মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার কাদিরপাড়া ইউনিয়নের দোরাননগর গ্রামে গড়াই নদীর ভাঙন রোধে এবং বসতভিটা, মন্দির ও শশ্মান রক্ষায় গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে ও নিজস্ব অর্থায়নে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করছেন এলাকাবাসী।
প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে ১৬টি স্থানে তীব্র নদী স্রোত, পানির ঘূর্ণিপাক রোধ ও বাঁধরক্ষায় দেড় থেকে দু’শত জন গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন। ২০২০ সালে ভাঙ্গন কবলিত দোরাননগর গ্রামকে রক্ষার জন্য এ গ্রামের রনজিত মন্ডলের পুত্র ডাঃ পংকোজ কান্তি মন্ডল নিজ অর্থায়নে ও গ্রামের সাধারণ মানুষদেকে সাথে নিয়ে প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে বাঁশ দিয়ে আটটি বাঁধ নির্মান কাজ করেন।
এ প্রক্রিয়ার তারা যথেষ্ট উপকার পান এবং বাঁধের কারণে প্রচুর পরিমান বালি ও পলি মাটি পরে ভাঙ্গন রোধ হয়। সুফল পেয়ে তারা ২০২১ সালে পুনরায় রড,সিমেন্টর খুটি তৈরী করে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে শক্তভাবে আটটি বাঁধ নির্মান করেন। এতে তাদের আট লক্ষ টাকা ব্যয় হলেও স্থায়ীভাবে রক্ষা পায় গ্রামবাসীর জান মাল।
দুই বছর পর তারা আবার নতুন করে গত শুক্রবার থেকে সম্মিলিতভাবে বাঁধরক্ষার কাজ শুরু করেছেন। ডাক্তার পংকজ কান্তি মন্ডল, তার বড়ভাই প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার মন্ডল ও ছোটভাই প্রকৌশলী রথিন্দ্রনাথ মন্ডলসহ গ্রামের সাধারণ মানুষদের সাথে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যামে বাঁধ নির্মানের কাজ কওে যাচ্ছেন। ডাঃ পংকজ কান্তি মন্ডল নিজগুণে নিজ অর্থায়ণে প্রায় দশ লাখ টাকা ব্যয় শতাধীক কংক্রিটের পাকা পিলার তৈরি করেছেন। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় এ পিলারগুলি ভাঙণ কবলিত এলাকায় গভীর করে পুতে বাঁশ দিয়ে আড় বাধ দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরসহ বিগত কয়েক বছর ধরে অব্যাহত গড়াই নদীর তীব্র ভাঙনে উপজেলার কাদিরপাড়া,দারিয়াপুর, নাকোল ও আমলসারসহ ৪টি ইউনিয়নে নদী তীরবর্তী দশটি গ্রামের প্রায় দু’শতাধীক পরিবার ও তাদের বসতভিটা, আবাদি জমি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
নদীর গর্ভে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি গ্রামবাসীর উদ্যোগে এই ধরণের পদক্ষেপ গ্রহন করলে নিশ্চিত উপকৃত হতো। কাদিরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন খান বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দোরাননগর গ্রামে ভাঙনরোধে গ্রামবাসীএই কাজ শুরু করেছেন । দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামটি রক্ষার্থে এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যামে তাদের নিজ অর্থায়নে এ মহৎ কাজটি
করে যাচ্ছেন। তবে তাঁর পক্ষ থেকে কোন প্রকার সহযোগিতা লাগলে তিনি সেটা করবেন বলে গ্রামবাসীকে আশ্বাস্ত করেছেন।
এ বিষয়ে ডাঃ পংকজ কান্তি মন্ডল জানান, তিনি পড়ালেখা শিখে ডাক্তার হয়েছেন দেশের মানুষের সেবা করার জন্য । তাই তিনি চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি এলাকার মানুষকে কিছুটা সহযোগিতা করতে চান। সেই বিষয়টি ভেবে তিনি এলাকার সাধারণ মানুষের বসবাস ও জানমালের ক্ষতি রক্ষার্থে এবং মন্দির ও শশ্মানকে বাচিয়ে রাখতে নিজ অর্থায়ণে এ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। ২০২০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৫’বছরে গ্রামবাসীর স্বার্থে বাধরক্ষা তাঁর ২৫ লক্ষাধীক টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে ভবিষ্যতেও তিনি এই ধরনের সেবামূলক কাজে সহযোগিতা করবেন বলেও জানান।
একুশে সংবাদ/এনএস
আপনার মতামত লিখুন :