জাতীয় শিশু দিবস আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চকে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে আনব হাসি সবার ঘরে’। ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এ দিনটি বাংলাদেশে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়।
জাতিসংঘ ১৯৫৪ সালে এ দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার ‘জাতীয় শিশু দিবস’ পালন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিনটিকেই ‘শিশু দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল – শিশু-কিশোরদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে হবে ও তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথনির্দেশ দিতে হবে।
দ্বিতীয় জাতীয়যুদ্ধের বিভীষিকাময় ও বেদনাদায়ক স্মৃতি এ দিবসটির জন্ম দেয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপে শত শত ফুলের মত নিষ্পাপ শিশু মারা যায়। অনেক বড় শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। হাজার হাজার শিশু অসহায় ও পিতৃমাতৃহীন হয়ে পড়ে। পঙ্গু ও বিকলঙ্গ হয় অনেকে। জাতিসংঘ কল্যাণ তহবিল (UNICEF) এই অসহায় শিশুদের কল্যাণ ও নিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে আসে এবং জাতীয়বাসীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ দিন সমগ্রিক আলোচনার মাধ্যমে জাতীয়ের বিভিন্ন দেশের শিশুদের সমস্যাবলি জাতীয় ফোরাম তুলে ধরে এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করে। তাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৫৪ সালে জাতীয়ব্যাপী দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
জাতীয় শিশু দিবসের তাৎপর্য গভীর ও ব্যাপক। তাই জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই সারা জাতীয়ে অক্টোবর মাসে প্রথম সোমবার পালিত হয় ‘জাতীয় শিশু দিবস’। এই দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুদের কল্যাণ-সাধন এবং তাদের নানাবিধ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করে তাদের মৌলিক অধিকার আদায় করা। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, জাতীয়ের অধিকাংশ মানুষ এখনও ‘জাতীয় শিশু দিবস’ সম্পর্কে সচেতন নয়। এর জন্যে এ দিবসটির কর্মসূচি এমনভাবে করতে হবে যেন জনগণ এর তাৎপর্য গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারে। কেবলমাত্র কাগজে-কলমে শিশুদের অধিকারের কথা লিখে সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। তাই বাস্তবে এর রূপ দিতে হবে। এর জন্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সবার। তৃতীয় জাতীয়ের সন্তানদের দিকে তাকালে একটা বিষয়ই ধরা পড়ে – জাতীয় শিশু দিবস, শিশু সনদ ইত্যাদি যেন আমাদের সন্তানদের জন্যই করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ কতটুকু তা ভাববার বিষয়।
বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরা আগামী পৃথিবীর কর্ণধার এবং শিশুদের মধ্যেই ঘুমিয়ে আছে ভবিষৎ পৃথিবীর বিপুল সম্ভাবনা। তিনি শিশুদের অনেক ভালোবাসতেন এবং শিশুদের সার্বিক মানোন্নয়নের নিমিত্তে যেকোনো প্রকারের কর্মসূচি গ্রহণে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতেন। শিশুদের বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি সবসময়ই চাইতেন শিশুরা যেনো সৃজনশীল মুক্ত মনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মনে করেন বাংলাদেশের শিশুরা শিক্ষা ও সুস্থ বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই তার সুদক্ষ নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতার জম্মদিনটিকে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। জাতির পিতার জন্মদিনকে শিশু দিবস হিসেবে পালন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
১৭ মার্চ এমন এক মহান নেতার জন্মদিন, যার জন্ম না হলে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হতো না। গভীর দেশপ্রেম, সীমাহীন আত্মত্যাগ ও অতুলনীয় নেতৃত্বে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। তার বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্বে এ দেশটি স্বাধীন হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সাহারা খাতুনের চার কন্যা ও দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ছোট বেলায় তিনি খোকা নামেই সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন। কালক্রমে এই খোকা হয়ে ওঠেন বাংলার মহানায়ক। তিনি গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল ও গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে অধ্যয়ন করেন। স্কুলে পড়াকালীন তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে পড়া চালিয়ে যাওয়ার সহায়তা করতেন। মুষ্টির চাল উঠিয়ে গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার খরচ যোগাড় করতেন, বস্ত্রহীন পথচারী শিশুকে নিজের নতুন জামা পরিয়ে দিতেও কার্পণ্য করেননি। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের দায়িত্ব নেয়ার মতো মহৎ গুণ সেই শৈশবেই শক্তভাবেই ধারণ করেছিলেন। মিশনারি স্কুলে পড়াকালীন ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তার স্কুল পরিদর্শনে এলে বঙ্গবন্ধু সাহস করে অতিথীদের সামনে গিয়ে স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে তা মেরামতের জন্য ছাত্রদের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানিয়েছিলেন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন এবং পরে বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি গোপালগঞ্জ মুসলিম ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাশে ভর্তি হন এবং বেকার হোস্টেলে থাকতে শুরু করেন। সেই সময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার হলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের মতো কিংবদন্তি রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই বছরেই পাকিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু জড়িয়ে পড়েন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রগতিশীল সংগঠন বেঙ্গল মুসলিম লীগে যোগ দেন ও কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন ও কলকাতার ‘ফরিদপুরস্থ ডিসট্রিক্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী সময়ে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের মহাসচিব নির্বাচিত হন।
১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এ দিনটি বাংলাদেশে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুরা আগামী পৃথিবীর কর্ণধার এবং শিশুদের মধ্যেই ঘুমিয়ে আছে ভবিষৎ পৃথিবীর বিপুল সম্ভাবনা। তিনি শিশুদের অনেক ভালোবাসতেন এবং শিশুদের সার্বিক মানোন্নয়নের নিমিত্তে যেকোনো প্রকারের কর্মসূচি গ্রহণে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতেন। শিশুদের বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি সবসময়ই চাইতেন শিশুরা যেনো সৃজনশীল মুক্ত মনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। বাঙালি জাতির দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকদের বুলেটের আঘাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মনে করেন বাংলাদেশের শিশুরা শিক্ষা ও সুস্থ বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই তার সুদক্ষ নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতার জম্মদিনটিকে ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। জাতির পিতার জন্মদিনকে শিশু দিবস হিসেবে পালন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বিএ পাস করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি উক্ত প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতা হিসেবে আর্ভিভূত হন। এ বছরই ১৯ মার্চ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন পরিচালনা করেন। ফলে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর তাকে আটক করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। উল্লেখ্য, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ আগস্ট তাকে পুনরায় ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়া হয়}। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ভাষার প্রশ্নে তার নেতৃত্বেই প্রথম প্রতিবাদ এবং ছাত্র ধর্মঘট শুরু হয় যার চূড়ান্ত রূপ নেয় ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারিতে। ধীরে ধীরে তিনি দূরদর্শী মহান এক রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আর্বিভূত হন।
এ সময় তিনি মুসলিম লীগ ছেড়ে সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে মিলে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করেন এবং দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক এবং একই খ্রিষ্টাব্দের ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। ১৪ নভেম্বর নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যান্য দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে বিজয় অর্জন করে। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এবং ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে একজন আদর্শিক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি শেখ মুজিবের বাসায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সুসংহত করার সিদ্ধান্ত হয় এবং শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের মহাসচিব ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ সভাপতি মনোনীত হন। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনে তিনি ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন যা ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের রূপরেখা। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ফেব্রয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো মানুষের জমায়েতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের পর থেকে বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে তাকে প্রায় এক দশকের ও বেশি সময় ধরে জেলখানায় থাকতে হয়।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর আয়োজিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টি আসনের মধ্যে ৩০৫টি আসন লাভ করে। আওয়ামী লীগের সরকার গঠন ঠেকাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সংসদের অধিবেশন ডাকা নিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতির ডাক দেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি রেখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। এ সরকারের অধীনেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর ৩০ লক্ষ বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় বাংলাদেশ নামের একটি নতুন রাষ্ট্র। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন তার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। দেশে ফিরেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং শুরু করেন বিভিন্ন সংস্কারের কাজ। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে উপস্থাপন করেন। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভ করার পর বঙ্গবন্ধু ওআইসি, জাতিসংঘ ও জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনে বাংলাদেশের সদস্যপদ নিশ্চিত করেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে ভ্রমণ করে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সহযোগিতা চান। তিনি ভারতের সাথে ২৫ বছর মেয়াদী মিত্রতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন যাতে অর্থনৈতিক ও মানব সম্পদ উন্নয়নে ব্যাপক সাহায্য পাওয়া যায়। চুক্তিতে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের শর্ত অন্তর্ভুক্ত ছিলো। মুজিব ইন্দিরা গান্ধির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখেন। মুজিবের জীবদ্দশায় দুই সরকারের মধ্যে পারষ্পরিক সমঝোতা বজায় ছিলো।
চারটি মূলনীতি যেমন ‘জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র’ বিবেচনায় নিয়ে তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ একটি সংবিধান রচনা করেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর থেকে নতুন সংবিধান কার্যকর করা হয় এবং ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে শেখ মুজিব ও তার দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে প্রথম নির্বাচিত সরকার গঠন করে। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, খাদ্য, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকল্পে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটান। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষি, গ্রামীণ অবকাঠামো ও কুটির শিল্প উন্নয়নে অগ্রাধিকারমূলক সরকারি অর্থ বরাদ্দের নির্দেশ দেন।
সমস্ত দেশ যখন ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলো, ঠিক তখনই আসে আরেকটি আঘাত। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্টের ভয়াবহ রাত্রে তার পরিবারের সদস্যদের অধিকাংশের সঙ্গে তাকে হত্যা করা হয়। কেবল তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সেই সময় দেশের বাইরে ড. ওয়াজেদ মিয়া কর্মস্থলে অবস্থান করায় বেঁচে যান।
এ দিনটি লাখ লাখ শিশুর প্রিয় মানুষ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জুন শিশুদের কল্যাণে জাতীয় শিশু আইন জারি করেন। এই আইনের মাধ্যমে শিশুদের অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সবধরনের অবহেলা, শোষণ, নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন ইত্যাদি থেকে নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে শেখ রাসেল ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তিনি ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। শেখ রাসেলের স্মৃতিকে জাগরূক রাখার জন্য শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। বঙ্গবন্ধু তার জন্মদিনে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিশুদের সঙ্গে জন্মদিনটি পালন করতেন। তার জন্মদিনে আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি
উপসংহার : মহাসমারোহে প্রতিবছর ‘জাতীয় শিশু দিবস’ পালিত হয়। কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ কতটুকু? এর জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আর একটি সুষমামণ্ডিত নির্মল পৃথিবী গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য। জাতীয় শিশু দিবসে আমরা যেন সবাই বলতে পারি-
‘প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জালী এ জগৎকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :