কলেজের ফটক থেকে অজ্ঞান করে তুলে নেওয়া হয় মেয়েটিকে (১৮)। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে ধারণ করা হয় আপত্তিকর ভিডিও। সেই ভিডিও পাঠানো হয় মেয়ের ভাইয়ের কাছে। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বিয়ের। এতে রাজি না হওয়ায় এখন সেই ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
মেয়েটির সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তিনি। পরিবারের অন্যরাও বিপর্যস্ত। কেউ কেউ বলছে বিষয়টি মিটমাট করে ফেলতে। কিন্তু মেয়ে ও তাঁর বাবা এতে রাজি নন। তাই গতকাল রোববার রাতে থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছেন। ঘটনার বর্ণনাসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
পুলিশ বিষয়টি জানার পর মূল অভিযুক্তসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের ধরার চেষ্টা করছে। পুলিশ বলছে, একটা ভিডিও ক্লিপ আছে। ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মেয়েটি ও তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার একটি গ্রামে তাঁদের বাড়ি। আর্থিকভাবে পরিবারটি অসচ্ছল। বাবা কৃষক। মেয়েটির বড় আরও দুই ভাই আছেন। বড় ভাই মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে থাকেন। ছোট ভাই বাড়িতে কৃষিকাজ করেন। এসএসসি পাস করার পর শহরের একটি কলেজে ভর্তি হন মেয়েটি। শহরে তাঁর চাচার বাসায় থেকে লেখাপড়া করছেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মেয়েটি জানান, মাস দুয়েক আগে থেকে একটি ছেলে (২৫) কলেজে যাওয়া-আসার পথে তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করেন। বিভিন্ন সময় ফোন করেন। রাস্তায়, কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। কিন্তু মেয়েটি তাঁকে চেনেন না বলে কথা বলতেন না। ছেলেটি প্রায় সময় কলেজের আশপাশে থেকে তাঁর দিকে নজর রাখতেন। কিন্তু মেয়েটি তাঁকে এড়িয়ে যেতেন।
৯ জুন মেয়েটি কলেজে ব্যবহারিক একটি ক্লাসে যান। কলেজে ওই দিন শিক্ষার্থী কম ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি ক্লাস সেরে কলেজ থেকে বের হয়ে প্রধান ফটকের সামনে দাঁড়ান। বাসায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশার অপেক্ষা করছিলেন। মিনিট দুয়েক পর একটি অটোরিকশা এগিয়ে আসে। সেটির সামনে চালকের বাঁ পাশে আরেকজন যাত্রী ছিলেন। চালক তাঁকে যাবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি হ্যাঁ বলেন। এরপর পেছনের খালি আসনে একা বসেন। অটোরিকশাটি একটু সামনে গিয়েই আবার থামে। তখন তাঁর দুই পাশে আরও দুজন লোক দ্রুত উঠে যান। এই দুজনের মধ্যে ডান দিকে তাঁকে উত্ত্যক্তকারী ওই যুবককে দেখেই তিনি অটোরিকশা থামাতে বলেন এবং নামতে চেষ্টা করেন। তখনই চালক দ্রুত অটোরিকশা চালান এবং সঙ্গে সঙ্গে দুই পাশে থাকা দুজন তাঁর নাকেমুখে কী একটা স্প্রে করেন। এরপর তিনি আর কিছু বুঝতে পারেননি।
মেয়েটি আরও জানান, একপর্যায়ে তাঁর চেতনা ফিরলে তিনি বুঝতে পারেন, অটোরিকশায় আছেন। কয়েক মিনিট পরই আবার কলেজের ফটকে এসে অটোরিকশা থামে। তাঁকে নামিয়ে দিয়ে ওই যুবক কাউকে কোনো কিছু না বলতে সতর্ক করে দেন এবং বলেন, ‘তোর কিন্তু ভিডিও আছে, কোনো কিছু কইলে ভিডিও ফেসবুকে ছাইড়া দিলাইমু।’ এরপর তিনি একটি ইজিবাইকে করে বাসায় এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুধু ঘুম পাচ্ছিল তাঁর। কোনো কিছুই মনে করতে পারছিলেন না। দুই দিন শুধু ঘুমিয়েছেন। বিষয়টি তাঁর বাবাকে জানালে ১২ জুন তিনি এসে মেয়েকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যান। বাড়ি গিয়ে বাবাকে ঘটনা বিস্তারিত খুলে বলেন তিনি।
পরে পাশের গ্রামের দুই ব্যক্তি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ওই যুবকের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়। দুই ব্যক্তির একজন ঈদের দিন ১৭ জুন বিকেলে আসেন। তিনি এসে মেয়েটিকে জানান, ওই যুবক (উত্ত্যক্তকারী) বলেছেন বিয়েতে রাজি হলে তাঁর কাছে থাকা ভিডিও এবং ছবি মুছে ফেলবেন। মেয়েটি বলেন, উত্ত্যক্তকারী যুবক ছাড়া অন্য কাউকে তিনি চেনেন না। তাঁকে তুলে নেওয়া এবং আবার কলেজের ফটকে নামিয়ে দেওয়ার মাঝখানে তাঁর সঙ্গে কী ঘটেছে, তিনি কিছুই বুঝতে পারেননি। এরপর কয়েক দিন একটা ঘোরের মধ্যে কেটেছে। শুধু ঘুম পেত। মেয়েটির বাবা বলেন, ‘পরে খোঁজ নিয়ে দেখি ওই ছেলের বাড়ি শহরে নয়, জেলার অন্য একটি উপজেলায়। সে একটা চরম বখাটে। কোনো লেখাপড়া নাই। ওই ছেলেসহ যারা এই ঘটনায় জড়িত, আমি সবার শাস্তি চাই।
একুশে সংবাদ/প্র.আ/হা.কা
আপনার মতামত লিখুন :