপত্রের গাছগুলো কাটা হলে আবাদী ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। এরূপ রাষ্ট্র ও জনস্বার্থ পরিপন্থী সিদ্ধান্ত বন্ধের কথা লিখিত অভিযোগে বলা হয়।
এ বিষয়ে মোঃ মহিউল আলম বলেন, দেশ ও দেশের কথা ভেবে আমাদের রোপিত আবাদী ফসল সমূহ রক্ষায় উল্লেখিত দরপত্র বাতিল করে প্রকৃত প্রকল্প ভুক্ত গাছের তালিকা প্রণয়ন, পরিচর্যাকারী ও জমির মালিকের তালিকা প্রণয়ন করে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে গাছ বিক্রয়ের পুনরায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
নীলফামারী জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম বলেন, আমার পূর্ববর্তী অফিসার এই গাছগুলোর মূল্য নির্ধারণ করেছে। তাই এবিষয়ে আমি তেমন কিছু জানিনা। মূল্য নির্ধারণ নিয়ে কারোর কোনো আপত্তি থাকলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে অনুমতি প্রদান করলে অবশ্যই সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জানান, এসব গাছের মূল্য নির্ধারণ আমরা করিনি বন বিভাগ করেছে। যদি আবারো মুল্য নিধারণ করতে হয় তারা করবে। আর এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :