ধর্ষণের শিকার মেয়েটির শরীর ও মনের ওপর দিয়ে ঝড় বইয়ে গেছে। তিনি এক সপ্তাহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ছিলেন। পরে হাসপাতালটির ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে। এখন সে নিজেই হাঁটতে পারে।
ধর্ষণে মেয়েটির জননাঙ্গ ছিঁড়ে যাওয়ায় অস্ত্রোপচার করতে হয়। অস্ত্রোপচারের পর রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণে তাঁকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। মেয়েটির অবস্থা এতটাই খারাপ হয়েছিল যে আইসিইউতে থাকা অবস্থায় তাঁর ‘ডাইং ডিক্লারেশন’ বা মৃত্যু-পূর্ব জবানবন্দি নিয়ে রেখেছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট।
দুই বছর আগে অভাব-অনটনের কারণে মেয়েটির পরিবার রাজশাহী থেকে আশুলিয়ায় আসে। তখন থেকেই সে পোশাক কারখানায় কাজ করে। তার বাবা দিনমজুর, মা স্থানীয় একটি হাসপাতালে আয়া।
মেয়ের বাবা ৫০০ - ৬০০ টাকা মজুরিতে দিন মজুরের কাজ করেন, মায়ের বেতন ৮ হাজার টাকা। আর সে নিজে আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় হেলপার হিসেবে কাজ করে ১২ হাজার টাকা বেতন পায়। ধর্ষণে অভিযুক্ত ব্যক্তি মেয়েটির সঙ্গে একই কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করে, সে এখন কারাগারে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্পের অধীন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের সমন্বিত সেবা দেওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওসিসি ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও আইনি সেবা দিচ্ছে।
ওসিসির সমন্বয়কারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ধর্ষিতা মেয়েটি আর হাসপাতালে থাকতে চায় না। তাছাড়া তাঁর শারীরিক অবস্থাও আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। তাই তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছে, তার আগে কাউন্সেলিং করা হয়েছে। বাড়ি ফিরলেও সে ওসিসিতে এসে বিনা মূল্যে কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা সহায়তা নিতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, ধর্ষিত মেয়েটিকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল, যা সাধারণত ধর্ষণের ঘটনায় খুব একটা ঘটে না। ধর্ষণে তাঁর জননাঙ্গ ছিঁড়ে গিয়েছিল। ছয় ব্যাগ রক্ত দিতে হয় রোগীকে। সব মিলিয়ে সে ট্রমায় চলে গিয়েছিল। ওসিসিতে তাঁকে দিনে ছয়টি ডিমসহ উন্নতমানের খাবার দেওয়া হতো। বাড়িতে ফেরার পরও কিছুদিন তাঁকে ভালো খাবার দিতে হবে, শারীরিক দুর্বলতা কাটানোর জন্য।
ধর্ষণের অভিযোগে ২৪ এপ্রিল রাতেই মেয়ের বাবা আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। তিনি বলেন, মামলা করার পর আসামির পক্ষ থেকে বিভিন্ন জন ফোন করে, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেন। মেয়েটির বাবা বলেন, কোনোভাবেই সে এবিষয়ে আপস করবে না। তিনি আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়।
মামলা তদন্ত করছেন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ খান। তিনি বলেন, ২৫ এপ্রিল আসামিকে গ্রেপ্তার করে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে তাঁকে কারাগারে পাঠান আদালত। আসামি ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। প্রাথমিক তদন্তেও ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।
আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার মেয়েটির মামলায় আইনি সহায়তা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, আসামি এখন কারাগারে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দ্রুত অভিযোগপত্র দিলে, বিচারে আসামির উপযুক্ত শাস্তি হলে, একটা দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। মেয়েটির পুনর্বাসনে অন্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
একুশে সংবাদ/হ.ক.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :