লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে বুড়িমারী রেলওয়ে স্টেশন থেকে লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন ফিতা কেটে ট্রেনটির উদ্বোধন করেন।
১৪টি কোচ, খাবারগাড়ী সংযোজনসহ ৬৩৮ আসন আসনের এ ট্রেনটি উদ্বোধনী দিনে ৪৩০জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ১৩ বছর পর ট্রেনটি চালু হওয়ায় খুশি এ অঞ্চলের মানুষ। তবে বুড়িমারী থেকে সরাসরি সংযুক্ত না করা, উপজেলা স্টেশনে যাত্রাবিরতি না থাকায় হতাশ সাধারণ মানুষ।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যডভোকেট মতিয়ার রহমান, রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলীয় ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার।
অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল ও পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পূর্ণ চন্দ্র রায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের রাজশাহী পশ্চিম ব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, বুড়িমারী রেলস্টেশনে ওয়াস পিড ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত লালমনিরহাট রেলস্টেশন থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে চলাচলা করবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা ও তিনবিঘা করিডোর পরদির্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় তিনি বুড়িমারী থেকে সরাসরি রাজধানী ঢাকায় চলাচলের জন্য একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৮ সালের ১৬ জুন মাসে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক আসেন লালমনিরহাট স্টেশনে। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রতিশ্রুতি দ্রুত বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। পরে ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন লালমনিরহাট স্টেশন পরিদর্শনে আসেন। সে সময় বুড়িমারী-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুত চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন।
অবশেষে গত বছরের ১৯ নভেম্বর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য ১৪টি কোচ লালমনিরহাট স্টেশনে পৌঁছায়। এরপর ৬ ডিসেম্বর বিকেলে লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে পরীক্ষামূলকভাবে গাইবান্ধার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস। এরপর কয়েক দফা তারিখ পেছানোর পর অবশেষে আজ উদ্বোধন করা হলো ট্রেনটির।
প্রসঙ্গত, বুড়িমারী রেল স্টেশন থেকে ট্রেনটি চালু হওয়ায় নতুন করে ভারত, ভুটান, নেপালের পাসপোর্ট ও ভিসাধারী যাত্রীদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপন হলো। এটি দেশের দীর্ঘতম রেলরুট। ট্রেনটি যাত্রা শুরু করায় লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা এবং পাটগ্রাম উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হল।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ট্রেনটি বুড়িমারী থেকে ঢাকার পথে ১১টি স্টেশনে থামবে আর ঢাকা থেকে বুড়িমারীতে ফেরার পথে ১২টি স্টেশনে থামবে।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় কমার্শিয়াল ম্যানেজার (ডিসিএম) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বুড়িমারী-ঢাকা রুট ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এটি হবে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম রেলওয়ে রুট।
এদিকে সরাসরি বুড়িমারী থেকে চালু না হওয়ায় হতাশ জেলার সাধারণ মানুষ। এছাড়াও আদিতমারী উপজেলায় ট্রেনটির যাত্রাবিরতি না থাকায় অসন্তোষ বাড়ছে। গতকাল এ নিয়ে মানববন্ধন সমাবেশ করেছে স্থানীয়রা। এছাড়াও বুড়িমারীতে উদ্বোধন শেষে ফেরার পথে রেলওয়ে জিএমের ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করেছে আদিতমারী উপজেলাবাসী, পরে তার যাত্রাবিরতির আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
একুশে সংবাদ/আ.জ.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :