AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

৫ মে লালপুর গণহত্যা দিবস


Ekushey Sangbad
এস ইসলাম, লালপুর, নাটোর
০৪:১৩ পিএম, ৪ মে, ২০২৪
৫ মে লালপুর গণহত্যা দিবস

৫ মে উত্তর বঙ্গের ভারী শিল্প নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে গণহত্যা দিবস। 

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল কর্তৃপক্ষের আয়োজনে শহীদদের স্মৃতির স্বরণে পুস্প স্তবক অর্পন, আলোচনা সভা ও মিলাদ মহাফিল সহ নানান কর্মসূচী মধ্য দিয়ে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করে আসছে। 

জানা যায়, ১৯৭১ সালের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাক হানাদার বাহিনী সুগার মিল অবরুদ্ধ করে তৎকালীন প্রশাসকসহ ৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শতাধিক লোককে ব্রাশ ফায়ার করে গণহত্যা করে। স্বাধীনতার পর শহীদদের সলিল সমাধির নিরব স্বাক্ষী গণহত্যা স্থলের পুকুরটির নাম করন করা হয়েছে ‘শহীদ সাগর’। 

লালপুর বাসীর জন্য এটি একটি শোকাবহ স্মরনীয় দিন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সারাদেশে উৎপাদন যন্ত্র অচল থাকলেও হানাদার বাহিনীর নাটোর ক্যাম্পের মেজর শেরওয়ানী খানের আশ্বাসে এলাকার আখ চাষীদের স্বার্থ বিবেচনা করে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের তৎকালীন প্রশাসক লেঃ আনোয়ারুল আজিম যথারীতি মিলের উৎপাদন অব্যহত রাখেন। ওয়াদার বরখেলাপ করে বর্বর পাক বাহিনী মিলের সব গুলো গেটে তালা লাগিয়ে অবরুদ্ধ করে অবাঙালীদের যোগসাজশে শতাধিক বাঙালীদের শনাক্ত করে মিলের ১ নং গেট সংলগ্ন পুকুর ঘাটে নিয়ে যায়। তাদেরকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে লাশগুলো পুকুরে ফেলে দেয়। ওই দিনই হানাদার বাহিনী গোলাপপুর বাজার এলাকায় আরো ছয় জনকে গুলি করে হত্যা করে। পাক হানাদার বাহিনীর লোমহর্ষক হত্যা যজ্ঞের নীরব স্বাক্ষী বুলেট বিদ্ধ হয়ে লাশের স্তুপের নিচে চাপা পড়েও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় কয়েকজন। তাদের একজন এই মিলের পাওয়ার হাউজের এসবিএ পদে চাকুরী করতেন খন্দকার জালাল আহমেদ, সে কিছু দিন আগে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ৫ মে ২০১৬ ইং সালে তিনি সেই বিভিষীকাময় ভয়াবহ দিনের স্মৃতি চারন করতে গিয়ে আবেগ আপতু হয়ে তার স্মৃতির ৫ মে ১৯৭১ ইং সালের কথা বলে গেছেন।

এই গণহত্যায় মহান শহীদদের কয়েকজন হলেন, লেঃ আনোয়ারুল আজিম, সহিদুল্লাহ, গোলজার হোসেন তালুকদার, সাইফুদ্দিন আহমদ, আবুল হোসেন, আবদুর রউফ, মান্নান ভূইয়া, গোলাম কিবরিয়া, নূরুল হক, আজহার আলী, মকবুল হোসেন, আবুল বাসার, মনসুর, রহমান, সাজেদুর রহমান, ইসমাইল হোসেন, হাবিবুর রহমান, মোসাদ্দারুল হক, মোকসেদুল আলম, আঃ রহমান আমিন, মোঃ আলী, মোজাম্মেল হক, আব্দুল মান্নান, ফিরোজ মিয়া, আক্তার উদ্দিন, সোহরাব আলী, আনোয়ারুল ইসলাম, পরেশ উল্লাহ, আঃ মান্নান, কামাল উদ্দিন, আবুল কাসেম, আব্দুর রব, শামসুল হক, আব্দুল মজিদ, আবুল কালাম, নজরুল ইসলাম, আয়েজ উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল, মোসলেম উদ্দিন, জহির উদ্দিন, শহীদুল্লাহ, মোঃ আলী প্রমুখ। এছাড়া আরো শহীদদের নাম পাওয়া যায়নি। এ ছাড়াও সেদিন যারা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন তারা হলেন, মেহমান আলী, নওসাদ আলী, খন্দকার ইমাদ উদ্দিন আহম্মেদ, আব্দুল জলিল সিকদার, তোফাজ্জল হোসেন, আজের আলী প্রমুখ। 

শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শহীদ সাগর চত্ত্বরে স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ৫ মে মিলের প্রশাসক লেঃ আনোয়ারুল আজিমের স্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার শহীদ সাগর চত্ত্বরে স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন। তার নামানুসারে গোপালপুর রেল স্টেশনের নামকরণ হয়েছে আজিমনগর স্টেশন। শহীদ আজিমের ছেলে প্রজন্ম একাত্তরের একজন সক্রিয় কর্মী। এছাড়া ২০০০ সাল থেকে দিনটিকে বাংলাদেশের চিনিকল সমুহের শহীদ দিবস হিসাবে দেশের সবকটি চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারিরা পালন করে আসছে। প্রতিবছর শহীদদের আত্মীয়-স্বজন, মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় লোকজন ৫ মে শহীদ সাগর চত্বরে সমবেত হন। 

এ উপলক্ষ্যে ৫ মে শহীদদের স্মরণে সকালে ফাতেহা পাঠ ও পুস্পস্তবক অর্পন,শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল, কাঙ্গালী ভোজ ও খতমে কোরআন সহ নানান কর্মসূচী নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল কর্তৃপক্ষের আয়োজনে করা হয়। উল্লেখ্য তৎকালীন নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের প্রশাসক লেঃ আনোয়ারুল আজিম রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদ স্বীকৃতি পেলেও বাকিরা এখনো কোন স্বীকৃতি পায়নি।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!