বরগুনার আমতলীতে সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে ৯ বরযাত্রী নিহত হয়েছেন। ৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও এখনো ৩ জন নিখোঁজ রয়েছে।
শনিবার (২২ জুন) দুপুরে আমতলী উপজেলার ৫নং চওয়া ইউনিয়ন এবং ৪নং হলদিয়া ইউনিয়নের মাঝামাঝি হলদিয়া ব্রিজ ভেঙে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন- শিবচর মাদরীপুরের মুনী বেগম (৪০), তার ছোট মেয়ে তাহিয়া (৭), বড় মেয়ে তাসফিয়া (১১), একই এলাকার ফরিদা বেগম (৫৫), রাইতি (৩০), ফাতেমা আক্তার (৪০), রুবী বেগম (৪০), হলদিয়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের মেয়ে হৃদি (৫),তার মা জাকিয়া বেগম (৩০)।
জীবিত উদ্ধার হওয়া ৪জন হলেন- মাহবুব খান, সোহেল খান, সুমা আক্তার ও দীশা আক্তার তারা সবাই শরিয়তপুরের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা বলেন, শুক্রবার দুপুরে ভাগ্নির বিয়ে অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে ১৭জন যাত্রী নিয়ে শনিবার দুপুরে ছেলের বাড়িতে আসার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সবাই নারী এবং শিশু। বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণ হানির ঘটনায় এলাকা জুরে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতের ৯জনের মধ্যে ৭জন শিবচর মাদরীপুরের বাসিন্দা এবং ২জন স্থানীয় গুরুদল গ্রামের।
জানা গেছে, দুপুরে হলদিয়া ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ দিয়ে একটি মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা পার হওয়ার সময় ব্রিজ ভেঙে খালে পড়ে যায়। এ সময় অটোরিকশার যাত্রীরা বের হয়ে এলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা বের হতে পারেনি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্থানীয় লোকজন ও পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়েছেন।
জীবিত উদ্ধার হওয়া মাহবুব খান বলেন, শুক্রবার আমরা ভাগ্নি হুমায়রা বেগমের বাড়ি হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামে যাই। সেখান থেকে একটি হাইএক্স মাইক্রো যোগে আজ শনিবার দুপুর ১টার সময় ভাগ্নি জামাইর আমতলীর বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রওয়ানা করি। দুপুর দেড় টার সময় হলদিয়া বাজার সংলগ্ন একটি লোহার সেতু পার হওয়ার সময় হাইএক্স মাইক্রোটি মাঝ বরাবর আসার পর আকস্মিক সেতুটির ২০
ফুট ধরে ধসে হাইএক্স মাইক্রোসহ কচুরি পানায় ভর্তি খালে পরে যায়।
এরপর আর কিছুই বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। আল্লায় মোগো বাচাইলেও সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে।
আরেক জীবিত মাহবুব খান বলেন, ৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে ৭জন আমাদের শিবচর মাদরীপুরের সবাই স্বজন। অন্য দুজন আমতলীর তারাও
আমাদের অত্মীয়। সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে এর চাইতে আমাদেরও মইর্যা যাওয়া ভালো ছিল।
স্থাণীয় হলদিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য সাইফ’ল ইসলাম সোহেল বলেন, সেতু ভেঙ্গে মাইক্রোটি খালে পরে যাওয়ার পর আমরা খবর পেয়ে দ্রুত উদ্ধার
কাজে নেমে পরি। ৪ জনকে জীবত উদ্ধার করা গলেও ৯জনের সলিল সমাধি ঘটে। এত বড় দুর্ঘটনা এবং এতগুলো লাশ আমার জীবনেও আমি আর
দেখি নাই।
দুর্ঘটনার পর খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। আবহাওয়া এবং মুশলধারে বৃষ্টির কারনে উদ্ধার কাজ কিছুটা বিলম্ব হয়।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু জানান, হলদিয়া এলাকায় একটি ব্রিজ ভেঙে বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাস খালে পড়ে যায়। এ সময় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। এখন পর্যন্ত ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
একুশে সংবাদ/চ.ট.প্র/জাহা
আপনার মতামত লিখুন :