মানুষের কত বিচিত্র রকমের শখই না থাকে। কেউ বাগান করে, কেউ ভ্রমণ করে, কেউবা আবার ছবি আঁকে। এত সব শখের মধ্যে আশিকের অন্যতম প্রিয় শখটি হলো পোষা প্রাণী (পাখি) পালন করা।
ছোট থেকেই পাখির প্রতি খুব মায়া আশিকের। খাঁচার পোষা পাখি বাজরিগরের সঙ্গে তার যাত্রা শুরু হয় প্রায় আট বছর আগে। প্রথমে শখ থাকলেও এখন তা আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে।
বলছিলাম মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের দক্ষিণ গোড়াইল গ্রামের মো. আশিকুর রহমান ২০১৬ সালে প্রথম শখের বসে ২ জোড়া বাজরিগর পাখি ১৬০০ টাকা দিয়ে ক্রয় করে পালন শুরু করি। পরে ২০১৮ সালে অন্য একজনের খামার দেখেই নতুন করে পাখি পালনে উদ্বুদ্ধ হই। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে আমার এই খামারটি গড়ে তোলা। বর্তমানে আমার খামারে বাজিগর, ফিন্স, লাভবার্ডস, ককাটেল, সান কনুরসহ নানা জাতের ৬৮-৭০ পিচ পাখি আছে। দিন দিন এর সংখ্যা আরো বাড়ছে। পাখিগুলোকে খাবার হিসেবে পোলাও ধান, বাসমতি ধান, লাল-কালো-সাদা মিলেট, চিনা, ক্যানারি, সূর্যমূখীর বীজ, হ্যামশীট, ওটস, সফট ফুড, শাক-সবজি, গাজর, গম সেদ্ধ, পোলাও চাউল সেদ্ধ, ডাউল মিক্স, ছোলা, সিদ্ধ ছোলা, এগফুডসহ আরো অনেক রকমের খাবার দিয়ে থাকি।
তিনি আরও বলেন, এই পাখিগুলো অনলাইনে বিক্রয়ের পাশাপাশি আমার খামার থেকেও বিক্রয় করে থাকি। আমার খামারে বর্তমানে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার পাখি রয়েছে। পাখির পিছনে খরচ বাদেও এই খামার থেকেই আমার বছরে কয়েক লাখ টায় আয় হয়। যদি প্রতি মাসে হিসাব করি তাহলে দেখা যায় প্রতি মাসে আমার ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ থাকে। শখ থেকেই মূলত পালন করছি। এগুলো পালন করা, অসুস্থ হলে চিকিৎসা দেওয়াসহ সব বিষয়ে নিজেই দেখাশুনা করে থাকি।
আমি ছাড়াও আরোও অনেকেই রয়েছে যারা এই পাখির সাথে সম্পৃক্ত। তারা আমার কাছ থেকে পাখি কিনছেন, বিক্রয় করছেন, পরামর্শ নিচ্ছেন। পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। অনেকে শুধুই চাকরির পেছনে ছুটছেন। তাদের উচিত চাকরির পেছনে না ছুটে ভালো কোনো কাজে লেগে থাকা।
তারমতো একই উপজেলার গালা ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের মো. সাগর মোল্লা বলেন, আমি ২০১৪ সাল থেকে শখের বসে পাখি পালন শুরু করি। প্রথমে আমি এক জোড়া বাজরিগর পাখি নিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করি। বর্তমানে এখন আমার এখানে ১৬ জোড়া পাখি রয়েছে। প্রতিটি পাখি বছরে ৬ বার ডিম পারে। প্রতিবারে একেকটি পাখি ৬ থেকে ৮ টা ডিম দেই। আমার এখানে যতগুলো পাখি রয়েছে তাতে প্রতি ২ মাসে আমি ৫০ পিচ বাচ্চা বিক্রয় করতে পারি। এদের পিছনে ২ মাসে আমার সর্বমোট ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। এই বাচ্চাগুলো আমি ১২-১৩ হাজার টাকায় বিক্রয় করতে পারি। এতে দেখা যায় আমার ৯-১০ হাজারের মতো লাভ থাকে।
তিনি আরও বলেন, ছোট থেকেই পাখির প্রতি ভালোবাসা। সে ভালোবাসা থেকেই পাখির খামার করা। আমি প্রথম অল্প পরিসরে এই খামার করি। এর আগে আমি কবুতর, লাভবার্ড, ককাটেল, ফিন্সসহ নানা জাতের পাখিও পালন করেছি। মূলত পাখি পালন একটি সৌখিন কাজ। অন্য কাজের পাশাপাশি আমি এই কাজ করে থাকি। পাখিকে ভালোমত যত্ন না করলে লাভবান হওয়া যায় না। পাখিদের দৈনিক ২-৩ ঘণ্টা পরিচর্যার দরকার হয়। পাখিদের একদিন পর পর খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয় এবং প্রতিদিন পাখির বিষ্ঠা পরিষ্কার করতে হয়।
আমরা যে পাখিগুলো পালন করছি, এসব পাখির জন্মই খাঁচায় হয়। এ পাখিগুলো সহজেই যে কেউ, যেকোনো জায়গায় পালন করে বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নিতে পারে। এত করে লাভবান হওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় আবুল কাশেম নামের একজন বলেন, শখ থেকেই পাখি পালন করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন তারা। তাদের মতো করে অন্য তরুণরা যদি লেখাপড়ার বা অন্য কাজের পাশাপাশি এভাবে গবাদি পশু-পাখি পালন শুরু করে তাহলে দেশে বেকারত্ব কমবে।
এ বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম বলেন, এই পাখির জন্য আমাদের উপজেলাতে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন রয়েছে। এসব পাখির রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। কম সময় ও খুব কম খরচে এসব পাখি লালন-পালন করা যায় এবং লাভজনক একটা পেশা বলা যেতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের দাপ্তরিক কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হলে আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :