শেরপুর জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী) সম্প্রদায়ের লোকদের নিজ হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী বাহারি রঙ্গের পোশাকগুলো আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। দিন দিন সব কিছু মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সেই সাথে সুতার মূল্য বৃদ্ধি, অভিজ্ঞ কারিগরের অভাব ও অর্থনৈতিক দৈনতার কারণে আদিবাসীদের হাতে তৈরি বাহারি রঙ্গের পোশাকগুলো যেন দিন দিন হারিয়ে যাওয়ার মূল কারণ বলে জানা গেছে।
এসব পোষাকগুলো এখন আর আগের মতো চোখে পড়েনা। জানা যায়, গারো পাহাড়ের পাদদেশে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষে অবস্থিত শেরপুর জেলা। এ জেলার সীমান্তের তিনটি উপজেলার প্রায় ৪০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকা জুড়ে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। আদিবাসী সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতী উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গারো, হাজং, কোচ, বানাই, বর্মনসহ বিভিন্ন জাতীর প্রায় ৪০ হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের বসবাস করে।
আদিবাসী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় এদের ছিল জমিজমা, গোয়াল ভরা গরুসহ ফসলাদিতে ভরপুর। কিন্তু কালের বিবর্তনে সবকিছু হারিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন এখন ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। তারা বলেন, অতীতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজের হাতে তৈরি বাহারি রংয়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরি করে ব্যবহার করতো। সচরাচর প্রায় সকল আদিবাসী নারীদের পরনে দেখা যেতো তাদের নিজ হাতে তৈরি করা বাহারি রঙ্গের পোশাক। কোচ সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি বাহারি রঙ্গের পোষাকের মধ্যে রয়েছে লেফেন, বাশেক, উর্না।
গারো সম্প্রদায়ের নিজ হাতে তৈরি পোষাকের মধ্যে রয়েছে দকমান্দা, দকশারী, উর্না। তবে হাজং ও বানাই সম্প্রদায়ের লোকজন কোচ সম্প্রদায়ের পোষাকই নিজ হাতে তৈরি করে পরিধান করে থাকতো। কিন্তু এখন আর আদিবাসী নারীদের পরনে আগের মতো বাহারি রঙ্গের পোশাক চোখে পড়ে না। আদিবাসীদের অর্থনৈতিক অভাব, অভিজ্ঞ কারিগরের অভাব ও সুতার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের নিজ হাতে তৈরি পোষাকগুলো দিনে দিনে প্রায় বিলুপ্তির পথে।
শ্রীবরদী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, সকল প্রতিকূলতার মাঝেও ১০% আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা এখনো তা ধরে রেখেছে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকদের বিয়ে-শাদীতে এখনো চোখে পড়ে এসব বাহারি রঙ্গের পোশাক। আদিবাসী নেতারা বলেন, সরকারিভাবে অর্থনৈতিক যোগান পাওয়া গেলে আবারো আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকেরা নিজ হাতে বাহারি রঙের পোশাক তৈরিতে আগ্রহ বাড়বে।
একুশে সংবাদ/ম.আ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :