ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি-২০২৪ এ জিপিএ-৫ পেয়ে ভালো ফল করায় খুশি হয়েছেন পরিবারসহ স্কুলের শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা। তবে অর্থাভাবে সেই আনন্দ এখন বিষাদে পরিণত হচ্ছে ইসমাইল হোসেনের।
উপজেলার বন্দোরখোলা ইউনিয়নের বড় খাস বন্দরখোলা তাহের শিকদার কান্দি গ্রামের দিনমজুর বজলু আকনের পুত্র ইসমাইল। অভাব অনটনের মধ্যে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
শিবচর উপজেলার নুরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এস. ই. এস. ডি. পি. মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে।
জানা গেছে, দিনমজুর বজলু আকন আগ্রাসী পদ্মার তীব্র ভাঙনে ভিটে মাটি হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের জমিতে। চাষাবাদ করার মতো কোন জমি না থাকা ভ্যান চালিয়ে কোনো মতে সংসার চালান। অভাবের এ সংসারে শিক্ষক ও আত্মীয়দের সহযোগীতায় কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে ইসমাইল। নুন আনতে পানতা ফুরায় সংসারে অভাব অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করে খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যায় ইসমাইল। একটি বাশের খুঁটি দু’চালা টিনের ঘর ছাড়া সম্বল বলতে আর কিছুই নেই তাদের। অর্থাভাবে ইসমাইলের কলেজে ভর্তি হওয়াই এখন অনিশ্চিত।
মেধাবী শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্যারসহ সকল শিক্ষকরা আমাকে অনেক সহযোগিতায় করছে। বিনামূল্য আমাকে পড়া শুনার সুযোগ করে দিয়ে ছিলো। সে জন্য আমি আজ জিপিএ ৫ পেয়েছি। আমার বাবা ভ্যান চালিয়ে সামান্য উপার্জন করে। তাতে আমাদের সংসার ভাল ভাবে চলে না। আমার বাবার পক্ষে আমাকে কলেজে ভর্তি করা সম্ভব না। এখন দুঃচিন্তায় ভুগছি ভ্যান চালক বাবা কিভাবে ভালো কলেজে ভর্তি করবেন।
ইসমাইল হোসেন মা আফরোজা বেগম জানান, নদী ভাঙ্গন, অভাব-অনাটনের মধ্যেও ছেলে ভালো ফলাফল করেছে। সে আরও পড়তে চায়। ৫ জনের সংসারে আমার স্বামী ভ্যান চালিয়ে উপার্জন দিয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। আমাদের কোন সম্পতি নেই। যেইটুকু ছিল তা আগ্রাসী পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের তো বাড়ির ভিটাও নেই। আমার ছেলের স্বপ্ন সে সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার হবে। কলেজে ভর্তি ও পড়ার খরচ জোগানোর সামর্থ্য আমাদের নেই।
নুরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এস. ই. এস. ডি. পি. মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ফাহিম আহমেদ বলেন, ইসমাইল সত্যিই একজন মেধাবী ছাত্রী। ইসমাইল তার পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করে তাকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দিয়েছিলাম। গরিব পরিবারের সন্তান হয়েও ভালো রেজাল্ট করে এখন অর্থের অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার। তাই এমন মেধাবীদের লালন করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :