ডিমলা উপজেলায় এখন নির্বাচন উৎসব। পোষ্টার, ব্যানার, গণসংযোগ, ধর্মীয় উৎসব, উঠান বৈঠক আর ঈদ উপলক্ষে ব্যস্ত সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তবে নির্বাচনে মাঠে নেই বিএনপি। জাতীয় নির্বাচনের পর ঘড়ে ঢুকেছে জাতীয় পার্টিও। প্রধান ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণায় সরকার এক ধরনের নৈতিক বৈধতা পেলেও কোন্দল কাঁধে নিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী আছেন প্রচারণায়। ভোটারদের প্রত্যাশা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নয় এবার ভোটের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বেঁচে নেবেন তারা।
১৪ ফেব্রুয়ারী ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ধাপ ভিত্তিক সম্ভাব্য তারিখ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপে ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে নীলফামারীর দুটি উপজেলার ভোট। এরেই মধ্যে ডিমলা উপজেলায় বইছে ভোটের হাওয়া। সবখানে শোভা পাচ্ছে ব্যানার, পোস্টার। সাবেক উপ-কর কমিশনার আব্দুর রহমান সাঁটিয়েছেন নিজ নামের বিভিন্ন পোষ্ট,ব্যানার। জোর প্রচারণায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ারুল হক সরকার মিন্টু। জনবিচ্ছিন্ন বর্তমান চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম। প্রচারণা ও জনপ্রিয়তায় শীর্ষে জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য এবং উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক মোঃ ফেরদৌস পারভেজ। জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুস সাত্তারের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতার ঘোষণায় বদলে গেছে সবার হিসেব।
বিভিন্ন জাতীয় দিন ও ধর্মীয় উৎসবে নিজেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে পরিচিত করতে ব্যানার, পোস্টারের পাশাপাশি জোর প্রচারণায় গণসংযোগ, পথসভা করেছেন সাবেক উপ-কর কমিশনার আব্দুর রহমান।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনারুল হক সরকার মিন্টু তার সমর্থক ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ধর্মীয় উপাসনালয়, পথসভা ও ঘরোয়া বৈঠকে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নির্বাচিত হলে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও প্রতিশ্রুতির কথামালায় ভোটারদের আকৃষ্ট করার জোড় চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর রাখতে পারেননি ভোটের সময় তার দেওয়া নানান ধরনের প্রতিশ্রুতি। এমনকি অংশগ্রহণ করেননি উপজেলা চত্বরের বাইরে তেমন কোনো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। ঈদ, পূজাসহ নানান উৎসব আমেজে দেখা মেলেনি তাঁর তেমন কোনো ব্যানার, ফেস্টুন। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও এখনো জোর প্ররোচনায় নামেননি তিনি।
নীলফামারী জেলা পরিষদের দুই বারের সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ন আহবায়ক মোঃ ফেরদৌস পারভেজ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব, ক্রীড়া অনুষ্ঠানসহ নানান সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কার্যক্রম অংশ নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। আর এসব অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছে উপজেলাকে নিয়ে তার বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা। ভোটারদের পক্ষে মিলছে ব্যাপক সাড়া।
এ উপজেলায় বিগত কয়েকটি নির্বাচনী ফলাফলের তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটা বড় ধরনের সমর্থন রয়েছে। যা যেকোনো নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে। আর নিবন্ধনবিহীন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক এ দল দলীয় কোন্দল মুক্ত হওয়ায় যে কোনো নির্বাচনে বড় ধরনের ভোটের মোকাবেলা করতে হবে অন্য প্রার্থীদের।
অন্যদিকে তফসিল ঘোষণার পর পরেই জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সাত্তারকে উপজেলা চেয়ারম্যান, ডিমলা উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমানকে ভাইস-চেয়ারম্যান (পুরুষ) ও সাবিনা ইয়াসমিন ফেন্সিকে ভাইস-চেয়ারম্যান (মহিলা) হিসেবে প্রার্থীতা ঘোষণায় অনেকটা নড়েচড়ে বসেছে সম্ভাব্য সব প্রার্থী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচন বিমুখ বিএনপি স্থানীয় এই নির্বাচনে সরাসরি মাঠে না থাকলেও তাদের মিত্র শক্তি জামায়াতে ইসলামীকে করবেন প্রত্যক্ষ সমর্থন।
এ প্রসঙ্গে ডিমলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ মনোয়ার হোসেন জানান, বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বর্তমান সরকারের অধিনে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচন বর্জন করেছে এবং সাধারণ জনগণকেও ভোটের বিপক্ষে নিরুৎসাহিত করবে। সুতরাং এ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর কোন প্রার্থীকে ভোট দেওয়া বা সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নেই আসেনা। স্থানীয় এ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী অংশ নেওয়ায় সরকারের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন ব্যবস্থাকে বৈধতা দিয়েছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :