ফরিদপুর জেলার মধুখালিতে শ্যালিকার সঙ্গে পরকীয়ার জেরে দুলাভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামিসহ তিন জনকে জেলার ভাঙ্গা উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শনিবার (২০ এপ্রিল) বেলা ১২টায় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব এ তথ্য নিশ্চিত করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মধুখালি উপজেলার দীঘলিয়া মৃত জাহিদুল শেখের দুই পুত্র মোঃ আশারুল শেখ (২৮), ও মোঃ ইলিয়াস শেখ (২৪) এবং একই এলাকার মোঃ হারুন অর রশিদের পুত্র মোঃ খায়রুল শেখ (২২)।
র্যাব জানায়, ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানাধীন হাটঘাটা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নিজামউদ্দিন একই থানাধীন পার্শ্ববর্তী দিঘলিয়া এলাকায় মৃত জাহিদুল শেখের মেয়ে জামেলা খাতুনকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর নিজাম তার শ্যালিকা জলি খাতুনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি জলি খাতুনের অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। নিজাম গত ২১ মার্চ তারিখ সকালে তার শ্যালিকা জলিকে সঙ্গে নিয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ এক আত্মীয়কে দেখতে যান। সেখান থেকে জলিকে নিয়ে নিজাম তার বাড়িতে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে ওইদিন রাত সাড়ে ১১ টার দিকে জলির পরিবারের লোকজনসহ ৯-১০ জন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঘটনাস্থল মধুখালী থানাধীন হাটঘাটা এলাকার নিজামের ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে নিজামের শ্যালক শরিফুলসহ বেশ কয়েকজন মিলে নিজামকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে জলিকে নিয়ে যায়। অতঃপর নিজামের আত্মীয়স্বজন ও আশপাশের লোকজন নিজামকে গুরুতর আহত উদ্ধার করে প্রথমে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে নিজামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক নিজামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঐদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথিমধ্যে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় পৌছালে এ্যাম্বুলেন্সের ভিতর নিজাম মৃত্যুবরণ করেন।
উক্ত ঘটনায় মৃত নিজামের ভাই মোঃ আজিম উদ্দিন শেখ (২৫), বাদী হয়ে মধুখালী থানায় ৯-১০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা রুজুর বিষয়টি জানতে পেরে উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত সকল আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়।
র্যাব আরো জানায়, উক্ত হত্যাকান্ডের বিষয়টি জানতে পেরে র্যাব-১০, সিপিসি-৩, ফরিদপুর ক্যাম্পের একটি আভিযানিক দল উক্ত হত্যাকান্ডে জড়িত আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।
যার ধারাবাহিকতায় গত ১৬ এপ্রিল জেলার কোতোয়ালি এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যা মামলার যথাক্রমে ৫ নং ও ৬ নং পলাতক আসামি মোঃ শরিফুল শেখ (২০) ও মোসাঃ তথি বেগম (৬২) গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামিদের স্বীকারোক্তি ও তাদের দেয়া তথ্যমতে অদ্য ২০ এপ্রিল আনুমানিক ভোর ৫ টার দিকে র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর নিজামউদ্দিন হত্যা মামলার ০১, ০২ ও ০৪ নং পলাতক আসামি মোঃ আশারুল শেখ, মোঃ ইলিয়াস শেখ ও মোঃ খায়রুল শেখকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব ১০ ফরিদপুর সিপিসি-৩ এর লে. কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামিরা উক্ত হত্যাকান্ডে তাদের সরাসরি সম্পৃক্তার কথা স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :