ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. ইমতিয়াজ আরাফাত বিপুল ভোটে প্রথমবারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চু।
ইমতিয়াজ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহজাহানের ছেলে এবং লক্ষ্মীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে রামগঞ্জ পৌরসভার দেওয়ান বাড়িতে গিয়ে ইমতিয়াজ তার প্রতিদ্বন্দ্বী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চুকে মিষ্টি খাওয়ান। একই সঙ্গে তারা একে অপরের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে বিজয় উদযাপন করেন। এ সময় ইমতিয়াজ উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় বাচ্চুর সহযোগিতা কামনা করেছেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার মানুষ ঢল নামে উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে। প্রতিদিন ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে আসেন নেতাকর্মীসহ স্থানীয় সর্বদলীয় মানুষ। এছাড়াও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আরাফাত রামগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ঘুরে ঘুরে সবার খোজ খবর নিচ্ছেন ও ফুল ও মিষ্টি নিয়ে যাচ্চেন সবার কাছে ।
জানা গেছে, গত ২১ মে রামগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়। এতে আনারস প্রতীক নিয়ে ইমতিয়াজ ও মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে দেওয়ান বাচ্চু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ত ছাড়াও আরও দুইজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে দেওয়ান বাচ্চুর পক্ষে প্রথম থেকেই লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান কাজ করেছেন। এক প্রার্থী দিতে অন্যদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক করেন। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের মোবাইলফোন-হোয়াটসঅ্যাপে কল করে ভোট চেয়েছেন। টিআর ও কাবিখা প্রকল্পে লোভ দেখানো হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে রিটার্নিং কর্মকর্তা এমপি আনোয়ার খানকে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নিতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন। এরপরও তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। এ ছাড়া সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানকে উঠিয়ে এনে মোটরসাইকেলের পক্ষে কাজ করতে প্রভাব দেখানোসহ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তা ১৯ মে রাতে এক চিঠিতে এমপির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রামগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। এরপরও ২০ মে রাতে গাড়িবহর নিয়ে উপজেলা ভোলাকোট ইউনিয়নে এমপি মহড়া দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে। এ সময় আনারস প্রতীকের কর্মীদের হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়। এসব ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
অবশেষে নির্বাচনে ৪৪ হাজার ৮ ভোট পেয়ে ইমতিয়াজ আরাফাত বেসরকারিভাবে রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেওয়ান বাচ্চু ২৬ হাজার ৬০৯ ভোট পেয়েছেন। প্রথমবার ভোটের মাঠে নেমেই ১৮ হাজার ১ ভোট বেশি পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় ইমতিয়াজকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অভিনন্দন জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আমাদের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানও আমাদের। আমরা আশা করছি দুটির সমন্বয়নে রামগঞ্জের জন্য কল্যাণকর হবে। এমন সুযোগ কখনো হয় না বা থাকে না।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আমি যেহেতু জেলা পরিষদের দায়িত্বে আছি, আর আমার ছেলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এলাকার উন্নয়নে সরকারিভাবে যা যা করতে হয় আমি আমার ছেলের পাশে থেকে রামগঞ্জের জন্য সব ধরনের উন্নয়নের ভূমিকা নেবো।
তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি দেলোয়ার হোসেন দেওয়ান বাচ্চু।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আরাফাত বলেন, আমার বাবার সততা আর একনিষ্ঠতা ও রামগঞ্জবাসীর ভালোবাসার কারণেই এ বিজয়। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। প্রত্যেকটি উপজেলা পরিষদ জেলা পরিষদ থেকে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ পায়। আবার সরকারিভাবে উপজেলা পরিষদ একটা বরাদ্দ পায়। সবমিলিয়ে এসব বরাদ্দ কাজে লাগিয়ে রামগঞ্জ উপজেলাকে একটা মডেল রামগঞ্জ করার চেষ্টা করা হবে। উন্নয়নের মাধ্যমে রামগঞ্জবাসীর ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করব।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :