মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ আবারও তীব্রতর হয়ে উঠেছে। সীমান্তের ওপারে একের পর এক বিস্ফোরণের বিকট শব্দ এপার থেকে শোনা যাচ্ছে। যার জের ধরে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে ভূকম্পন সৃষ্টি হচ্ছে। জনমনে আতঙ্কও দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার রাত ৯ টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত টানা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এরপর আবার মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোর থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত শোনা গেছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। এর আগে রোববার রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়।
মঙ্গলবার দুপুর ১ টায়ও টেকনাফ সীমান্তের ওপারে চক্কর দিতে দেখা গেছে যুদ্ধবিমান।
টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে চলছে এই যুদ্ধ। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কোওয়ারবিল, নাকপুরা, বলিবাজারসহ আশপাশের এলাকায় এই গৃহযুদ্ধ চলছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. কালা বলেন, মিয়ানমারের ওপারে থেমে থেমে বোমার বিকট শব্দে কাঁপছে আমার বাড়ি। এরকম শব্দ কোনদিন শুনি নাই। মনে হচ্ছে আমার বাড়ি ভেঙে পড়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে ঘুমাইতে পারছি না।
টেকনাফ পৌরসভা কায়ুকখালী এলাকার বাসিন্দার আবুল বলেন, সকাল ৭ টা ২০ মিনিটের সময় কিসের শব্দ বুঝতে পারিনি। পুরো বিল্ডিং কেঁপে উঠেছে।
হ্নীলা ইউনিয়ন ওয়াব্রাং এলাকার বাসিন্দার মোহাম্মদ কামাল জানান, ফজরের নামাজের পর থেকে মিয়ানমারের ওপারে যেভাবে মর্টারশেলের শব্দ হয়েছিল। মনে করেছিলাম ভূমিকম্পে বাড়ি ঘর ভেঙে যাচ্ছে। বজ্রপাতের মত বিকট শব্দ হচ্ছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, কোনদিন এভাবে বিকট শব্দ শুনি নাই। সকালে এমনভাবে বিকট শব্দ হয়েছে মনে হয় বিল্ডিং ভেঙে পড়ছে।
শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা শাহীন আলম বলেন, মিয়ানমারের ওপারে বিকট শব্দে পুরো এলাকা কাঁপছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এনামুল হক জানান, এমন বিকট শব্দ আগে কখনও শুনিনি। গভীর রাতে মিয়ানমারের গোলাগুলির শব্দে বাড়ির ভিতরে পর্যন্ত থাকা যাচ্ছে না। রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত শতাধিক বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছে। মনে হচ্ছে নিজের বাড়ির ত্রিসীমানায় মর্টার শেল বিস্ফোরণ হচ্ছে।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ জানান, যেহেতু মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব কম তাই আমরা তাদের গোলাগুলির শব্দে ঘুমাতে পারছি না। সদরের মৌলভীপাড়া, নাজির পাড়া, খানকার ডেইল, বরইতলী ও কেরুনতলীসহ এ এলাকাগুলো নাফ নদীর সঙ্গে সম্পৃক্ত এলাকা।
চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি, ওপার থেকে রোহিঙ্গারা এপারে আসার জন্য জড়ো হয়ে আছে। প্রতিটি নৌঘাট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা জানিয়েছি। জনপ্রতিনিধিরাও সজাগ রয়েছি।
সীমান্তের একাধিক সূত্রের দেয়া খবর অনুযায়ী, রোববার (২৪ মার্চ) থেকে সরকারি বাহিনীর অবস্থানে হামলা বাড়িয়েছে আরাকান আর্মি। সোমবার সন্ধ্যায় মংডু টাউনশিপের কাছাকাছি অবস্থিত মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) একটি ক্যাম্প আরাকান আর্মি দখল করে নেয় বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে মংডু টাউনশিপের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশের রাচিডং টাউনশিপসহ ১০টির বেশি থানা দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি।
মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সীমান্তে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।
একুশে সংবাদ/স.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :