নাটোরের গুরুদাসপুরের লিবিয়া প্রবাসী চার যুবককে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করেছে ওই দেশের আইনশৃঙ্গলা বাহিনীর সদস্যরা। এর আগে, অমানুষিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে তাদের পরিবারের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। লিবিয়ায় শ্রমিক হিসাবে বিভিন্ন কাজে কর্মরত ছিল তারা। গত ৭ দিন ধরে মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি যুবকদের পরিবারের কাছে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠাচ্ছিল অপহরণকারীরা।
আজ রোববার (৯ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় লিবিয়া প্রবাসী সোহান মুক্ত হয়ে পরিবারের কাছে সেই ভিডিও বার্তা পৌঁছে দেন। সোহানসহ নাটোরের গুরুদাসপুরের বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামের নাজিম, সাগর ও বিদ্যুৎকেও নির্যাতন করে সেই ভিডিও তাদের পরিবারের সদস্যদের পাঠিয়ে জন প্রতি ১০ লাখ টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা দাবি করেছিল অপহরণকারীরা।
স্থানীয় সময় শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় লিবিয়ার আইনশৃঙ্গলা বাহিনীর সদস্যরা চারজনকে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করে তাদের হেফাজতে নেন। সেইসঙ্গে আটক করেন দুই বাংলাদেশি ও দুই লিবিয়ানসহ চারজন অপহরণকারীকে। চার যুবক মুক্ত হওয়ার সংবাদে নাটোরের বসবাসরত তাদের স্বজনদের মাঝে বইছে আনন্দেও বন্যা।
প্রবাসী বিদ্যুৎ-এর মা বিউটি বেগম জানান, ‘তার স্বামী অনেক আগে থেকেই লিবিয়ায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। পরবর্তীতে তার ছেলেসহ প্রতিবেশী আরো তিন যুবক একসঙ্গে লিবিয়ায় যান শ্রমিক হিসাবে। তার ছেলেও অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। অপহরণ হওয়ার পর থেকেই পরিবার ও স্বজনদের আহাজারি থামছিল না। রোববার সকাল সাড়ে ১১টার সময় তার স্বামী তাকে কল করে জানায় তার ছেলেসহ চারজনকেই লিবিয়ার স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার করেছে। রাতের মধ্যেই তার স্বামীর কাছে হয়তো ফিরে যাবে তার সন্তানসহ প্রতিবেশীদের সন্তানরাও। ’
সোহানের মা রুলি বেগম জানান, তার সন্তান মুক্ত হয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছে। এতে তিনি আনন্দিত। গণমাধ্যমকর্মী ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
গুরুদাসপুর থানার ওসি উজ্জল হোসেন জানান, ‘ঘটনার পর থেকেই তিনি এ বিষয়ে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছিলেন। নাটোর পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলামের নির্দেশে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পরিবারগুলোর সঙ্গে থানা পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছে। ’
উল্লেখ্য, প্রায় দুই বছর আগে বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামের মো. শাজাহান প্রামাণিকের ছেলে মো. সোহান প্রাং (২০), মো. তয়জাল শেখের ছেলে মো. সাগর হোসেন (২৪), ও ইনামুল ইসলামের ছেলে মো. বিদ্যুৎ হোসেন (২৬) লিবিয়াতে কাজের জন্য যান। আর মৃত-শুকুর আলীর ছেলে নাজিম আলী (৩২) লিবিয়ান যান দুই মাস আগে।
গত ২ জুন লিবিয়া থেকে ওই চার প্রবাসীর পরিবারের ‘ইমু’ নম্বরে মোবাইল ফোনে কল আসে। রিসিভ করতেই বলা হয় চারজন যুবককে তারা অপহরণ করেছেন। যারা অপহরণ করেছেন তারাও বাঙালি। তবে তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ না দেওয়া হলে তাদেরকে মেরে ফেলা হবে। এমন খবরে পরিবারের সদস্যরা স্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকেই ‘ইমু’ নম্বরে জিম্মি যুবকদের শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হয়। টাকা দিতে না পারলে নির্যাতনের মাত্রা প্রতিদিন বাড়তে থাকবে বলেও জানায় অপহরণকারীরা।
একুশে সংবাদ/ন.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :