চায়ের রাজধানী খ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে টানা তীব্র তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টিপাতে চা বাগানগুলোতে রুক্ষতা দূর করে কিছুটা ফিরেছে সবুজ প্রাণ। এই প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত চা বাগানের জন্য অনেক উপকারি বলে জানিয়েছেন চা বাগান সংশ্লিষ্টরা।
শ্রীমঙ্গলে গত ২১ ঘন্টায় ১৪৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত আবহাওয়া অফিস পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী শ্রীমঙ্গল উপজেলায় গত রবিবার বিকেল ৩টা থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২১ ঘন্টায় ১৪৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। রবিবার শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টিধারা গায়ে মেখে চা-বাগানগুলোয় চোখ মেলতে শুরু করেছে পাতা-কুঁড়িরা। একাধিক চা-বাগান মালিকরা জানান, বৃষ্টির অভাবে তীব্র খরার কবলে পড়ে চা গাছগুলো ঝলসে পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছিল। চা-বাগানে রেড স্পাইডার ও হেলোপেলটিস মশার আক্রমন দেখা দিয়েছিল। এমন সময় বৃষ্টি চা উৎপাদক মহলে এনে দিয়েছে স্বস্তি। এই প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাত চা বাগানের জন্য অনেক উপকারি বলে জানিয়েছেন চা বাগান সংশ্লিষ্টরা।
চা বাগানের মালিকরা বলেন, দীর্ঘ খরার পর এই বৃষ্টি যেন ‘আশীর্বাদ’ হিসেবেই এসেছে। তারা জানান, কয়েক মাসে তীব্র খরা এবং নানা রোগের কারণে চা উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পেয়েছিলো। মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে লাল মাকড়সার আক্রমণসহ পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। সব মিলিয়ে মৌসুমের শুরুতে অর্ধেকের কম উৎপাদন হচ্ছে চা বাগানে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, রবিবার বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩ ঘন্টায় শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। বৃষ্টির সাথে হয়েছে শিলাবৃষ্টিও। এরপর রবিবার রাত থেকে সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৮৯.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
বাংলাদেশীয় চা সংসদের (বিটিএ) সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলি বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ও অধিক তাপমাত্রার কারণে বাগানে নতুন পাতা না আসায় উৎপাদন কমে গিয়েছিল। নতুন কুঁড়ি না আসা, পানির সংকট, লাল মাকড়সার আক্রমণ প্রায় সব চা বাগানেই ছিল। এই বৃষ্টিপাতের ফলে চা গাছগুলো সজীবতা ফিরে পেয়েছে। এখন চা গাছে দ্রুত নতুন কুঁড়ি আসবে, প্লাকিং শুরু হবে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট এর পরিচালক ড. মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ও অধিক তাপমাত্রার কারণে বাগানে নতুন পাতা না আসায় উৎপাদন কমে গিয়েছিল। নতুন কুঁড়ি না আসা, পানির সংকট, লাল মাকড়সার আক্রমণ এখন প্রায় সব চা বাগানেই বিদ্যমান ছিল। তীব্র খরার কারণে চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন চা বাগানের ইরিগেশন (সেচ) দিয়েও চা গাছগুলোকে শতভাগ রক্ষা করতে পারছিলেন না। প্রচন্ড তাপপ্রবাহের পর টানা বৃষ্টি চা গাছগুলো ধীরে ধীরে আপন সজিবতা ফিরে পাাচ্ছে। আশাবাদি এখন চা গাছে দ্রুত নতুন কুঁড়ি আসবে। প্লাকিং শুরু হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার ওপরে চা উৎপাদন হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :