মোগো এই ভোগান্তির শেষ হবে কবে ভালো ব্রিজটা ভাইঙ্গা, নতুন ব্রিজ করার লাইগা ৫ বছর ধইরা হালায় থুইছে, দিছিলে একটা চার বন্যায় হেডাও ভাইঙ্গা গেছে এখন ছোটকালের মতো আবার নৌকায় পার হইতে হয়। মোগোই দুর্ভোগ যে কবে শেষ হবে আক্ষেপ করে এ কথা বলছিলেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ আঃ সোরাফ হাওলাদার।
পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার ৫ নং শিয়ালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ৯ গ্রামের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম জন গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি নির্মাণ কাজ দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে ফেলে রেখেছে। চলাচলের জন্য ঠিকাদার ও স্থানীয় জনগণ একটি সাঁকো দিয়ে এতদিন পারাপার করলেও ঘূর্ণিঝড় রুমেলের আঘাতে সে সাঁকোটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ায়। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এই এলাকার দুই পাড়ের প্রায় ২২ হাজার মানুষ।
জনগুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় রয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, এনজিও, জোলাগতি মুসলিম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয, জোলাগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফলোইবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জোলাগাতি ফাজিল মাদ্রাসা, সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
খালের দুই পাড়ে নয়টি গ্রামের মানুষ এই ব্রিজ ব্যবহার করে।শিয়ালকাঠি, জোলাগাতি, ফলোইবুনিয়া, শাপলাজা, শংকরপুর, পাংগাসিয়া, পার্শ্ববর্তী ভান্ডারিয়ার ভিটাবাড়িয়া, রাজাপুরের একটি অংশের মানুষের একমাত্র চলাচলের মাধ্যমে এই সেতুটি নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার পরে তারা সাঁকো দিয়ে পারাপার করতো। ঘূর্ণিঝড়ের সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় এতদিন ১৫ দিন ধরে এসব গ্রামের মানুষের চলাচলের এই মাধ্যমটি বন্ধ থাকায় প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার ঘুরে তাদের চলাচল করতে হয়েছে। ঠিকাদার একটি খেয়ার ব্যবস্থা করে দিলেও টাকা না দেওয়ায় গত দুইদিন পর বন্ধ হয়ে গেলে স্থানীয় লোকজন আবার একটি নৌকায় এনে খেয়া পারাপারের ব্যবস্থা করে চলাচল করছে এখন তাদের এই ঝুঁকিপূর্ণ খেয়ায় তাদের একমাত্র ভরসা।
জানাগেছে, উপজেলার শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের শিয়ালকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পাঙ্গাশিয়া খালের উপর প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় আরসিসি গার্ডার সেতুটি পাঁচ বছর আগে সেতুর কার্যাদেশ পেয়ে দুই বছরের অধিক সময় ধরে সেতুটি ভেঙে নির্মাণ কাজ শুরু করলেও ১০% নির্মাণ কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর ৫ কোটি ৭৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩৭ মিটার আরসি গাডার ব্রিজের টেন্ডার হয়। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে এক বছরের চুক্তিতে নির্মাণ কাজটি শেষ করার কথা থাকলেও দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি করে পাঁচ বছরেও কাজটি শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য খালের উপর থাকা পূর্বের লোহার সেতুটি অপসারণ করে নতুন সেতু নির্মাণ করার জন্য পাইলিং এর কাজ শেষ করে ফেলে রাখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। যার ফলে স্থানীয় মানুষের চলাচলে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।
সরজমিনে গেলে শতশত এলাকাবাসী এসময় ক্ষোভের সাথে বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রী, অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ ও সাধারণ মানুষের যাতায়াতের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই সেতুটি। বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খালটি মাঝির নৌকায় করে যাতায়াত করতে হচ্ছে, ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এই পারাপারে অনেকে দুর্ঘটনার করলেও পড়েছেন। স্থানীয়রা বলেন দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা না করলে খালের ভিতরে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা সহ প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
ইউপি সদস্য রুবেল জানান, ‘এখানে একটি ভালো ব্রিজ ছিল, নতুন ঢালাই ব্রিজ করার জন্য বছরের পর বছর ধরে ভেঙে রেখেছে। আমাদের এখানে জন গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখান থেকে প্রতিদিন এই কমপক্ষে ৫হাজার লোক যাতায়াত করে। যাতায়াতে অনেক ভোগান্তি প্রতিদিনই দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ে যায় মহিলারা পড়ে যায় নৌকা থেকে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ দ্রুত এই ব্রিজটি নির্মাণের যেন ব্যবস্থা করে দেয়।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য বাদল জানান, ‘যাতায়াতের জন্য এই নৌকার ব্যবস্থা শিয়ালকাঠি কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে আমরা করেছি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়নি।’
স্থানীয় তরুণ সমাজসেবক রাসেল রাঢ়ী জানান, খালের দুই পাড়ের জনগণসহ হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তি শিকার হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নুরুল আমিন মাঝে মাঝে সেতুর নির্মাণ কাজ করেন আবার বন্ধ করে দেন। যার ফলে এলাকার মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই, কবে এই সেতুর নির্মাণে কাজ শেষ হবে তা ঠিকাদারি ভালো জানেন। ইতিমধ্যে আমরা এ বিষয়ে বহুবার মানববন্ধন প্রতিবাদ করেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। জোলাগাতি মুসলিম আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুস্তম আলী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখন এই মাঝির নৌকায় পারাপার করায় জীবনের ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে ,এ নিয়ে আমরা এখন চিন্তিত।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মোঃ নুরুল আমিন বলেন, ‘আমরা শীঘ্রই সেতুটি নির্মাণ করে ফেলব আমাদের কাজ চলমান রয়েছে।’
শিয়ালকাঠী ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এই সেতুটি ইউনিয়নের অতি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। সেতুটি নির্মাণে বিলম্ব হওয়ার কারণে এলাকাবাসীর খুবই সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আমরা বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও কাজটি শেষ করছে না।’
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী ইমতিয়াজ হোসাইন রাসেল বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :