বর্ষার জোয়ারের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে পদ্মা নদী উত্তাল হয়ে উঠেছে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের দুর্গম চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকায় ফের দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে নতুন করে নদী ভাঙন আতংকে রয়েছে চরাঞ্চলসহ পদ্মা পাড়ের কয়েক হাজার মানুষ। ঢেউয়ের তোড়ে নদীভাঙন রোধে ফেলা জিও ব্যাগগুলো সরে যাচ্ছে।
জানা যায়, প্রায় পঞ্চাশ দশক থেকে অনবদ্য পদ্মার ভাঙনে এ উপজেলার আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ তিনটি ইউনিয়ন সম্পূর্ণরূপে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সত্তর দশকের শেষের দিকে চর জেগে উঠলে তিনটি ইউনিয়নে আবার জনবসতি শুরু হয়।
বর্তমানে চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৫০ হাজারেরও অধিক মানুষের বসবাস। তবে এখনও ভাঙা গড়ার মধ্য দিয়ে বসবাস করছেন চরাঞ্চলের জনগণ। ২০২২ সালের দিকে তীব্র ভাঙন শুরু হলে জরুরি ভিত্তিতে চরাঞ্চলে নদী শাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা যায়, ২০২২/২৩ অর্থ বছরে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে আজিমনগরে ৪০০ মিটার এলাকা জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং এর কাজ করা হয়। চলতি বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতে আজিমনগরের হাতিঘাটা এলাকায় দুই দিন ধরে নতুন করে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে জিও ব্যাগ ধসে নদীর তীরের মাটি বের হয়ে আসছে। নদী ভাঙন আতংকে রয়েছে এ এলাকার শতশত পরিবার।
উপজেলার মালুচী গ্রামের বাসিন্দা নোয়াব আলী বলেন, কুশিয়ারচর পশ্চিমপাড়া পর্যন্ত জিও ব্যাগ পড়েছে। আর শিবালয়ের শেষ সীমানা মালুচী ঘাটের পশ্চিমে জিও ব্যাগ পড়েছে। মাঝের এই জায়গাটুকুতে এখনও জিও ব্যাগ পড়েনি। গত কয়েকদিনে জোয়ারের পানি আসতে শুরু করায় এই এলাকায় আবার ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। এখানে পানির গভীরতাও বেশি। তাই এখনই ভাঙনরোধ করা না হলে বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিতে পারে। দেখেন, কত জায়গায় লম্বা হয়ে জমিতে ফাটল দেখা দিছে। পানি বাড়লেই এসব ফাটল ধরা জমি নদীতে ধসে পড়বে।
কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক বলেন, কুশিয়ারচর বিল্লাল মেম্বাবের বাড়ি পর্যন্ত জিও ব্যাগ পড়লেও তারপর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এখনও কোনো জিও ব্যাগ পড়েনি। জোয়ারের পানি আসতে না আসতেই ওই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়াও কোটকান্দি এলাকায় জিও ব্যাগ নিয়েও নদীতে ধসে পড়ছে। আমি বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আবার পানি বাড়ার সাথে সাথে বড় ধরনের ভাঙন দিতে পারে।
আজিমনগর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিকেলে নদীর পাড়ে বেড়াতে গিয়ে ভাঙন কবলিত জায়গা নজরে পড়ে। দুই বছর আগে যে জিওব্যাগগুলো ফেলা হয়েছিল, প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতে সেই জিওব্যাগ ধসে মাটি বের হয়ে আসছে। প্রায় ৮ মিটার এরিয়া ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ ভাঙনে রূপ নিতে পারে।
একই গ্রামের নাসির উদ্দীন বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে প্রবল স্রোত আর ঢেউয়ের আঘাতে আবার ভাঙন দেখা দিয়েছে৷ জিও ব্যাগ ধসে যাচ্ছে। এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করা না চরাঞ্চলের ফসলি জমি সহ ঘরবাড়ি ঝুঁকিতে পড়ে যাবে।
মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দীন বলেন, হরিরামপুরের বেশিরভাগ এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে নদী শাসনের কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে কিছুদিন পূর্বে ঘুর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তীব্র ঢেউয়ের কারণে পদ্মার তীরে কিছু কিছু জায়গায় জিওব্যাগ স্লাইড করে। সম্প্রতি উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জেলার যমুনা ও পদ্মা নদীর পাড়ে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে যতদ্রুত সময়ের মধ্যে সম্ভব জিওব্যাগ ডাম্পিং কাজ শুরু করার ব্যবস্থা গ্রহণ হবে। তবে পদ্মা নদী পৃথিবীর দ্বিতীয় খরস্রোতা নদী। বন্যাকালীন সময়ে এখানে বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। আমরা সচেষ্ট আছি যাতে এলাকাগুলো রক্ষা করতে পারি। আমি গত বৃহস্পতিবার হরিরামপুর উপজেলার ভাঙ্গনকবলিত স্থানগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করছি।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :