গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রবাস ফেরত যুবক মিজানুর রহমানকে (৩২) কুপিয়ে হত্যার চেষ্টার মামলার ১০ দিন পরও কোনো আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এতে ক্ষুব্ধ ওই যুবকের পরিবার ও এলাকাবাসী। পুলিশ বলছে ঘটনার পর থেকে আসামীরা পলাতক রয়েছে। রবিবার (১৬ জুন) সকাল ৮টায় আসামীরা তাদের বাড়ীতে এসে মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। অন্যথায় বাড়ীর অন্যান্য সদস্যদেরকেও তার মতো কুপিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে ওই যুবকের বাড়ীতে গেলে ভিকটিম ও তার পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের কাছে এসব আিভযোগ করেন।
মিজানুর রহমান শ্রীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের জিওসী (বিন্দুবাড়ী উত্তরপাড়া) গ্রামের আব্দুল বাতেনের ছেলে। সে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাসে (সৌদী) থেকে তিন মাস পূর্বে ছুটিতে বাড়ীতে আসেন। মঙ্গলবার (১১ জুন) রাত ১০ টায় ওই গ্রামের জিওসী মোড়ের দোকান থেকে চার পান করে বাড়ী ফিরছিলেন। বাড়ীর আধা কিলো মিটার দূরে থাকা অবস্থায় আসামীরা মিজানকে মাথায়, পিঠে ও ঘাড়সহ শরীরের একাধিক স্থানে কুপিয়ে সড়কের পাশে ফেলে রাখে।
কুপিয়ে হত্যার ঘটনার পরদিন মিজানের বাবা আব্দুল বাতেন বাদী হয়ে একই গ্রামের তিনজনকে আসামী করে হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করে।
মামলার আসামীরা হলেন একই গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে নূরুজ্জামান (৩০), মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে নূরুল ইসলাম (৫২) এবং আক্কাস আলীর ছেলে আজিজসহ (৩০)অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এলাকাবাসী জানান, তাদের মধ্যে প্রধান আসামী নূরুজ্জামান এলাকার উশৃঙ্খল এবং দুষ্টু প্রকৃতির ছেলে। সে এর আগেও ভিকটিমের ষাটোর্ধ্ব বাবাকে দিনে দুপুরে পিটিয়ে আহত করে।
ভিকটিমের বড় ভাই সিএনজি চালক হাবিবুর রহমান (৪০) জানান, একটি ভুল তথ্য পেয়ে মিজানের প্রতি ক্ষুব্দ ছিলেন প্রধান আসামী নূরুজ্জামান। এরপর থেকে মিজান দেশে আসলে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে সে। ঘটনার দিন মঙ্গলবার (১১ জুন) রাত ১০ টায় ওই গ্রামের জিওসী মোড়ের দোকান থেকে চা পান করে বাড়ী ফিরছিলেন মিজান। ফেরার পথে বাড়ীর আধা কিলো মিটার দূরে থাকা অবস্থায় আসামীরা মিজানের পথরোধ করে তার মাথায়, পিঠে ও ঘাড়সহ শরীরের একাধিক স্থানে কুপিয়ে সড়কের পাশে ফেলে রাখে। এসময় ভিকটিমের চাচাতো ভাই গার্মেন্টস কর্মী শামীম অফিস ছুটি হলে তার স্ত্রীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়ী ফিরছিলেন। মোটরসাইকেলের লাইট দেখে আসামীরা মিজানের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে শামীম মিজানের গোংরানোর শব্দ পেয়ে তাকে সড়কের পাশ থেকে উঠানোর চেষ্টা করে। এসময় শামীমের স্ত্রী চিৎকার দিয়ে দৌড়ে বাড়ীতে গিয়ে মিজানের স্বজনদের জানালে তারা এসে মুমুর্ষ অবস্থায় মিজানকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই হাসাপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাদেরকে ঢাকা মেেিডকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। ওই হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেল ৩ টায় স্বজনেরা তাকে বাড়ীতে নিয়ে আসে।
এলাকাবাসীসহ বাদী ও ভিকটিমের পরিবারের লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এমন একটি ঘটনার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কোনো আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আসামীরা মাঝে মধ্যে বাড়ীতে আসলেও পুলিশ বলছে তাদেরকে পাচ্ছে না। রবিবার (১৬ জুন) সকাল ৮টায় আসামীরা ভিকটিমের বাড়ীতে এসে মামলা প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। অন্যথায় বাড়ীর অন্যান্য সদস্যদেরকেও তার মতো কুপিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। হুমকির ঘটনায় ভিকটিমের বড় ভাই হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে রবিবার (১৬ জুন) শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নং-৯০৫ করেন। প্রযুক্তির যুগেও আসামীদের গ্রেফতার না করায় ভিকটিম ও তার পরিবারের সদস্যরা আসামীদের অব্যাহত হুমকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন পার করছে।
অভিযুক্ত নুরুজ্জামানের মোবাইলে (০১৯২০-৬২৩২৫৯) একাধিকবার ফোন দিলেও বন্ধ পাওয়ায় এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুর রহমান জানান, প্রবাস ফেরত যুবক মিজানুর রহমানকে হত্যা চেষ্টার মামলায় আসামীরা কেউ বাড়ীতে নাই। ঘটনার পর থেকে সবাই পলাতক রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব আসীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :