রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ভিড়তে দেখা যায় ইম্প্রুভড মিডিয়াম টাইপ (মাঝারি আকারের) ফেরি গৌরি। পারের অপেক্ষায় সিরিয়ালে থাকা অন্য যানবাহনগুলো এ ফেরিতে অনায়াসে পার হতে পারলেও, যেতে পারল না বড় আকারের দুটি কাভার্ডভ্যান। কারণ ফেরির ছাদে আটকে যায় এ কাভার্ডভ্যানের সামনের অংশ।
সম্প্রতি দৌলতদিয়ার ফেরিঘাটে দেখা যায় এ দৃশ্য। ঈদ-উল-ফিতরের আগে গৌরি ও বাইগার নামে নতুন দু`টি ফেরি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যুক্ত করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। তবে বড় কাভার্ডভ্যান পারাপারে কোন উপকারেই আসছে না ফেরি দুটি। চালকদের অভিযোগ, নৌরুটে নতুন দু`টি ফেরি যুক্ত হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়েছিলেন তারা। তবে এসব ফেরিই এখন তাদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। বড় কাভার্ডভ্যানের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে মালামালের স্তূপ উঁচু হয়ে গেলে সেগুলোও উঠানামা করতে পারছে না।
একই টাইপের আরও চারটি ফেরি এ নৌরুট ছাড়াও আরিচা-কাজীরহাট এবং ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে চলাচল করছে। ৬টি ফেরি-ই ঈদ-উল-ফিতরের আগে চালু করা হয়। ফেরিগুলোর মধ্যে গৌরি ও বাইগার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচল করছে। ফেরিগুলোতে বড় কাভার্ডভ্যান তুলতে না পেরে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে চালকদের। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী চালাচলকারী কাভার্ডভ্যানের চালক মো. লিয়াকত খান বলেন, গৌরি ও বাইগার ফেরির উচ্চতা কম, আর আমাদের গাড়ির উচ্চতা বেশি। যে কারণে ফেরিতে উঠতে গেলে গাড়ির সামনের অংশ ফেরির ছাদের নিচে আটকে যায়। তাই ঘাটে এসে সিরিয়ালে আগে থাকার পরও, এই ফেরি ঘাটে ভিড়লে আমরা আর ফেরিতে উঠতে পারি না। অথচ আমাদের পেছনে থাকা গাড়িগুলো আগে পার হয়ে যায়। অন্য ফেরির অপেক্ষায় অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের ঘাটে বসে থাকতে হয়। খুলনা থেকে ঢাকার ঢাকাগামী কাভার্ডভ্যানের চালক রেজাউল করিম বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন ফেরি কিনেছে। অথচ আমাদের বড় গাড়ির কোন উপকারেই আসছে না। বরং এসব ফেরির কারণে আমাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। ঘাটে এসে মনে মনে দোয়া করি, এ ফেরিগুলো যেন ঘাটে না ভিড়ে।
বিআইডব্লিউটিসির একটি প্রকল্পের আওতায় এসব ফেরি সংগ্রহ করা হয়। ৬টি ফেরি কেনার খরচ ১৩৯ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশের মতো টাকা দেয়া হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানিয়েছে। প্রকল্পটির আওতায় ৩৫টি বাণিজ্যিক ও ৮টি সহায়ক জলযান সংগ্রহ এবং ২টি নতুন স্লিপওয়ে (ঢালু পথ) নির্মাণ করা হচ্ছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সূত্র বলছে, এ ঘাটে থাকা গৌরি ও বাইগার ফেরিতে ১৩ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার কাভার্ডভ্যান উঠানামা করতে পারে। এর চেয়ে বেশি উঁচু হলে সেগুলো ফেরির ছাদের নিচে আটকে যায়।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সংস্থার ৫৯টি ফেরি আছে। এর মধ্যে নতুন ৬টি ফেরি ছাড়া অন্যগুলোতে এ সমস্যা নেই। বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ড. এ,কে, এম মতিউর রহমান বলেন, ফেরি বানানোর জন্য কিছু স্পেসিফিকেশন (সুনির্দিষ্ট চাহিদা) দেয়া হয়েছিল যে উচ্চতা লাগবে, তাই করা হয়েছে। যে যানবাহন ওই ফেরিতে ঢুকবে না, সে যানবাহন ঐ ফেরিতে যাবে না। অন্য ফেরিতে যাবে। এতে অসুবিধার কিছু নেই। নতুন ৬টি ফেরিতে বড় কাভার্ডভ্যান ওঠানামা করতে না পারার বিষয়টি সমাধানের জন্য কাজ করা হচ্ছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিসির কনিষ্ঠ নির্মাণ প্রকৌশলী খন্দকার আবুল আহসান। তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমরা নকশাকারের সঙ্গে কথা বলেছি। এর সমাধানের চেষ্টা চলছে। বিআইডব্লিউটিসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ফেরিগুলোতে যেসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেগুলো নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলি শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড ঠিক করে দেবে। তারা এভাবে আগামী দু`বছর সেবা দেবে। উচ্চতার যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাও তারা ঠিক করা দেবেন।বিআইডব্লিউটিসির একটি সূত্র বলছে, নতুন ছয় ফেরির পানির নিচের অংশের গভীরতা (ড্রাফট) বেশি। সে কারণে নদীতে বেশি পানি ছাড়া সেগুলোর চলাচলে সমস্যা হয়। বিআইডব্লিউটিসির মুখ্য নৌনির্মাতা মো. জিয়াউল ইসলাম বলেন, নতুন ফেরিগুলো ডাবল বটম (দু`টি তলাবিশিষ্ট) হওয়ার কারণে ড্রাফট বেশি হয়েছে। কোনও কারণে একটি তলা ফেটে পানি ঢুকলে তখন ফেরি যেন না ডোবে, সে জন্য দুটি তলা দেয়া হয়েছে। জিয়াউল ইসলাম আরও বলেন, বেশি ভার নেয়া হলে ফেরিগুলোর পানির নিচের অংশ আরও বেড়ে যাবে। তাই তারা ফেরি লোড ২৫০ টনের মধ্যে রাখতে বলেছেন।
একুশে সংবাদ /এসএডি
আপনার মতামত লিখুন :