নির্বিচারে গাছ কেটে ও ফসল বিনষ্ট করে মেরামতের কাজ হচ্ছে কোটচাঁদপুর জিসি-গান্না জিসি ভায়া তালিনা সড়কের। সিডিউল অনুপাতে কাজ করা হচ্ছে দাবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। ক্ষয়ক্ষতির দায়ভার ঠিকাদারকে নিতে হবে বলছেন উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ। ওই ঘটনার তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়,কোটচাঁদপুর জিসি-গান্না জিসি ভায়া তালিনা সড়ক এটি। সড়কটি মেরামতের জন্য ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রন্থ পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্প (CAFDRIRP) এর আওতায় টেন্ডার আহ্বান করেন এলজিইডি বিভাগ। এ কাজটি পান রাজশাহীর গাড়ামারী বাজারের বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন। ওই সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল ৫১৪৭-৮৩১০মিটার।
যার প্রাক্কল্পিত মূল্য ছিল ২,৫৭,৭৮,৯২৬.০০ টাকা। আর চুক্তি মূল্য ছিল ২,৩২,০১,০৩৩,৪০০ টাকা।
পরে কাজটি কিনে নেন ঝিনাইদহের কাজী মাহবুবুর রহমান কনস্ট্রাকশন। এরপর গেল ২৫ ফেব্রুয়ারী থেকে মেরামতের কাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এ সময় ওই প্রতিষ্ঠানটি চাষিদের সব বাঁধা উপেক্ষা করে সড়কের দুই পাশের মেহগনি,কড়াই,নিম,ও খেজুর গাছ কেটে দিয়েছেন। নষ্ট করেছেন ধান,ভূট্রা,মসুরি,গম,সহ বিভিন্ন ফসল এমন অভিযোগ ভুক্তভুগীদের।
এ দিকে ওই সব কাটা গাছ নিয়ে ব্যবসায় মেতেছেন সংশ্লিষ্ট অফিসের সুপার ভাইজার আব্দুর রহিম সহ ও এলাকার কিছু অসাধু মানুষ। তারা ওই কাটা গাছ নিয়ে গিয়ে তাদের ইচ্ছে মত ব্যবসা করেছেন এমন দাবি ও তাদের।
তবে ওই অভিযোগ অস্বীকার করে কাজী মাহবুবুর রহমান কনস্ট্রাকশনের মালিক ঠিকাদার মাহবুবুর রহমান রুনু বলেন,গাছ কাটার সময় অফিসের সুপার,এসও ও কার্যসহকারী ছিলেন। ওনারা যদি গাছ অফিসে না দিয়ে থাকেন,তাঁর জন্য ওনারা দায়ী। ওনাদের ধরলে সব পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন,সিডিউল অনুযায়ী সড়কের পাশ থেকে মাটি কেটে দেয়ার কথা। আমরা সেটাই করছি। আর ওই কাজ করতে গিয়ে সড়কের কিছু গাছ মারতে হয়েছে,তা না হলে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা সম্ভব হচ্ছিল না।
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন,কালিগঞ্জের শিশুতলা থেকে বালিয়াডাঙ্গা সড়কে একইভাবে সড়কের পাশ থেকে মাটি কেটে দেয়া হয়েছে। তারা কোন অভিযোগ করেননি। চাষিদের ক্ষতি নিয়ে প্রশ্নে করলে তিনি বলেন,চাষিরা আমার কাছে কোন করেননি।
এ ব্যাপারে তালিনা গ্রামের শান্তি সর্দার বলেন,আমার মাত্র ১০ কাঠা জমিতে ভূট্রার চাষ ছিল। মাটি কাটার স্বার্থে অর্ধেক জমির কাঁচা ভূট্রার গাছ কেটে নিতে হয়েছে। কাঠা পড়েছে আমার বেশ কয়েকটি কড়াইসহ অন্যান্য গাছও।
তিনি বলেন,ভেকু দিয়ে মাটি না কেটে কোদাল দিয়ে মাটি কাটলে চাষিদের এত বেশি ক্ষতি হত না। গাছ পালাও বিনষ্ট হত না। এত ক্ষতিপূরন কে দিবে আমাদের। কে আছে আমাদের কথা শোনার। আমরা এ ঘটনার তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাচ্ছি।
তালিনা গ্রামের মন্টু মিয়া বলেন,মজিদ নামের ১ জনেরই ১ শ খেজুর গাছ কাটা পড়েছে। এ ছাড়া আরো অনেক চাষিরও কাটা পড়েছে গাছ।
তিনি বলেন, ভেকু দিয়ে মাটি কাটায় চাষিদের অনেক বেশি ক্ষতিতে পড়তে হয়েছে। এ ক্ষতিপূরন চাষিদের কে দিবেন এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন গনমাধ্যম কর্মীদের দিকে।
শুধু শান্তি সর্দার আর মন্টু মিয়া না অনেক চাষির রয়েছে গাছ কাটা আর ফসল বিনষ্টের অভিযোগ। তবে তারা জানেন না এ অভিযোগ কোথায় দিবেন।আর কোথায় গেলে পাবেন এর বিচার। তারা এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। চেয়েছেন ক্ষতিপূরনও।
বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন,ঠিকাদার কাজ শুরু করেছেন আমি জানতাম না। এরপর জানতে পারলাম গাছ মারার ঘটনা। এরপর কাজ বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে ঠিকাদারকে। তিনি কাজ করেননি। আপনারা ওনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন।
তিনি বলেন, আমি তো ঠিকাদারের সঙ্গে মারামারি করতে পারবো না। আমি তাকে কাজ করতে না করেছি, এরপরও তিনি এগুলো করছেন। তবে আমি স্যারকে বলেছি, স্যার ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। নির্বিচারে গাছ কাটা ও ফসল নষ্টের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি বলেন,অভিযোগ পাওয়ার পর ঠিকাদারকে এ সব বন্ধ করতে বলেছিলাম।তিনি বন্ধ করেননি,তাহলে এ সবের দায়ভারও ওনাকে নিতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উছেন মে বলেন,অভিযোগ পাওয়ার পর আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া নায়েব সাহেবকে পাঠানো হয়েছে। তিনি দেখে আসার পর রিপোর্ট দিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :