বৃষ্টি না হওয়ায় ও পাহাড়ি ঢলের পানি কম আসায় সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি হ্রাস পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়ে উচুঁ স্থান থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
ফলে শহরের কালীপুর, পূর্ব নতুনপাড়া, পশ্চিম নতুনপাড়া, বাধঁনপাড়া, বড়পাড়াসহ ১২ উপজেলার নীচু এলাকা হতে ধীরগতিতে পানি নামতে শুরু করায় চরম র্দূভোগে রয়েছেন প্রায় ৯ লাখ পানিবন্দী মানুষ।
এখনো ওই সমস্ত নীচু এলাকার রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি থেকে ধীরগতিতে পানি নামতে শুরু করায় পানিবাহিত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত সোমবার (২৪ জুন) সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘরস্থ সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৩৯ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ছাতক উপজেলায় সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার এখনো ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং গত ২৪ ঘন্টায় ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এখনও বন্যার দুর্ভোগে আছেন জেলার ২১ উপজেলার প্রায় ৯ লাখ মানুষ।
এদিকে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ও বগুলা ইউনিয়নের খাসিয়ামারা ও চেলাই নদীর বাধঁ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক মানুষ ও ছাতক শহর ও আশপাশের গ্রামে পানি প্রবেশ করে আরো লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এছাড়াও তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, শান্তিগঞ্জ, দিরাই শাল্লা, জগন্নাথপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার নিম্ন্ধাসঢ়;রাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে পুরো জেলায় মোট ৯ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পানি নিম্নাঞ্চল থেকে কমতে শুরু করলেও ধীরগতিতে
পানি নামতে শুরু করায় জনর্দূভোগের যেন শেষ নেই। সবারই প্রত্যাশা আগামী হেমন্তের মৌসুমে যেকোনভাবেই হোক এই জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, বৌলাই, চলতি, যাদুকাটা, কালনীসহ ১ উপজেলার ছোটবড় ১৩৭টি হাওর খনন অতিব জরুরী।
কেননা এই সমস্ত হাওর ও নদীগুলোতে পলি জমে হাওর ও নদীর নব্যতা কমে গেছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতে জেলায় বন্যা দেখা দেয়।
এদিকে উচুঁ এলাকায় পানি কমতে শুরু করলেও নীচু এলাকায় হানা দিচ্ছে মানুষজনের বসতবাড়িতে। গত ২দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলায় সাধারন মানুষের মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে শনিবার রাত পর্যন্ত বন্যায় জেলার ৩টি পৌরসভা, ৮৮ ইউনিয়নের ১৩০৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল। প্রায় ৯ লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়েছে। ৬৯৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এখনো বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ১৩ হাজার ৬৪৯ মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন।
জেলা সদরসহ ১২ উপজেলায় সরকারের তরফ থেকে জি আর ক্যাশ হিসেবে ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকা, শিশু খাদ্য বাবত ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, গোখাদ্য বাবত ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, শুকনো খাবার বাবত ৫ হাজার প্যাকেট এবং জিআরের চাল ১০৪৯.৫০০ মেট্রিকটন বরাদ্দকৃত চাল বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় সুরমা নদীর পানি হ্রাস পেয়েছে। তবে আপাতত বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা নেই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, জেলায় ৬৯৪ আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তাদের খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বন্যার্তাদের স্বাস্থ্যসেবায় ৯৯ টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
একুশে সংবাদ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :