ময়মনসিংহের নান্দাইলে চলছে কুকুর নিধন। যেখানে কুকুর পাচ্ছে পিটিয়ে মারছে এলাকাবাসী। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এই বেওয়ারিশ কুকুর নিধন।
বাঁশের লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নান্দাইল পৌর এলাকার নান্দাইল বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় জনতা মিলে পিটিয়ে মারছে বেওয়ারিশ কুকুরগুলোকে। এই পর্যন্ত ১২টি কুকুরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে স্থানীয় একটি সুত্র জানিয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নান্দাইল সদরেই মারা পড়ে বেশ কিছু কুকুর। ভয়ে অন্য কুকুরগুলো দৌড়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। সোমবার সারা দিন ঘুরেও নান্দাইল বাজার ও এর আশপাশে কোনো কুকুরের দেখা মেলেনি। এদিকে মোয়াজ্জেমপুর, শেরপুর ও আচারগাঁও ইউনিয়নেও যুবকেরা চারটি কুকুর মারেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়,গত রোববার ভোরে মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে আসার পথে নান্দাইল দক্ষিণ চারিআনিপাড়ায় কুকুরের একটি দল আজিজুল হক নামে একজনকে আক্রমণ করে। একপর্যায়ে কুকুর মুখ, চোখে কামড় দেয় এবং পেট ছিদ্র করে নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেললে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয়রা মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়।
এদিকে এ ঘটনায় এই এলাকার মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী রোববার সন্ধ্যা থেকে কুকুর নিধনে নামে। নান্দাইল বাজার থেকে বাসস্ট্যান্ডে রাস্তায় যাওয়ার সময় একের পর এক কুকুরের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে এসব কুকুর মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে বলে জানান পৌর কর্মচারীরা।
নান্দাইল বাজারের শ্রমিক সর্দার জানান, এ পর্যন্ত ১৫টি কুকুর মারা হয়েছে। অন্য কুকুরগুলো ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।
নাথপাড়া মহল্লার সজীব মিয়া (২০) বলেন, ‘আমাদের টিম ছয়টি কুকুর মেরেছে।’
চা-বিক্রেতা সুভাষ চৌহান বলেন, ‘কুকুর না মেরে উপায় নাই। যে হারে মানুষরে কামড়াচ্ছে।’
পৌরসভার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মচারী লালন মিয়া (৩০) বলেন, ‘আমাদের এলাকায় কুকুর মারার জন্য লোকজন প্রস্তুত, কিন্তু এখন এদের পাওয়া যাচ্ছে না, কোথাও লুকিয়ে পড়েছে। সোমবার রাতেও কুকুর নিধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকার যুবকেরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. হারুনর রশীদ বলেন, ‘কুকুরের দলবদ্ধ হয়ে মানুষকে আক্রমণ এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। সাধারণত কোনো কুকুর পাগল হলে পৌরসভার সহায়তায় আমরা কাজ করি। এসব ভাইরাস আক্রান্ত কুকুর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মারা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে বেওয়ারিশ কুকুর মেরে ফেলা ঠিক নয়। কুকুরে মেরে ফেলছে এটা তো আমরা বাধা দিতে পারি না। আমরা সাধারণত কোনো কুকুর পাগল হলে পৌরসভার সহায়তায় আমরা কাজ করি। কেউ যদি কুকুর ধরে রেখে খবর দেয়, আমরা টিকা দিই।’
নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মজিদ বলেন, ‘কুকুর নিধনের বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। কুকুরের কামড়ে যুবকের মৃত্যু হওয়ার পর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও পৌর মেয়রের সঙ্গে যোগাযোগ করে হিংস্র কুকুরগুলোর কী করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।’
একুশে সংবাদ/এস কে
আপনার মতামত লিখুন :