AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

দেড় দশকে মোরেলগঞ্জে ১০ ঘুর্নীঝড়ের তান্ডব


দেড় দশকে মোরেলগঞ্জে ১০ ঘুর্নীঝড়ের তান্ডব

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলীয় উপজেলা বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে  আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর। স্বাধীনতার পর মোরেলগঞ্জের  জন্য স্মরণকালের দুর্যোগ ছিল এটি।কিন্তু ২৬ মে ২০২৪ ঘুর্নীঝড় রেমাল সিড়রের দুর্যোগকেও  হার মানিয়েছে।

গোটা মোরেলগঞ্জে যার ক্ষত এখনো বিদ্যমান।  এই মোরেলগঞ্জের  জনপদে এ পর্যন্ত অন্তত ১০টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। সবশেষ ২৬ মে টানা ১৪ ঘণ্টা রিমালের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয় মোরেলগঞ্জ । পানগুছির দুপাশ ঘেঁষা মোরেলগঞ্জে অতীতের সব জলোচ্ছ্বাসকে অতিক্রম করেছে এই রিমাল। জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ, রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি বিধ্বস্ত করে এই মোরেলগঞ্জের অর্থনীতিকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করেছে। এছাড়াও প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমের বৈরী আবহাওয়া এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ এলাকার নদী তীরবর্তী পরিবারগুলোকে নিঃস্ব করে দেয়। 

মোরেলগঞ্জে লাগামহীন এসব ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না ক্ষতিগ্রস্তরা। এসব ক্ষয়ক্ষতির ৮০ শতাংশ কারণ স্হায়ী বেড়িবাঁধ নির্মান না করা, অপরিকল্পিত এবং যেনতেনভাবে বেড়িবাঁধ নির্মান,বড় কোন প্রকল্প গ্রহন না করা। প্রতিবছর জলোচ্ছ্বাসে গ্রামের পর গ্রাম নদীতে বিলীন হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ জনপদকে বাঁচাতে টেকসই বেড়িবাঁধ দরকার। 

ত্রাণের বদলে এবার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি করেছেন গোটা মোরেলগঞ্জের মানুষ। বিগত সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দরা সংসদে এই উপজেলায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমান এই আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে মোরেলগঞ্জের পানগুছির নদীর পাড়ে  স্হায়ী বেড়িবাঁধ নির্মানের জোর দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হচ্ছে না।  

সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মোরেলগঞ্জের মানুষের  নিত্যসঙ্গী। কিন্তু পরিকল্পিত বেড়িবাঁধ হলে এ  এলাকার মানুষ ক্ষয়ক্ষতি থেকে কিছু হলেও পরিত্রাণ পাবে। অনুসন্ধান বলছে মোরেলগঞ্জে , ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর এ অঞ্চলে আঘাত হানে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর। এরপর ২০০৮ সালে নার্গিস, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা, ২০১৩ সালের ১০ মে মহাসেন, ২০১৬ সালের ২১ মে রোয়ানু, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর বুলবুল, একই বছরের মে মাসে ফণী, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২৩ সালের ১৭ নভেম্বর মিধিলি এবং সব শেষ চলতি বছরের ২৬ মে উপকূলে তাণ্ডব চালায় রিমাল। 

বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন উপকূলীয়  এই উপজেলায়  জনবসতিরা বর্ষা মৌসুম ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। অনুসন্ধান ও সূত্র বলছে, ২৬ মে রিমালের তাণ্ডবে মোরেলগঞ্জে  অন্তত ২০ হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। সরকারি-বেসরকারি হিসাবমতে, এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২০ কোটি টাকা।  এলজিইডির আওতায় ১২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় টিআর,কাবিখা,কাবিটা,জিআর,কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ অবকাঠমো নির্মাণ ও সংস্কারের কয়েক কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

এছাড়া কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যমতে উপজেলায় ২ কোটি টাকার ফসল বিনষ্ট,মৎস অফিস থেকে দেয়া তথ্যমতে উপজেলায় রেমালের তান্ডবে ৩০ কোটি টাকার মৎস্যসম্পদ সহ ১১ হাজার ঘের তলিয়ে গেছে, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসের দেয়া তথ্যমতে উপজেলায় সরকারের খননকৃত পুকুর পাড় ভেঙে যাওয়া ,রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ভেঙে যাওয়া, পিএসএফ সহ স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ক্ষতি হয়েছে। ভারি জলোচ্ছ্বাসে মোরেলগঞ্জে পঞ্চকরন,দেবরাজ  সহ কয়েকটি স্থানে পানি উন্নয়ন মিনি বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে দেশের দক্ষিনের জেলা মোরেলগঞ্জে  প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি নদীর দুপাড়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে এ ক্ষতির পরিমাণ অবশ্যই হ্রাস পেত। বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন মোরেলগঞ্জে প্রায় ৪ লক্ষাধিক  জনসংখ্যা রয়েছে। রিমালের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হওয়া মোরেলগঞ্জে কয়েকটি অংশ দিয়ে হুহু করে বন্যার পানি ঢুকে লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। 

ঘূর্ণিঝড়ের ৭ দিন অতিক্রম হলেও অনেক ইউনিয়ন বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়নি। প্রতিবছর জলোচ্ছ্বাসে  নদী ভাঙে। কিন্তু পাউবো তা যেনতেনভাবে জিওব্যাগ দিয়ে সংস্কার করে। বছর না ঘুরতেই নদীতে আবার বিলীন হয়। যে কারণে এখানকার মানুষের অর্থসম্পদ পদে পদে বিনষ্ট হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। 

এ ব্যাপারে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন,ঘুর্নীঝড় রেমাল এর তান্ডবে মোরেলগঞ্জে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে,সরকারের পক্ষ থেকে সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কয়েকটি প্রকল্প গ্রহন করা হতে পারে,তবে এতে সময়ের ব্যাপার।

একুশে সংবাদ/ফা হো/এস কে 

 


 

 

Link copied!