সিরাজগঞ্জ বিসিক শিল্প পার্ক প্রকল্পের মেয়াদ ৪ বছর দিয়ে কাজ শুরু করলেও এক যুগেরও বেশি সময় কাজ করে শেষ করতে পারিনি প্রকল্পটি। নথিতে ইতিমধ্যে কাজ দেখানো হয়েছে সমাপ্ত। তবে বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন। কাগজ কলমে কাজ শেষ হলেও বাস্তবে চলছে প্রকল্পর কাজ।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় ইতিমধ্যে ফোন বন্ধ রেখেছে প্রকল্পর পরিচালক (পিডি) জাফর বায়েজীদ। তবে প্রকল্পর টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ফজলুর রহমান ও বার্ধন বলেছেন, জুন মাসেই শেষ হবে সব কাজ। তবে নির্মাণ শ্রমিক ও সাইট ম্যানেজাররা বলছেন প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে এখনো দুই মাসেরও বেশি সময় লাগবে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, চার বছরের এ প্রকল্পটি বারবার মেয়াদ বাড়িয়ে ১৩ বছরেও শেষ হয়নি। পরে গত ১২ সেপ্টেম্বর সপ্তম দফায় রুগ্ন প্রকল্প হিসেবে এক বছর বাড়িয়ে জুন পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। তবে রুগ্ন এ প্রকল্পটি নির্মাণে কয়েক দফায় ব্যয় বেড়েছে ৩৪০ কোটি ২১ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণে দেরি, ঠিকাদারের গাফিলতি, কোভিড-১৯ সহ নানা কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে বলে অজুহাত সংশ্লিষ্টদের।
সরেজমিন দেখা যায়, যমুনা নদীর তীরঘেঁষে ৪০০ একর জায়গায় গড়ে ওঠা শিল্প পার্ক প্রকল্পের নিজস্ব ভবনের কাজ মোটামুটি শেষ হলেও বাউন্ডারি, রাস্তা, ড্রেন, লেক ও স্ল্যাবের কাজ প্রায় ২০ শতাংশ বাকি। অপরদিকে পার্কের ভেতরে বিদ্যুতের কিছু খুঁটি বসানো হলেও গ্যাস ও পানির সংযোগের কোনো কাজই হয়নি। বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়েছে কংক্রিটের ব্লক।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ না হওয়ায়, বর্তমানে অতিরিক্ত লোক লাগিয়ে দিবা রাত্রি ২৪ ঘন্টা পাকা রাস্তার সাব-বেজ ও ড্রেনের কাজে ভিটি বালু ও নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করছে।
একই সঙ্গে নিম্নমানের পাথর ও বিটুমিন দিয়ে করা হচ্ছে কার্পেটিং। শিডিউলে কার্পেটিং ৭৫ মিলি ধরা থাকলেও বাস্তবে রয়েছে ৬০ মিলি। এতে দেশের বৃহত্তর এ শিল্প পার্কের কাজের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। দুই দফায় আলাদাভাবে মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও দুই বছর। চার বছরের প্রকল্প ১৩ বছরেও শেষ হয়নি।
এ প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এরপর সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর সময় ১১১ কোটি টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৪৮৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে এসে ফের ১৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয় ৬২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। পরে তৃতীয় সংশোধনীর সময় ৯১ কোটি ১১ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় করা হয়েছে ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা।
প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষে ৮২৯টি শিল্প প্লট তৈরি করে ৫৭০টি শিল্প স্থাপন করা হবে। এতে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
একুশে সংবাদ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :