AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

রাজশাহীতে লাগামহীন বাজারে গাছাড়া ভাব ভোক্তা অধিকারের


Ekushey Sangbad
আব্দুল বাতেন, রাজশাহী
০২:২০ পিএম, ১৪ মার্চ, ২০২৪
রাজশাহীতে লাগামহীন বাজারে গাছাড়া ভাব ভোক্তা অধিকারের

ইবাদতের মাস রমজান এসেছে, আর দেশের বাজারে যেনো চোখ রাঙাচ্ছে রোজায় চাহিদার শীর্ষে থাকা নিত্যপণ্য গুলো, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম আর এই দামের চাপে চ্যাপটা জনজীবন আর বাজার নিয়ন্ত্রণে দেখা নেই জেলা প্রশাসন, খাদ্য অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থা গুলোর।

রোজাদারদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে রমজান মাসে অন্যান্য দেশে সব কিছুর দাম তুলনামূলক কমিয়ে দেয়া হলেও আমাদের দেশে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। দাম কমার বদলে উল্টো বাড়তে থাকে সমানতালে। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরেও ভোগ্যপণ্যের বাজার টালমাটাল। দাম বাড়ার দিক দিয়ে পিছিয়ে নেই রাজশাহীও। বেড়েছে বিভিন্ন রকমের মসলা, চিনি, ছোলা, ডাল, খেজুর ও সবজিসহ মাছ মাংসের দাম ।

রোজার আগের দিন ছোট এলাচ ও বড় এলাচের দাম কেজিতে ২০—৩০ টাকা কম থাকলেও এখন তা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজারের এক মসলা বিক্রেতা জানান, এসব মসলা দুই দিন আগে দাম কমলেও এখন বস্তা প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও ডাল ও ছোলা কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।

দিনভর রোজা রাখার পর খেজুর ছাড়া এখন আর ইফতারের কথা ভাবাই যায় না। সেই খেজুরের বাজার লাগামহীন। আমদানি করা খেজুর বাজারে সঠিকভাবে সরবরাহ না করে সৃষ্টি করা হচ্ছে কৃত্রিম সংকট। সরকার সাধারণ খেজুরের দাম সর্বনিম্ন ১৫০— থেকে ১৬৫ টাকা এবং জাইদি খেজুর ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে এসব দামের খেজুরের দেখা মেলেনি। বাজারে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ১৮০০ টাকা কেজি দরে খেজুর বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও রোজার আগে শসা বিক্রি করতে দেখা গেছে ৩০—৪০ টাকার মধ্যে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫০—৮০ টাকা কেজি। লেবু ১৫—২০ টাকা হালি বিক্রি হলেও রোজায় তা ৩০—৬০ টাকায় গিয়ে পৌছেছে। তরমুজ ৫০—৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও এখন সেটি ৮০ টাকা কিজিতে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

বুধবার সাহেব বাজারে খেজুর কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, বাজারে খেজুর কিনতে এসে মাথা খারাপ। অন্যান্যবার দেখি ২০০—২৫০ টাকা দামের খেজুর বিক্রি হচ্ছে। এবার সেই খেজুর ৫০০—৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও ১৫০০—১৬০০ টাকা দরেও খেজুর বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মত মানুষের এতো দামের খেজুর কিনে খাওয়ার সাধ্য নেই বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। এদিকে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে ইফতারে রাখা হয় শরবত, যা তৈরিতে ব্যবহার হয় চিনি বা গুড় । যার বাজার দর মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ।

আর বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে ফুটপাত ও রেস্তোরাঁয় ইফতারের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার পেঁয়াজু, বেগুনি,ছোলাসহ বিভিন্ন ধরনের চপ। আর এসব বানানোর অন্যতম কাচা উপকরণ হলো তেল, পেয়াজ, আটা ও খেসারির ডাল কিন্তু রমজানের সপ্তাহ খানেক আগেই বাড়তে শুরু করে এসবের দাম। সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে ১০ টাকা কমিয়ে ১৬৩ টাকা করলেও বাজারে এই দামে তেল বিক্রি করতে দেখা যায়নি।

কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার দাম কমালেও কমদামের তেল আমাদের কাছে এসে এখনো পৌছেনি। তাই আগের বাড়তি দামের কেনা তেল বেশী দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়াও চিনির দাম সরকার ১৪০ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে এই দামে চিনি বিক্রি করতে দেখা যায়নি। লাগামহীন এই বাজারে বৃদ্ধি পেয়েছে মাছ—মাংসেরও দাম।

গরীবের মাছ পাঙ্গাশও আজকাল রাঙ্গাচ্ছে চোখ আর ইলিশের আশেপাশে যাওয়া যেনো মহাঅপরাধ। আকারে ছোট ইলিশ ৬০০ হতে ৮০০ টাকা। বড় ইলিশ ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও রুই, কাতলা, তেলাপিয়ার দামও বেড়েছে আগের তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা । আর হুটকরে ৬৫০ টাকায় নেমে আসা গরুর মাংসের দাম আবারো চড়া ।

ব্যবাসীরা গরুর মাংস বিক্রিতে নতুন বাজিমাত শুরু করেছে। তারা বলছেন হাড় ছাড়া মাংস কিনলে ৮৫০ টাকা আর হাড়সহ নিলে ৭৫০ টাকায় দেওয়া যাবে। মাংস ব্যবসায়ীদের নতুন কৌশলে ভোক্তারা পড়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মুরগীর বাজারে আগুনের ছোয়া । দেশী মুরগী কেজীতে ১০০ টাকা বেড়ে ৬০০ টাকা, বয়লার ৩৫—৪০ টাকা বেড়ে ২৪০
আর সোনালী মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়।

পণ্যের লাগামহীন দাম বাড়ায় চরম সংকটে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার। তারা বলছেন দরদাম নিয়ন্ত্রণে রোজার আগেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা শুরু করে হাঁকডাক । বাজারে নেমে দেখেন বাজার গরম! সবই ফাঁকা প্রতিশ্রুতি । এতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা । বলছেন সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণেই সিন্ডিকেট করে পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি অন্তত ১২টি সংস্থা তদারকির দায়িত্বে থাকে। কোথাও কোনও অনিয়ম দেখলে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব তাদের। কিন্তু রাজশাহীর বাজার গুলোতে তাদের দেখা নেই। আর এ সুযোগই বারবার নেন ব্যবসায়ীরা। মাঝে মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান দেখা গেলেও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ তারা।

সাধরণ মানুষ বলছে, সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব কথা বলা হয় তা কার্যকর হতে দেখা যায় না। বিভিন্ন দপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে দু—একজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করে দায় সারা কাজ করে চলে যায়। এমন ভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষ অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় নাই। জনগণের স্বার্থে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকা দপ্তর গুলোকে আন্তরিক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান সর্বসাধারণ।

বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জানতে রাজশাহী বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ—পরিচালক ইব্রাহীম হোসেনের দপ্তরে গেলে অফিসেই বসে থাকতে দেখা যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে গাছাড়া ভাব দেখিয়ে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব শুধু ভোক্তা অধিকারের না। সরকারের আরো দপ্তর রয়েছে তাদেরও দায়িত্ব এসব দেখার। তাছাড়া গণমাধ্যমে কথা বলার জন্য মহাপরিচালকের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন এই কর্মকর্তা।


একুশে সংবাদ/আ.ব.প্র/জাহা

 

Link copied!