টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা ঢলের কারণে এ বছর সবচেয়ে বড় পরিসরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে বন্যার পানিতে ডুবে গেছে রাস্তা। যানবাহন ও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে সেই রাস্তা দিয়েই চলাচল করছে। জানা যায়, গত কয়েকদিন দেশের ছয় জেলার প্রায় ২২ হাজার ২৫০ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
ছয় জেলার মধ্যে সিলেটেই ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের জেলা গাইবান্ধায় দুই হাজার ৫৪৬ হেক্টর, কুড়িগ্রামে এক হাজার ৪০০ হেক্টর, বগুড়ায় ৮০২ হেক্টর এবং শেরপুরে ডুবেছে এক হাজার ৫৬৪ হেক্টর জমি। এসব জমিতে পাট, আউশ ধান, রোপা আমনের বীজতলা, কলা, মরিচ ও সবজি চাষ করা হয়েছিল। একুশে সংবাদ প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিলেট: বৃহস্পতিবারও নদীর পানি ছয় পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে পাউবো সূত্রে জানা গেছে। জেলা প্রশাসন জানায়, সিলেটের ৩১ উপজেলার ৯৬ ইউনিয়ন এখনো বন্যাকবলিত। এসব ইউনিয়নের এক হাজার ১৬০ গ্রামের ছয় লাখ ১৭ হাজার ৭৯৩ জন বন্যাক্রান্ত। জেলার ২০৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো আট হাজার ৯৫১ জন রয়েছে।
কুড়িগ্রাম: তিনটি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে সাত উপজেলার দেড় শতাধিক চর ও দ্বীপচর। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৬০ হাজার মানুষ। পাউবো জানায়, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার ও হাতিয়া পয়েন্টে ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এক হাজার ৪০০ হেক্টর জমির পাটসহ নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির ফসল। সংযোগ সড়ক ডুবে যাওয়ায় চিলমারী-রৌমারী ফেরি চলাচল বন্ধ।
গাইবান্ধা: পাউবোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধায় দুই হাজার ৫৪৬ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম। সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নে উজান ঢলে গ্রামীণ বাঁধ ভেঙে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বাংশের তিন ইউনিয়নের প্রায় ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বগুড়া: বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত যমুনা নদীর পানি ৮৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৮৮ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বগুড়া পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির জানান, সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্নিবাড়ী, কামালপুর, হাটশেরপুর, ফুলবাড়ী ও চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের চরাঞ্চলের নিচু জায়গা তলিয়ে গেছে। যমুনার ছয়টি পয়েন্টে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ইছামারা অংশে ভাঙন প্রবল। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলুবুর রহমান জানান, সারিয়াকান্দিতে ৫৬০ হেক্টর এবং সোনাতলা উপজেলায় ২৬১ হেক্টর পাট, ভুট্টা ও সবজির জমি নিমজ্জিত হয়েছে।
শেরপুর: জেলায় পানিতে ডুবে আছে এক হাজার ৫৬৪ হেক্টর ফসলি জমি। এর মধ্যে পুরো ডুবন্ত অবস্থায় আছে ৬৮০ হেক্টর এবং আংশিক ৮৮৪ হেক্টর। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সাত হাজার ৭০ জন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর জানান, পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হবে।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী): বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি বেড়েছে ৪৪ সেন্টিমিটার। এ নিয়ে গত তিন দিনে পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার পানি বাড়ল। উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিসের গেজ রিডার (পানি পরিমাপক) সালমা খাতুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দৌলতদিয়ায় চারটি ফেরিঘাট ‘লো-ওয়াটার’ লেভেল থেকে ‘মিড-ওয়াটার’ লেভেলে স্থাপন করা হয়েছে। দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বলেন, রোববারের (৭ জুলাই) পর নদ-নদীর পানি কমে দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
একুশে সংবাদ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :