মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ইবাদতের মাস পবিত্র মাহে রমজান। রমজান এলেই বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই প্রায় প্রতিবছরই বাজারে একই ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। আসন্ন রমজান ঘিরেও এমন পরিস্থিতি সষ্টি হয়েছে। অন্যান্য তরিতরকারি দামও বাড়তি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
সম্প্রতি ডিম, ভোজ্যতেল, চিনিসহ বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আর দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে অধিক মুনাফা লোটার এই কারসাজির দায় নিয়ে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। দায় নিচ্ছেন না কেউ।
রমজান মাসকে কেন্দ্র করে রামগঞ্জ বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। ৫০টাকার নিচে মিলছে না কোন সবজি। এছাড়া ব্রয়লার মুরগী কেজি ২১০ টাকা, কক মুরগী ৩২০ ও গরুর গোস্ত ৯শ থেকে হাজার টাকা, খাসির মাংস ১১০০-১৩০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে রামগঞ্জ মাছ ও সবজির বাজারে।
সরেজমিনে রামগঞ্জ কাঁচা বাজার ও মাছ বাজার গিয়ে দেখা যায়, করোলার কেজি ১৪০, মুলা ৬০, কচুর লতি ১২০টাকা, কাঁচা মরিছ ১০০, কুমড়া ৫০, টমেটো ৫০, তরি (ধুন্ধুল) ৭০, কাঁচা পেপে ৩৫, ঝিঙ্গা ৭০, চিচিঙ্গা ৬০, পাতাকপি ১০০, পাতাকপি ১পিস ৫০, দেশী সীম ৮০/১০০, বরবটি ১২০টাকা, শসা ৯০টাকা, বেগুন-৮০-৯০টাকা কেজিদরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ছোট আকারের কাঁচকলার হালি ৬০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে কয়েক সপ্তাহ ধরে মাছের দাম বেশি। আকারভেদে প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩৬০-৪০০ টাকায়। চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৬০ টাকা, পাঙাশ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, পাবদা ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, শোল ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, ট্যাংরা ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। দেশি জলাশয়ের মাছের দাম ৮০০-১০০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ইলিশ মাছ এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি খোলা চিনি ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মসুর ডাল ১৩৫-১৫০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০-৯০ টাকা, অ্যাংকরের বেসন ৭৫-৮৫ টাকা এবং বুটের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। গত বছর রোজায় ৯০-১১০ টাকা দামের খেজুর এবারে ১৮০-২০০ টাকা, যা খুচরা বাজারে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারের ২০০ টাকার খেজুর ৪৮০ টাকায় এবং ৩০০-৩৫০ টাকার খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকায়। গতকাল বাজারে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ৮২০ টাকা। এছাড়া এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন গতকাল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজার করতে আসা কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলতে চাইলে তারা আক্ষেপ নিয়ে জানান, এ দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পিঁছনে নানান অজুহাত থাকলেও আমাদের আয় বৃদ্ধির কোন অজুহাত নেই। সারাদিন গাধার মতো পরিশ্রম করেও পরিবারের ৫ সদস্যের জন্য মাসিক খাবারের খরচ কোনভাবেই মেটাতে পারছি না। প্রতি মাসে ৮/১০ হাজার টাকা ঋণ হয়ে পড়ি।
ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকারের মন্ত্রীরা বা সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে কোনো সংকট নেই বলা হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে। বিষয়টি সরকারও স্বীকার করছে, তবে সিন্ডিকেট সৃষ্টিকারী অসাধু ব্যবসায়ী বা বাজার অস্থিতিশীর করার পেছনে যারা কলকাঠি নাড়ছেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও তাতে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে থাকা মাস্টারমাইন্ডরা ধরা পড়ছে না। এ অবস্থায় বেশিরভাগ মানুষের আর্থিক সঙ্গতি বিবেচনা করে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন ভোক্তরা। আলাপকালে বেশ কয়েকজন ভোক্তা এমন দাবি জানান।
আরিফ হোসেন নামের বাজারের এক সবজি ব্যবসায়ী জানান, গত এক মাসের তুলনায় কেজি প্রতি বেড়েছে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ। পাইকারী বাজারেও বেশি। আমরা নিজেরাও ধারদেনা করে এখন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন পাইকারী ব্যবসায়ী জানান, কুমিল্লা, ঢাকার কারওয়ান বাজার ও চট্টগ্রাম থেকে এ এলাকায় সবজি আসে। ঘাঁটে ঘাঁটে গাড়ী আটকায় তার উপর গত কয়েকদিন আগে বৃষ্টিতে মওসুমী সবজির ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। বাধ্য হয়ে মালও কম আনি এখন। কি করবো, পাইকারী বাজারে বস্তা প্রতি সবজির দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪শ টাকা। স্থানীয় এলাকা বা গ্রাম থেকে সবজি আসবে আরো পরে। তখন কিছুটা সহনীয় হবে সবজির বাজার।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :