জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। কিন্তু নানা সমস্যায় জর্জরিত এই হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। বর্তমানে কালাই উপজেলাসহ সারাদেশে বিদ্যুৎয়ের মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কিন্তু বিদ্যুৎ এর বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও সেটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ এর এই চরম মাত্রার লোডশেডিংয়ের সময়েও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে তেলের কোনো বরাদ্দ না থাকায় জেনারেটরটি অকেজো হয়ে আছে। বিকল্প হিসাবে আইপিএস দিয়ে কিছুটা বিদ্যুতের অভাব পূরণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। আইপিএস দিয়ে শুধু প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে টিউবলাইট জ্বালানো গেলেও ফ্যান চালানো যাচ্ছে না। এতে শিশু,প্রসূতি মা,শ্বাসকষ্ট আর হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। প্রচন্ড গরমে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারা। এছাড়াও রয়েছে মশার উপদ্রব। রোগী ও রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনদের কষ্ট বেশি হচ্ছে।
গত সোমবার রাতে সরজমিনে হাসপাতালে দেখা যায়, লোডশেডিংয়ের কারণে সেখানে বিদ্যুৎ নেই। পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে আইপিএস দিয়ে মাত্র একটি করে টিউবলাইট জ্বলছে। কয়েকজন রোগী জানান, রিমেল ঝড়ের পর থেকে প্রায়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। আইপিএসের কম আলোতে কিছুই স্পষ্ট দেখা যায় না।অন্ধকার, গরম ও মশার হাত থেকে বাঁচতে মোমবাতি, হাতপাখা ও মশার কয়েলের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে তাদের। আবার আইপিএসের চার্জ শেষ হলে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। তখন রোগীর স্বজনরা মোবাইলের লাইট ধরে কেউ হাঁটাহাঁটি করছেন। কেউ অন্ধকারে আলোর অভাবে বসে রয়েছেন। কেউ কেউ মোবাইলের আলো অথবা চার্জার লাইট জ্বালিয়ে রেখেছেন। ফ্যান না চলায় তীব্র গরমে রোগীরা অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছেন। রোগীর স্বজনদের হাতে থাকা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। আলো ও বাতাস না থাকার কারণে মশার উপদ্রবও তখন বেড়ে যায়। তাদের বাধ্য হয়ে হাতপাখা, মোম ও কয়েল ব্যবহার করতে হচ্ছে। অনেক রোগী আলোর অভাবে ঠিকমত খাওয়া-
দাওয়াও করতে পারেন না। সেবীকারাও আলোর অভাবে রোগীদের সেবা দিতে পারেন না।পুরো হাসপাতালে তখন যেন এক শুনশান পরিবেশ সৃষ্টি হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কেবলমাত্র আইপিএসের ব্যবস্থা থাকায় সেখানে আলো ও ফ্যান চলছে।
পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগী কালাই মন্সিপাড়া গ্রামের জয়নাল হক ও মাদারপুর গ্রামের বিজয় মালি বলেন,হাঁপানি ও আমাশয় রোগ নিয়ে আমরা দুইদিন ধরে ভর্তি রয়েছি। এখানে জেনারেটরের কোনো ব্যবস্থা নেই। দিনের বেলা বিদ্যুৎ চলে গেলে ফ্যান চলে না, রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো হাসপাতাল অন্ধকার হয়ে থাকে। দিনের বেলাতেও গরমে কষ্ট, রাতেও বিদ্যুৎ না থাকলে বেশি কষ্ট হয়। ফ্যান চলে না, শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। এ সময়টায় আমরা খুবই কষ্টে থাকি।
মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগী শিকটা গ্রামের মজিদা বেগম বলেন,রাতে বিদ্যুৎ না থাকলে হাসপাতাল অন্ধকার হয়ে যায়। মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়। ফ্যান চলে না, হাতপাখা দিয়ে বাতাস নিতে হয়। হাসপাতালের মতো একটি জায়গায় দীর্ঘদিন থেকে জেনারেটর নষ্ট এটা মেনে নেওয়া যায় না।
নার্স সুপার মাসুদা বেগম জানান, বিদ্যুতের অভাবে রোগীদের মতোই তাদের দশা হয়। সেসময় তারা রোগীদের কোনো সেবা দিতে পারেন না।বিদ্যুৎ চলে গেলে যেন অন্য উপায়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয় সেবিষয়ে আরএমওকে অনুরোধ জানিয়েছি। কত বছর ধরে যে জেনারেটর নেই নিশ্চিত করে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.ফয়সল নাহিদ বলেন,জেনারেটরটি চালাতে প্রতি ঘণ্টায় ১৩ লিটার ডিজেল প্রয়োজন। কিন্তু সরকারিভাবে তেলের বরাদ্দ না থাকায় জেনারেটরটি বন্ধ রাখতে হয়েছে। এমনকি এটি চালানোর জন্য লোকবলও নেই। আইপিএসের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।দুই-এক মাসের মধ্যে আইপিএস এর বরাদ্দ পাওয়া যাবে। এতে বিদ্যুতের ঘাটতি কিছুটা লাঘব হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :