উত্তরবঙ্গের কৃষি ভান্ডার বলা হয় রাজশাহীর তানোর উপজেলাকে। ধান, আলুসহ নানা ধরনের সবজি চাষ হয় উপজেলার আনাচে কানাচে। ইতিপূর্বেই বিল কুমারী বিলের জমিতে বোরো ধান পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। তবে পরিচর্যায় আদিবাসী শ্রমিক ছাড়া মিলছে না। কারণ জমি পরিচর্যার কাজে শ্রমিকের মূল্য কিছুটা কম। অপর দিকে আলু উত্তোলনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক, কৃষাণী ও শ্রমিকরা। একসাথে সব ধরনের কৃষি কাজ হওয়ার কারণে কদর বেড়েছে শ্রমিকের, সেই সাথে দেখা দিয়েছে সংকটও।
গুবিরপাড়া গ্রামের নিচে বিলের বোরো জমিতে আগাছা পরিচর্যা করছিলেন কয়েকজন আদিবাসী পুরুষ মহিলা শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে শ্যামলী ও আসমাউল জানান, আমরা চুক্তি ভাগে আগাছা পরিস্কার করে থাকি। চার থেকে পাঁচজন শ্রমিক মিলে দিনে একবিঘা জমিতে কাজ করতে পারি। আগাছা কম হলে ১ হাজার টাকা আর বেশি হলে ১ হাজার ৪০০ টাকা করে নিয়ে থাকি। তবে বর্তমান বাজারের তুলনায় মূল্য অনেকটাই কম। আর আমরা কৃষি কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজও করতে পারিনা।
কৃষকরা জানান, ধান রোপন থেকে শুরু করে উত্তোলন এবং মাড়ায় পর্যন্ত আদিবাসি শ্রমিকরাই সবকিছু করে থাকেন। বিশেষ করে আগাছা পরিস্কারের জন্য অন্য শ্রমিক পাওয়ায় যায়না। তারাই আদিকাল থেকে এধরণের কৃষি কাজ করে থাকেন। যদিও বিলের জমিতে সার কীটনাশকের প্রয়োজন কম হয়। কিন্তু যতটুকু প্রয়োজন বাড়তি দামের কারনে খরচ বেড়েছে অনেক। আবার সেচ হারও বেশি।
মেয়র ইমরুল জানান, এবারে ২২ বিঘা জমিতে বোরো রোপন করেছি। এখন আগাছা পরিস্কার করা হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিক দের কদর বেড়েছে প্রচুর। সকালে জমিতে যাচ্ছে ১২ টার সময় কাজ শেষ করছে। শ্রমিক প্রতি সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। চান্দুড়িয়া ইউপির গাগরন্দ এলাকার কৃষক মুসলেম জানান, ১০ বিঘা জমিতে বোরো রোপন করেছি এবং আলুর বীজ বিঘায় ৪৭ বস্তা করে হয়েছে।
পৌর সদর এলাকার কৃষক বাক্কার জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আলুতে ফলন কম হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিলকুমারী বিল বা শীবনদী এখন সবুজ অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। বলার উপায় নেই এই বিলে বন্যার পানিতে বোরো ধান থেকে শুরু করে ঘরবাড়ি ঢুবে যায়। বিলের মুল অংশ গুবিরপাড়া ও তালন্দ এলাকার সামনের অংশটা। বিলে সামান্য পরিমান জায়গায় পানি রয়েছে। সেই সামান্য পানিতেই প্রতিদিন লাখলাখ টাকার কাট মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ পাওয়া যায়। চান্দুড়িয়া চৌকির ঘাট থেকে কামারগাঁ ইউপির মালশিরা পর্যন্ত বিলের অংশ। যেদিকেই চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। মনে হয় কেউ সবুজ চাদর বিছিয়ে রেখেছে।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে। আলু উত্তোলনের সময় হিমাগার মালিকদের সিন্ডিকেটের কারনে প্রতিদিন দাম উঠা নামা করে। কয়েকদিন আগে ১৭/১৮ টাকা কেজি দর ছিল। তা বেড়ে ২২ টাকা কেজি হয়েছে।
পাঁচন্দর ইউপির আলু চাষী লুৎফর রহমান বলেন, কয়েকদিন আগে চিমনা গ্রামের লঘু আলু উত্তোলন করে ১৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করে তার লোকসান গুনতে হয়েছে। সে ৫ বিঘা জমির আলু উত্তোলন করে বিঘায় ৫০ বস্তা করে ফলন হয়েছে। সারোয়ার নামের আরেক কৃষকের ৪৩ বস্তা করে হয়েছে। এক বস্তায় ৬০/৬৫ কেজি আলু থাকে।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, এবারে উপজেলায় ১৩ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার হেক্টর জমির আলু উত্তোলন হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। অর্জন হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। আলু উত্তোলনের পর লক্ষমাত্রা অর্জন হবে। এখন পর্যন্ত বিলের বোরো জমির ধান ভালো আছে। রোগবালার কোন খবর পাওয়া যায়নি। আর আলু উত্তোলনের সময় কিছুটা দাম কমে। কারন অনেকেই জমি থেকে বিক্রি করে থাকেন। তবে হিমাগারে রাখলে ভালো দাম পাবে বলে আশা করেন এই কর্মকর্তা।
একুশে সংবাদ/সা.হ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :