AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
খুদে বিজ্ঞানীর উদ্ভাবন

শ্রীমঙ্গলে পলিথিন, টাইলস-টিন তৈরি করে তাক লাগিয়েছে কলেজছাত্র


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি,মৌলভিবাজার
০৪:৫৬ পিএম, ২৫ মে, ২০২৪
শ্রীমঙ্গলে পলিথিন, টাইলস-টিন তৈরি করে তাক লাগিয়েছে কলেজছাত্র

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে পরিত্যক্ত সবজি থেকে পরিবেশবান্ধব পলিথিন এবং কলাগাছের তন্তু বিশেষায়িত করে টাইলসসহ প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকন পণ্যের বিকল্প ব্যবহারযোগ্য পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরির ফরমুলা আবিষ্কার করে তাক লাগিয়েছে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম।

কাজ করছে সাজ্জাদুল ইসলাম

২৫ মে দুপুরে এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, পরিত্যক্ত সবজি শ্বেতসার পচনযোগ্য পলিথিন তৈরিসহ কলাগাছের তন্তু বিশেষায়িত করে টাইলসসহ প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকন পণ্যের বিকল্প ব্যবহারযোগ্য পরিবেশবান্ধব বস্তু তৈরি করা সম্ভব। তার আবিষ্কৃত কাঁচামালে ৬৫ শতাংশ কলাগাছের তন্তু ও ৩৫ শতাংশ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হয়েছে।

সাজ্জাদুল ইসলাম

শুধু টাইলস নয় তার আবিষ্কৃত কাঁচামাল দিয়ে পচনযোগ্য প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, টিন ও কার্বনের তৈরি মোটরযানের যন্ত্রাংশের বিকল্প হিসেবে কলাগাছের তন্তু ব্যবহার করা সম্ভবও বলে তিনি যোগ করেন। এমনকি বুলেট ফ্রুফ দরজা জানালাও তৈরি করা সম্ভব।

সাজ্জাদ আরও জানান, তার আবিস্কৃত প্লাস্টিক পণ্য উচ্চ তাপে গলিয়ে সহজেই রাসায়নিক দ্রব্য ও কলাগাছের তন্তু আলাদা করা য়ায়। আর সবজির শ্বেতসার থেকে তৈরি পলিথিন মাটিতে ১ মাসে ও পানিতে ৩ মাসে পঁচে যাবে। যা মাটির জন্য হবে জৈব সার ও পানিতে হবে মৎস্য খাদ্য।  

সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরি এই কঠিন যৌগ তৈরি করতে তার সর্বোচ্চ ৬৫ ভাগ তন্তু দিলে এর মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রন হবে। তিনি জানান, তার তৈরি উদ্ভাবিত টাইলসের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম। এরমধ্যে রয়েছে ২০০ গ্রাম কলাগাছের তন্তু ও হাইড্রো অক্সাইড ৬০ গ্রাম এবং রেজিন ৪০ গ্রাম। দীর্ঘ সময় ধরে পণ্যটি যেন না পচে এ জন্য রেজিন ব্যবহার হয়। হাইড্রো অক্সাইড রেজিনের অবস্থানকে আরও শক্তি দেয়। আর পরিবেশবান্ধব পলিথিনের জন্য ব্যবহার হয় বাজারের পরিত্যক্ত সবজি থেকে সংগ্রহ করা শ্বেতসার, অ্যাসিটিক এসিড ও গ্লিসারল।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের মোহাজেরাবাদ এলাকার কৃষক মোঃ নজরুল ইসলাম ও সাহেরা খাতুনের পুত্র সাজ্জাদুল ইসলাম। সাজ্জাদ দুই বোনের মধ্যে সে সবার বড়। শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলাম। পড়ালেখা ও গবেষণা কাজে অর্থনৈতিক সাপোর্ট পেলো সাজ্জাদ ভবিষ্যত পরমানু বিজ্ঞানী হতে চান।

এদিকে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ-এর কার্যালয় থেকে শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল ইসলামকে দেয়া এক প্রত্যয়নপত্রেও মিলেছে গবেষণার প্রমাণ। প্রত্যয়নপত্রে লেখা রয়েছে এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, সাজ্জাদুল ইসলাম, পিতা: মোঃ নজরুল ইসলাম মন্নান, মাতা: সাহেরা বেগম, গ্রাম: মোহাজেরাবাদ, ডাক ও উপজেলা শ্রীমঙ্গল, জেলা:  মৌলভীবাজার। সে অত্র কলেজের ২০২৩-২০১৪ শিষাবর্ষের উচ্চ মাধ্যমিক (একাদশ) শ্রেণির বিজ্ঞান শাখার একজন নিয়মিত ছাত্র। তার শ্রেণি রোল নং: ৮৭৪।
সে কলাগাছের তত্ত্বকে বিশেষায়িত করে প্লাস্টিক, লোহা ও সিলিকন পণ্যের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারযোগ্য পণ্যের প্রধান কাঁচামাল তৈরি করেছে। ইতোপূর্বে সে তার আবিষ্কৃত প্রজেক্ট দিয়ে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা-২০২৪ এ জেলা পর্যায়ে ‍‍`বছরের সেরা মেধাবী‍‍` হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। আমি তার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করি।

সাজ্জাদুলের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শ্রীমঙ্গল মোহাজেরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান হুগলিয়া হাজী মনছব উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুল হাছান জানান, ছোটবেলা থেকেই সাজ্জাদ বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিস্কারে ছিল কৌতুহল। এ থেকেই বিভিন্ন কিছু আবিস্কারে তার মনোযোগ আসে। সাজ্জাদুল ইতোমধ্যে কলাগাছের তন্তুকে ব্যবহার করে তৈরী করেছে টাইলস আর অব্যবহৃত সবজীর শ্বেতসার থেকে তৈরি করেছে পরিবেশবান্ধব পলিথিন। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক অধ্যাপক হৃদয় কুমার ভৌমিক জানান, কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল কলাগাছের সেলুলোজ সমৃদ্ধ তন্তু এর হাইডোঅক্সাইড ও রেজিন ব্যবহার করে একটুরো টাইলস তৈরি করে এবং আলুর শ্বেতসার থেকে পলিথিন তৈরি করে এনে দেখায়। পরে আমরা সরকারি কলেজের ল্যাবে পুনরায় করে দেখানোর জন্য বলে হলে সে মঙ্গলবার কলেজের ল্যাবে এই দুই পণ্য তৈরি করে আমাদের দেখিয়েছে। এ সময় কলেজের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তা দেখেছেন। তিনি বলেন, সে যে কাঁচামাল ব্যবহার করেছে তা পরিবেশের ভারসাম্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আরো অধিক গবেষনায় এটি ভালো কোন আবিস্কার হতে পারে।

উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক রোমান মিয়া বলেন, প্রধান কাঁচামাল কলাগাছের তন্তু সহজলভ্য। তাই এটির ব্যবহারে গ্লাস ফাইবার ও কার্বন ফাইবারের প্রয়োগ কমবে। সাজ্জাদুলের উদ্ভাবিত পলিথিন পরিবেশের ওপর অপচনশীল পলিথিনের প্রভাব কমাবে।

শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিজন চন্দ্র দেবনাথ জানান,  যেহেতু এর প্রধান কাঁচামাল কলাগাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং কলাগাছ সহজলভ্য তাই এটির ব্যবহারে পরিবেশের উপর অপছনশীল প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমবে।

সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ফল ও সবজি অপচয় হয়। এই অপচয় করা শস্য থেকে পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি করা হলে দেশের অর্থনীতিতে আসতে পারে বড় পরিবর্তন। পাশাপাশি কমে আসবে পরিবেশ দূষণ।  

সাজ্জাদুল ইসলাম আরও জানান, আমি বিজ্ঞান বিভাগের স্টুডেন্ট থাকায় গবেষণা কাজে আমার মনযোগ বেশি। বিশেষ করে আমি দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা কাজগুলো মনযোগ দিয়ে পড়তাম, জানার চেষ্টা করতাম।

ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে, বিশেষ করে দেশের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান স্যারের গবেষণা কাজগুলো নিয়ে ভাবতাম। দেখতাম স্যার কিভাবে প্রাকৃতিক উপাদান থেকে পরিবেশবান্ধব নানা ব্যবহারিক পণ্য আবিষ্কার করেছেন। কয়েক বছর আগে পত্রিকায় দেখলাম বিজ্ঞানী ড. মোবারক স্যার, প্রাকৃতিক উপাদান থেকে পাট থেকে পলিথিন, ঢেউটিন তৈরি করেছেন, আবার পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক থেকে সোনালি ব্যাগ তৈরি করছেন। আর সেই দেখা-ভাবা, গবেষণা থেকেই আমি বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষনা শুরু করি।

ক্ষুদে বিজ্ঞানী সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, আমি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের সেরা শিক্ষার্থী পুরস্কার অর্জন করেছি। উপজেলা প্রশাসন শ্রীমঙ্গল ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস শ্রীমঙ্গল এর আয়োজনে বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা ২০২৪-এ বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছি। 
এছাড়া এ প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে বছরের সেরা মেধাবী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে পুরস্কার পেয়েছি।

সাজ্জাদুল বলেন আমি আরও গবেষনা করতে চাই। কিন্তু এসব গবেষণা করতে হলে ল্যাবের প্রয়োজন, আরও প্রয়োজন অর্থনৈতিক সাপোর্ট। আমার বাবার পক্ষে গবেষনার খরচ চালানো সম্ভব নয়। সরকারের পৃষ্টপোষকতা বা অর্থনৈতিক যোগান পেলো আমি আরও ভালো কিছু করতে পারবো। বিশেষ করে সরকারিভাবে আমি সবধরণের সাপোর্ট পেলে পরিবেশবান্ধব আরও অনেক বস্তু উদ্ভাবন করতে পারবো।


একুশে সংবাদ/এ.মু/ এসএডি

 

 

Link copied!