AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বনের বুক চিরে সড়ক, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি,গাজীপুর
০৪:২৫ পিএম, ২১ মার্চ, ২০২৪
বনের বুক চিরে সড়ক, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

গাজীপুরের শ্রীপুরের সদর বিটের সংরক্ষিত বনের বুক চিড়ে আড়াই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। বন বিভাগের বাধার পরও কয়েক  হাজার শাল কপিচ ও গজারী বল্লীও কেটে ফেলা হয়েছে। বনের ভিতর সাহায্যে মাটিও কেটে ফেলেছে ঠিকাদার।

ইতিমধ্যেই প্রভাবশালীদের থাবায় শ্রীপুরে শত শত একর বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। সংরক্ষিত বনের বুক চিরে এভাবে রাস্তা তৈরি হলে নির্বিচারে বনাঞ্চল উজাড়, বনভূমি জবরদখল, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে স্থানীয় পরিবেশ।

পরিবেশবাদীর দাবী কম গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পরও প্রভাবশালীদের সুবিদা দিতেই জন্যই বনের মাঝ দিয়ে অপ্রয়োজনীয় এ সড়ক নির্মাণের এ উদ্যোগ নিয়েছে এলজিইডি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে আরপিডিপি-৩ এর আওতায়  শ্রীপুর বীরমুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারী কলেজের পেছন থেকে পেলাইদ পর্যন্ত সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে আড়াই কিলোমিটার সড়কের পিচ ঢালাই করে উন্নয়নের দরপত্র আহবান করা হয়। এ সড়কটির নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ। দুই কোটি টাকা ব্যায়ের এ সড়কের কাজ পায় মেসার্স পূর্ণতা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

বন বিভাগ বলছে এ সড়কের সিংহভাগ অংশের মালিক তারা। কাদিম গাজিয়ারন, গারাড়ন ও পটকা তিনটি মৌজার আহবান কৃত সড়কের দরপত্রের ২১৩৬মিটারের মধ্যে ১৪৭০মিটার এলাকা বনভূমি আর ৬৬৬মিটার জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন। এ বনভূমির পুরোটাই সংরক্ষিত বনাঞ্চল ২০ ধারার আওতাভুক্ত। এলজিইডি সরকারী নিয়ম কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত ভাবে কার্যাদেশ দেয় ঠিকাদারকে। যদিও সড়ক নির্মাণের আগে এর গুরুত্ব ও সম্ভাব্যতা সুবিদা ও অসুবিধা ঝাচাই বাছাই করার কথা ছিল তাদের।

গত ১৯ নভেম্বর জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় সিদ্ধান্তমতে বনের ক্ষতিসাধন করে কোন রাস্তা করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সাথে নতুন রাস্তার ক্ষেত্রে ঝাচাই বাছাই করে এলজিইডিকে প্রকল্প গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

স্থানীয় পেলাইদ গ্রামের রশিদ আহমদ, হাকিম উল্লাহ, নুরুল আনোয়ারসহ আরও বেশ কয়েকজনের সাথে জানান, বনের মাঝ দিয়ে পায়ে হাঁটার ছোট পথ রয়েছে। আশপাশে তেমন বসতি নেই। বনের ভেতর দিয়ে পায়ে হাটার এ পথ দিয়ে স্থানীয় বেশ কিছু মানুষ বিভিন্ন কারণে  আসা-যাওয়া করে। সেখানে গাড়ি চলাচলের বড় রাস্তা হলে এখানকার বনভূমি ও গাছপালা আর থাকবে না।  

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় এ সড়কের আশপাশে চলাচলের জন্য আরো বেশ কয়েকটি সড়ক রয়েছে। এর পরও বনের ভেতর দিয়ে সড়ক নির্মাণের তোড়জোড় করছে এলজিইডি। যদিও সড়কের এ কিলোমিটারের মধ্যে কোন বসতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। সড়কটির শেষ প্রান্তে আব্দুর  রব নামের একজনের বাড়ী খুঁজে পাওয়া গেলো। আব্দুর রব বলেন, সড়কটি হলে এলাকার জমির দাম বাড়বে মানুষের বসতিও বাড়বে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সোহেল মৃধা বলেন, দরপত্র আহবান করা হলে এ সড়কটির জন্য তিনি ছাড়া আর কেউ দরপত্র কেনেননি, হয়তো কারো আগ্রহ ছিল না । পরে উপজেলা চেয়ারম্যানের সুপারিশে তিনি কাজটি করার উদ্যোগ নেন। আর এখন বেশ কিছু কাজ হওয়ার পর বন বিভাগের বাধা এসেছে। সামগ্রিক লোকশানে পড়েছেন তিনি। বিষয়গুলো সমাধানের জন্য এলজিইডিকে বলেছেন তিনি।

শ্রীপুর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান বলেন, বন বিভাগের মালিকানাধীন ২০ ধারার সংরক্ষিত বনের মাঝ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রায় দুই হাজার শাল কপিচ উপড়ে ফেলে মাটি কাটার কাজ শুরু হলে আমরা তাতে বাধা দিয়েছি। বাধা উপেক্ষা করেই রাতের আধারে ভেকু যোগে মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে। তছনছ করেছে বনের বেশ কিছু অংশ। এভাবে বনের মধ্য দিয়ে রাস্তা করার কোনো সুযোগ নেই। এলজিইডি আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ না করেই তারা কাজ শুরু করেছে। এ সড়কটির কারণে হুমকির মুখে পড়েছে বনভূমি ও জৈববৈচিত্র।

পরিবেশকর্মী হাসান ইউসুফ খান বলেন, এমনিতেই শ্রীপুরে শিল্পের আগ্রাসন ও ভূমিদস্যুদের থাবায় শত শত একর বনাঞ্চল  ধ্বংস করা হয়েছে। এর উপর এভাবে সংরক্ষিত বনের বুক চিরে রাস্তা তৈরি করা হলে নির্বিচারে বনাঞ্চল উজাড়, বনভূমি জবরদখল, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ উক্ত এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।

ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাত হোসেন বলেন, বন বিভাগের মালিকানাধীন জমিতে বনায়ন ব্যতীত অন্য কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজন হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত না আসার আগেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সড়কটি বাস্তবায়নে তোড়জোড় করছে। আমরা প্রতিটি দপ্তরের চিঠি দিয়ে অবহিত করেছি। কিন্তু তারা জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কার স্বার্থে বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ শুরু করছে বিষয়টি আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, বনের মধ্য দিয়ে এভাবে রাস্তা তৈরি হলে তা বনাঞ্চলের জন্য হুমকি। বন সকলের জন্য প্রয়োজনীয়। বাঁচতে হলে বন ও প্রকৃতিকে নিয়ে বাঁচাতে হবে। দেশ ও দশের কথা মাথায় রেখেই আমরা সড়ক নির্মাণে বাধা দিয়েছি। আমাদের প্রত্যাশা এলজিইডি তাদের প্রকল্প বাতিল করবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, সড়কটি নির্মাণ কাজ শুরু করতে গিয়েই বন বিভাগের বাধার মুখে পড়েছি। আমরা জানতাম না এটা বনবিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট। এখন বিষয়টি সমাধানের জন্য সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী মহোদয়কে অবহিত করেছি।

কম গুরুত্বপূর্ণ ও বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা করার উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সুপারিশ থাকে তা বাস্তবায়ন করতে এমন প্রকল্প নেয়া হয়, এটি এমনই হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখবো।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!