সারাদেশের মতো তীব্র গরমে হাটহাজারীতেও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এই গরমে খেটে খাওয়া মানুষেরা পড়েছেন চরম ভোগান্তি ও ঝুঁকিতে। তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে অন্য সবার চেয়ে বেশি।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বেলা এগারটার দিকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হাটহাজারীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস দেখা গেলেও তাপমাত্রার তীব্রতা ছিলো ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মতো।
এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। একটু স্বস্থির আশায় অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছেন গাছতলায়। প্রচন্ড খড়তাপে লোকসানে পড়েছেন বোরো ধান চাষী ও সবজি চাষীরাও। হাটহাজারীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে কৃষকদের করা মরিচসহ বিভিন্ন সবজিক্ষেতের করুন অবস্থা। উপজেলার হালদা পাড়, মেখল, ফটিকা এলাকার কৃষি জমির বিশেষ করে মরিচ গাছ গরমে কুচকে গিয়ে অনেকটা বিধ্বস্ত আকার ধারন করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, তীব্র গরমের কারনে সেখানকার মরিচ গাছগুলো অজানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় দারুন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কৃষকরা।
এদিকে হাটহাজারীর প্রায় সকল হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ গরম জনিত রোগীর সংখ্যাও । গত ২৪ ঘন্টায় হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুই জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং গত এক সপ্তাহে ৪৯ জনের অধিক রোগী হাসপাতাল থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী সেবা নিয়েছেন।
নির্মাণ শ্রমিক আবদুল মান্নান বলেন, আমার চল্লিশ বছর বয়সে এতো গরম পাইনি। তাপের চোটে কোন কাজই করতে পারছিনা।
পৌরসদরের পান দোকানদার সূমন জানান, অতি গরমের কারনে কোন ক্রেতা নেই। বেচা বিক্রী না হলে কিভাবে কি করবো ! এদিকে সন্ধ্যার পর দোকানের ভাড়া, সংসার খরচসহ নানান খরচের বিষয়ে চরম দুশ্চিন্তায় থাকতে হয় প্রতিদিন।
পৌর সভার মেডিকেল গেইট এলার আল আমিন ফার্মেসীর স্বত্বাধিকারী পল্লী চিকিৎসক মো.নাছির, এম ফার্মেসীর মালিক আইয়ুব পাভেল, মেখল ফকিরহাট বাজারের খাজা ফার্মেসীর মালিক পল্লী চিকিৎসক গরিব উল্লাহ সাইমন জানান, তীব্র গরমের কারনে স্বাভাবিকের তুলনায় বর্তমানে জ্বর কাঁশি ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেঁড়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রশ্মি চাকমা বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এ প্রতিবেদককে বলেন, এমন তীব্র গরমে মানুষের সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এই গরমেও নিরাপদ ও ভালো থাকা যায়। যেমন-এ সময় বাইরে বের হলে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচুর পানি, লেবুর শরবত, স্যালাইন ও তরল খাবার খেতে হবে। তেল-মশলাজাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। রাস্তার খোলা খাবার পানি বা সরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কোথাও যাওয়ার আগে সঙ্গে অবশ্যই নিরাপদ খাবার পানি নিতে হবে। আর এ সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি হচ্ছে হিট স্ট্রোকের। পরিবারের বয়স্ক, অসুস্থ সদস্য এবং শিশুরা থাকেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। হিট স্ট্রোকের মূল কারণ পানিশূন্যতা। বয়স্ক, অসুস্থ এবং শিশুরা অনেক সময়ই এটা অনুধাবন করতে পারে না। তাই তাদের দিকে বাড়তি নজর রাখতেও পরামর্শ দেন তিনি এবং এই গরমে ফ্রিজের ঠন্ডা পানি খাওয়া একেবারেই উচিত না বলেও জানান তিনি।
এদিকে গত কয়েকদিনের তীব্র গরমে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নানান সামাজিক সংগঠন নিত্য প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে বাইরে আসা মানুষদের মধ্যে ঠান্ডা পানি, স্যালাইন, শরবত বিতরণ করতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরেও "সাদাকাহ্` নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড ও কলেজ গেইট এলাকায় পথচারী ও শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষদের মধ্যে ঠান্ডা মিনারেল ওয়াটার বিতরণ করেছে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :