প্রিয়জনদের সাথে ঈদ ও নববর্ষের আনন্দ ভাগাভাগি শেষে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে কর্মস্থল রাজধানীতে ফিরছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজারো মানুষ।
যাত্রীরা বলছেন, সড়ক ও নৌপথে তারা তেমন কোন ভোগান্তি ছাড়াই পারাপার হতে পারছেন।
তবে তাদের অভিযোগ, লঞ্চে ধারণ ক্ষমতার থেকে দ্বিগুনেরও বেশি যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এখন বৈশাখ মাস চলছে। যে কোন সময় কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। তাই নৌরুটে ঝুঁকি থেকেই যায়।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) সরেজমিন দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা যায়, লঞ্চ ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি লঞ্চ ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুনেরও বেশি যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলাচলকারী অধিকাংশ লঞ্চ অনেক পুরোনো। যাত্রীর নিরাপত্তায় প্রতিটি লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন সরঞ্জাম থাকার কথা থাকলেও অনেক লঞ্চে তা পর্যাপ্ত সংখ্যক নেই।
এসব সমস্যার পরও অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনেকটা উদাসীন। যাত্রী নিরাপত্তার কথা না ভেবে একশ্রেণির অসাধু মালিকেরা হাজার হাজার যাত্রী পারাপার করে লাভবান হচ্ছেন।
দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ধারণক্ষমতার দ্বিগুনেরও বেশি যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার সময় কয়েকটি লঞ্চের মাষ্টারকে অতিরিক্ত যাত্রী পারাপারের ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, কাউন্টার থেকে টিকেট কেটে কতৃপক্ষ যতগুলো যাত্রী উঠাবে, আমরা তত যাত্রী নিয়েই ছেড়ে যাব। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। তবে ঈদের আগে ও পরে কিছু যাত্রী বেশি যাবেই। ঈদের চাপ শেষ হয়ে গেলে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
ঘাট সূত্রে আরো জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অধিকাংশ লঞ্চেই ১০০-১৫০ জন যাত্রীর ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু সেই নিয়মের তোয়াক্কা না করেই দ্বিগুনেরও বেশি যাত্রী ও ঝুকি নিয়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিচ্ছে জরাজীর্ণ লঞ্চগুলো।
ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় লঞ্চের যাত্রী মনির, ছলেমান, মানিক, জ্যামি সহ অনেকেই বলেন, তারা তাদের বাড়ি থেকে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত সড়কে তেমন কোন ভোগান্তি ছাড়াই আসতে পেরেছেন। কিন্তু লঞ্চে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হচ্ছে। নদী যদিও শান্ত কিন্তু মাঝ নদীতে ঝুঁকি থেকেই যায়। কতৃপক্ষের উচিত অতিরিক্ত যাত্রী বহনের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া।
বিআইডব্লিউটিএ’র দৌলতদিয়া ঘাটের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. শিমুল ইসলাম বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ২০ টি লঞ্চ চলাচল করছে। কিছু লঞ্চ জরাজীর্ণ দেখা গেলেও প্রতিটি লঞ্চের ফিটনেস সনদ রয়েছে। ফিটনেস সনদ থাকায় আমার কিছু করার থাকে না। তবে সুরক্ষা সামগ্রী ঠিকঠাক রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ঈদের পরে এ রুটে কর্মস্থল রাজধানীমুখী মানুষের কিছুটা চাপ রয়েছে। তাই ১-২ দিন একটু এভাবেই (অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে) যাবেই, যাত্রীর চাপ কমে গেলে আবার স্বাভাবিক নিয়মেই লঞ্চ গুলো চলাচল করবে। তবে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
প্রশাসনের পক্ষ হতে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। আমরাও যাত্রীদের সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। লঞ্চ চালকদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে কোন অতিরিক্ত যাত্রী লঞ্চে বহন না করে। নদী অনুকূলে না থাকলে সঙ্গে লাঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :