নববর্ষকে ঘিরে “সাংগ্রাই” এর মৈত্রী পানি বর্ষণে মেতে উঠেছিল বান্দরবানে থানচিতে মারমা সম্প্রদায়। মারমা সম্প্রদায় তাদের পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব সাংগ্রাই বা বর্ষবরণ। এই সাংগ্রাই মারমাদের অন্যতম প্রধান ঐতিহ্যবাহী উৎসব। তাছাড়া থানচি উপজেলায় বিভিন্ন পাড়ায় নিজেদের ঐতিহ্য গান গেয়ে এক অপরকে পানি বর্ষণ করে জলকেলি বা পানি ছিটিয়ে মেতে ওঠেন তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষ।
আজ মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) বিকালে থানচিতে বলিপাড়া ইউনিয়নের ডাকছৈ পাড়া ঘাট প্রাঙ্গনে রিলংপোয়েঃ পানি বর্ষণ উৎসব অনুষ্ঠানে শুভ উদ্বোধন করেন- পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বাশৈচিং চৌধুরী।
এসময় অনুষ্ঠানে বলিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সাংগ্রাই উৎসব আয়োজক কমিটির সভাপতি জিয়াঅং মারমা সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রাক্তন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান চসাথোয়াই মারমা পকশৈ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুমেপ্রু মারমা প্রমুখ।
এদিকে বলিপাড়া ইউনিয়নের সাংগ্রাই উৎসব আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মারমা সমাজের যুব নেতা অংচনু মারমা বলেন, মৈত্রী পানি বর্ষণ অনুষ্ঠানে ঐতিহ্য গানের সুরে দলে দলে যোগ দিতে আসেন শতশত তরুণ তরুণীরা। তরুণ তরুণীরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একে অপরকে পানি ছিঁতায়। একজন তরুণ আরেক একজন তরুণীর দেহে জল ছিটায়। আর ওই তরুণীও তরুণের দেহে পাল্টা জল ছিটিয়ে তার প্রতি উত্তর দেয়। এভাবে তরুণ-তরুণীরা পানি ছিটানোর মধ্যে দিয়ে মৈত্রী পানি বর্ষণে মেতে ওঠে। এই মৈত্রী পানি বর্ষণ উৎসবে সর্বস্তরে মানুষজন অংশগ্রহণ করেছে।
মারমা সম্প্রদায়ে মতে, নববর্ষ অর্থাৎ সাংগ্রাই উৎসবের উৎসবমুখর পরিবেশের একে-অপরকে মৈত্রীময় পানি ছিটিয়ে আনন্দ ও ভালোবাসা ভাগাভাগি করে থাকেন। এই সাংগ্রাই ঘিরে পাহাড়ের আদিবাসীরা ভিন্ন ভিন্ন নামে বর্ষবরণের উৎসব পালন করা হয়। ত্রিপুরাদের বৈসুর (বৈ), মারমাদের সাংগ্রাইয়ের (সা) চাকমাদের বিঝুর (বি) থেকে বৈসাবি হলেও বান্দরবানে থানচিতে মারমা সম্প্রদায়রা বর্ষবরণের এ উৎসবকে সাংগ্রাই বলে থাকেন। এটি মূলত মারমাদের উৎসব হলেও তঞ্চঙ্গ্যা, ম্রো, ত্রিপুরা, খুমিসহ ১১টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকও মেতেছে এই উৎসবে। বাঙালিরাও উৎসাহভরে অংশ নিচ্ছেন।
থানচিতে বলিপাড়া ইউনিয়নের ডাকছৈ পাড়া ঘাট প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পানিকে পবিত্রতার প্রতীক মেনে মারমা তরুণ-তরুণীরা পানি একে অপরে ছিটিয়ে নিজেদের শুদ্ধ করে নিচ্ছেন। শুধু তরুণ-তরুণীরা আর যুবক-যুবতীরাই নয় এই উৎসবে অংশ নিচ্ছেন শিশুসহ সব বয়সের মানুষ। দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে দলে দলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছেন অনেকে। উৎসবে মারমারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক মেয়েরা থামি ও ছেলেরা লুঙ্গি পড়ে অনুষ্ঠানে যোগদান করতে আসে। এবং এবছরে সাংগ্রাই উৎসবের ঘিরে আগামীকাল বিকালে থানচি কলেজ মাঠ প্রাঙ্গনে আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বশেষ মৈত্রী পানি বর্ষণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানস্থলে আসা ম্যাচিংনু মারমা, অংসিংনু মারমা, উমংসিং মারমা, শৈমেওয়াই মারমা, উসাইয়ী মারমাসহ কয়েকজন তরুণ-তরুণীরা জানান, বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে নিজেদের ঐতিহ্য পোষাক পরিধানে মৈত্রী পানি বর্ষণ অর্থাৎ একে অপরে পানি খেলতে এসেছি। আমরা একই রঙের পোষাক পড়ে দলে দলে মৈত্রীময় পানি বর্ষণের মাধ্যমে সাংগ্রাই আনন্দ উপভোগ করতে পারছি। একে অপরকে পানি ছিটিয়ে আনন্দ এবং ঐতিহ্য গানের সুরের তালে সবাই মিলে নাচও করছি। এটা অন্যরকম অনুভূতি যা ঐতিহ্য সংঘবদ্ধভাবে আবদ্ধিত।
চৈত্র সংক্রান্তি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বর্ষবরণ উৎসব বৈসাবি সপ্তাহব্যাপ্তী উদযাপিত হচ্ছে। নববর্ষ বা সাংগ্রাই উৎসবকে ঘিরে যে কোনো পরিস্থিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনার এড়াতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানচি নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :