ভারী বর্ষন এবং উজান থেকে আসা ঢলে সুন্দরগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সরকারিভাবে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ৪ হাজার ৯০০ পরিবারের ২০ হাজার মানুষকে পানিবন্ধি দেখানো হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে এর পরিমান ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। সরকারিভাবে এ পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষের জন্য বরাদ্দ মিলেছে ৪০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। পানিবন্দি পরিবারগুলো ইতিমধ্যে উচু স্থানে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে শুরু করেছে। গৃহপালিত পশুপাখি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, শিশু ও প্রসূতি নারীদের নিয়ে নিদারুন কষ্টে রয়েছে চরবাসি। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য এবং চিকিৎসা সেবা নিয়ে বিপাকে চরবাসি। পানি বাড়ায় চরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নৌকা ছাড়া এক চর হতে অন্য চরে যাওয়া আসা করা সম্ভব হচ্ছে না।
![](https://86818.cdn.cke-cs.com/DCPkOUSXZG0bSzEhfv2o/images/47e1b8a1cdb4083c5f4e0b55907515e6da44a5b6b3696827.jpg)
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা , হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বৃহস্পতিবার সকাল হতে উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের সবগুলো চর ডুবে গিয়ে কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। সেই সাথে চরের সবগুলো ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে। বন্যা আসলে তিস্তার শাখা নদীর আশপাশ ডুবে যায় পানিতে। বন্যা আসলেই শুরু হয় নদী ভাঙন। চলতে থাকে বছর ব্যাপী। নদী পাড়ের মানুষের দাবি, স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘদিনেও স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধ, ড্রেজিং, নদী খনন, ও সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহন করেনি সরকার। যার কারণে প্রতি বছর পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি, হাজারও একর ফসলি জমি বিলিন হচ্ছে নদীগর্ভে।
কাপাসিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম জানান, বুধবার রাত হতে ব্যাপক হারে পানি বাড়তে থাকায় ইতিমধ্যে তার বসতবাড়িসহ কাপাসিয়া ইউনিয়নে কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়েছে। অনেকে ঘরের টুইয়ের মধ্যে বসবাস করছে। চরের মানুষ বিশেষ করে গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার সহায়তা পাওয়া যায়নি।
![](https://86818.cdn.cke-cs.com/DCPkOUSXZG0bSzEhfv2o/images/1b2338c87dd84f343bb4b0c1424d1fe86208274b7ae2aa48.jpg)
হরিপুর ইউনিয়নের আকবর আলী বলেন, পানি বাড়ার সাথে সাথে চরের মানুষ দুঃখও বাড়তে শুরু করে। হরিপুর ইউনিয়নের কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ পানিবান্ধি হয়ে পড়েছে। গোটা চরাঞ্চল এখন পানিতে থৈ থৈ করছে। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার চরমভাবে বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্ধি বেশিভাগ পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে এখনও বসতবাড়ি ছেড়ে যায়নি। ঘরের চকির উপর এবং টুইয়ের মধ্যে বসবাস করছে।
হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোজাহারুল ইসলাম জানান, পানি বাড়ায় তার গোটা ইউনিয়ন প্রায় ডুবে গেছে। উপজেলা নিবার্হী অফিসার এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বন্যা দুর্গত মানুষের তালিকা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বানভাসি মানুষের বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য, চিকিৎসা সেবার অভাব দেখা দিয়েছে।
![](https://86818.cdn.cke-cs.com/DCPkOUSXZG0bSzEhfv2o/images/a3bcb6cebba1cf9d827b3b0f1703cf81b45338bd831c6a05.jpg)
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মন্ডল জানান, বন্যা কবলিত ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে ৪ হাজার ৯০০ পরিবারের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ পরিবার উচু স্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাঁধে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে চলে গেছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে ৪০০ প্যাকেট শুকনা খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ পাওয়া গেছে। উপজেলায় পৌচ্ছামাত্রই তা চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. তরিকুল ইসলাম জানান, সার্বক্ষনিক বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সকল প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বরাদ্দের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই তা বিতরণ করা হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :