জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এক রাতে চিরকুটে ফোন নাম্বার ও সিরিয়াল লিখে পাশাপাশি দুইটি ফসলি মাঠের ৮টি বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। শনিবার ৪ মে দিবাগত রাতে উপজেলার তিলকপুর ও সোনামুখী ইউনিয়নের পাশাপাশি কাদোয়া ও গণিপুর জাফরপুর মাঠে ঘটে। একই কায়দায় গত বছরের ডিসেম্বর মাসে উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নে ৬টি মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছিল। ফোন নাম্বর থাকা সত্বেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে চোরেরা।
রোববার ৫ মে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে নলকুপ মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের কাদোয়া গ্রামের শহীদুল ইসলামের গভীর নলকুপের দুইটি, মাসুদ রানার একটি, সোনামুখী ইউনিয়নের জাফরপুর গ্রামের মোজাম্মেল হকের একটি, এনামুল হকের একটি, আবু সালেকের একটি, আব্দুর রহমানের একটি ও রামশালা গ্রামের সিরাজ মৃধার একটিসহ মোট আটটি গভীর নলকুপের বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করে নিয়ে যায় চোরেরা। সকল মিটার তালাবদ্ধ লোহার খাঁচা ভেঙে নিয়ে যায় তারা। সকল মিটার গুলো চুরির পর সেখানে কাগজের চিরকুটে ০১৯৭৪-১৪৫১০৯ নম্বর লিখে রেখে যায় চোর চক্রের সদস্যরা। প্রতিটি মিটারে তারা আলাদা একটি সিরিয়াল নম্বরও লিখে রাখে। পরে নলকূপ মালিকরা ওই নম্বরে যোগাযোগ করলে বিকাশ অথবা নগদ একাউন্টে ৮ হাজার টাকা দাবি করে তারা। অন্যথায় আবারও মিটার চুরি করা হবে বলে হুমকি দেয় চোরেরা। ওই দুটি মাঠে প্রায় ৭০ হেক্টর ইরি বোরো ধানের ক্ষেত রয়েছে। এতে উৎপাদন ব্যহত হওয়ার শঙ্কায় দিন পার করছেন ওই মাঠের কৃষকরা।
আরও জানা যায়, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়ন থেকে এক রাতে ছয়টি গভীর নলকুপের বৈদ্যুতিক মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেও ব্যবহার করা হয়েছিল সিরিয়াল ও ফোন নাম্বার । ফোন নাম্বার থাকা সত্তে¦ও চোর ধরতে না পারায় সেচ পাম্প মালিক ও জনসাধারণের মনে জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্ন।
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আক্কেলপুর জোনাল অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিক সংযোগের মিটার নিতে প্রায় ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। বর্তমানে ওই অফিসে তিন ফেইজ মিটার মজুদ নেই। এছাড়াও প্রতিটি বৈদ্যুতিক মিটার ও ট্রান্সফরমার চুরির প্রতিটি ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এ সকল অভিযোগের প্রেক্ষিতে চোর শনাক্ত ও চুরি যাওয়া মালামাল উদ্ধারের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি আক্কেলপুর জোনাল অফিসে। কিছু গ্রাহক টাকার বিনিময়ে চোরের কাছ থেকে ফেরৎ নিয়েছে মিটার।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ওই দুইটি ইউনিয়নের আটটি গভীর নলকুপের সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হচ্ছে ইরি বোরো ধান। মিটার চুরির ঘটনায় এই সব জমিতে সেচ বন্ধ থাকায় ধান উৎপাদন ব্যহত হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কৃষি দপ্তর ও কৃষকরা।
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আক্কেলপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম মোহা. আব্দুর রহমান বলেন, মিটার চুরির বিষয়ে গভীর নলকুপের মালিকরা জানিয়েছেন। থানায় মামলা দায়ের করা হবে। এখন পর্যন্ত চুরি হওয়া কোন মিটার উদ্ধার সম্ভব হয়নি। গভীর নলকূপের সংযোগ তিন ফেইজের হয়। মামলার পাশাপাশি চুরি রোধে গ্রাহকদের স্থায়ীভাবে ট্রান্সফরমার এবং মিটার পাহারা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং গ্রাহক সচেতনতায় এলাকায় মাইকিংও করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই চুরি রোধ হচ্ছে না।
তিলকপুর ইউনিয়নের কয়া গোপীনাথপুর গ্রামের গভীর নলকূপের মালিক মাসুদ রানা বলেন, গভীর রাতে বৈদ্যুতিক মিটারের তালা বদ্ধ লোহার খাঁচা ভেঙে মিটার চুরি করে সেখানে একটি চিরকুটে বিকাশ মোবাইল নম্বর লিখে রেখে যায়। ওই নম্বরে ফোন করলে চোরেরা বলে ৮ হাজার টাকা দিতে হবে, না হলে আবারও মিটার চুরি করা হবে।
কৃষক আতিয়ার রহমান বলেন, প্রচন্ড গরমের মধ্যে এমনিতেই ধানের জমিতে পানি শুকিয়ে যায়। এ সময় ধানে দানা ধরতে শুরু করেছে। এখনি পর্যাপ্ত সেচ না দিলে ধান চিটা হয়ে নষ্ট হবে। আমরা উৎপাদন ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে দিন পার করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, এই সময় ধানের জন্য পানি অতীব জরুরী। সাত দিনের মধ্যে জমিতে পানি সেচ না দিতে পারলে ফসলের ব্যপক ক্ষতি হবে। এছাড়া তীব্র তাপদাহের কারণে জমিতে তিন ইঞ্চি পরিমান পানি রাখতে পরামর্শ দিচ্ছি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নয়ন হোসেন বলেন, মিটার চুরির বিষয়ে খবর পেয়েছি। চোর চক্রদের ধরতে আইনী প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তাদের শনাক্ত করতে দ্রুত আমরা সক্ষম হবো।
মিটার চোরদের এখনো ধরতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমি নতুন এসেছি। তাদের বিষয়ে বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
একুশে সংবাদ/ এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :