- কাঁঠালের বাম্পার ফলন
- কাঁঠাল পাকে মূলত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে
- কাঁঠাল বিক্রি করে সারা বছরের আয় কৃষকের
- কাঁঠাল রপ্তানি হয় বিদেশে
গাজীপুরকে কাঁঠালের রাজ্যে বলা হলেও ময়মনসিংহ জেলার বেশ কিছু উপজেলায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়। এদের মধ্যে অন্যতম গফরগাঁও উপজেলা। গফরগাঁও উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের সবখানে মূলত ব্যাপক আকারে এই কাঁঠাল পাওয়া যায়। এ অঞ্চলের কাঁঠাল অত্যন্ত সুস্বাদু ও উন্নত জাতের।
এ অঞ্চলের কাঁঠাল পাকে মূলত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে। এসব এলাকার চাষিদের আশা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি না হলে এবার কাঁঠালের বাম্পার ফলন হবে। এখানকার কাঁঠাল দেশের চাহিদা পূরণের করে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।
এ অঞ্চলের কাঠাল গাছগুলোর গোড়া থেকে মগডালে শোভা পাচ্ছে কাঁঠাল।
এ বছর উপজেলার প্রতিটি গাছে গোড়া থেকে মগডাল পর্যন্ত কাঁঠালে ভরে গেছে। এখানকার কাঠাল পাকতে শুরু করেছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে কাঁঠাল পাকতে শুরু করবে পুরোদমে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে ও তার আশেপাশে সবখানে এখন কাঁঠাল গাছগুলোতে ঝুলন্ত কাঁঠালে ছেঁয়ে আছে। কোনো কোনো আগাম জাতের কাঁঠাল পাকতে শুরু করেছে এবং কৃষক এ কাঠাল বিক্রি করতে শুরু করেছে। পাকা কাঁঠালের মিষ্টি গন্ধে কীট-পতঙ্গরা ভিড় করছে গাছে গাছে। এই উপজেলায় কাঁঠালের বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম দত্তের বাজার, কান্দাপাড়া বাজার, মশাখালী, গফরগাঁও পৌর-বাজারসহ একালাকার প্রায় হাটেই কম-বেশি কাঠাল বিক্রয় হয়ে থাকে।
রাজধানী ঢাকার পাইকারি কাঁঠাল বিক্রেতা রবিউল ইসলাম জানান, তিনি প্রতিবছর গফরগাঁয়ে কাঁঠাল কিনতে আসেন। কাঁঠালের যখন দুই থেকে তিন মাস বয়স হয়, তখন থেকেই পুরা গাছসহ কাঁঠাল কিনেন তিনি। প্রথম চাষীদেরকে জামানত হিসেবে ৫০% টাকা পরিশোধ করে- কাঁঠাল কাটার সময় বাকিটা পরিশোধ করে কাঁঠাল নিয়ে যান রাজধানী ঢাকায়। এতে তার ভালই লাভ হয়।
দত্তের বাজার কন্যামণ্ডল গ্রামের আবুল হোসেন বলেন,
‘আমার ৩০টি কাঁঠাল গাছে প্রচুর কাঁঠাল ধরেছে। তিনি এবার ২ লাক্ষ ৫০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি হবে বলে ধারণা করছি। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম থাকায় কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। কিছুদিন আগে প্রচুর গরম থাকার কারণে কাঁঠাল নিয়ে সংখ্যায় ছিলাম। এখন গরম কিছুটা কম, বৃষ্টি হচ্ছে, তাই কাঁঠালের চাহিদাও বেড়েছে স্থানীয় পর্যায়ে। তাই আশা করছি যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পূরণ হবে।`
গফরগাঁও উপজেলার মাইজবাড়ি ইউনিয়নের হারিস উদ্দিন শেখ জানান,
‘আমাদের কাঁঠাল দেশের চাহিদা পূরণের পরে বিদেশে রপ্তানি করা হয় প্রতিবছর। তার বাড়ির আশেপাশে নিজের ১৮ থেকে ২০টি কাঁঠাল গাছ আছে। তার গাছে প্রচুর কাঁঠাল ধরেছে। এ বছর তার কাঁঠাল বিক্রির আশা ১ থেকে দেড়লক্ষ টাকা।’
এদিকে এখানকার অধিকাংশ কাঁঠাল গাছগুলো বাগানভিত্তিক না হলেও বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার দুই ধারে। এসব গাছে ঝুলে থাকা কাঁঠলের দৃশ্য অনেকের নজর কাড়ে। অন্যান্য ফল ও গাছ নিয়ে সরকারি- বেসরকারি পর্যায়ে যত তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় কাঁঠাল নিয়ে তার সিকি ভাগও হয় না। কোনো কোনো পরিবার ফল মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি করে সারাবছরের আয় করে। দুই থেকে তিন মাস কাঁঠালের ভরা মৌসুম। এসময় পাইকার ও শ্রমিক শ্রেণির লোকদের বাড়তি আয়ের সুযোগ হয়। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭/৮টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, গাছে-গাছে কাঁঠলে ভরে গেছে। প্রতিটি গাছে ১০০ থেকে ১৫০টির বেশির পর্যন্ত ফল ধরেছে। তবে এ এলাকায় কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা তাদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অত্র এলাকায় একটি কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত ব্যবস্থা গড়ে তুললে এ উপজেলার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন,
`আমাদের এই অঞ্চলের কাঁঠাল অত্যন্ত মানসম্মত, সুমিষ্ট। এলাকায় প্রচুর কাঁঠাল উৎপাদন হয়। কিন্তু প্রক্রিয়াজাতের অভাবে কৃষক কিছুটা নিরাশ, তবে কৃষকের অভিযোগ এই এলাকায় একটি কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা যদি করা যেত, তাহলে তারা ন্যায্যমূল্য পেত। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করছি, আগামীতে এরকম একটি প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা করা যায়।’
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :