AB Bank
ঢাকা শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

অনিয়ন্ত্রিত বাজারমূল্য, নেই প্রশাসনের তদারকি


Ekushey Sangbad
টি আই সানি, শ্রীপুর, গাজীপুর
০৬:১৫ পিএম, ৬ জুলাই, ২০২৪
অনিয়ন্ত্রিত বাজারমূল্য, নেই প্রশাসনের তদারকি

গাজীপুরের শ্রীপুরে অনিয়ন্ত্রিত বাজারমূলের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে ক্রেতারা। পাইকারী বাজার ও খুচরা বাজারের মধ্যে দৃব্যমূল্যের পার্থক্য থাকলেও বাজার মূল্য তদারকিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। নিয়মিত মনিটরিংয়ের অভাব এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভই বাজার মূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ। পুঁই শাক, কচু শাক, কলমি শাক, ধনেপাতা, চিচিঙ্গা, বরবটি, আদা, হলুদ, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচা সবজির দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারাণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে রয়েছে এসব সিজনালি সবজি। যখন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ সবজি কিনতে পারছে না এসময় কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে অসম্ভব পরিমান। বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েই চলছে।


শুক্রবার (০৫ জুলাই) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শ্রীপুর পৌরসভা ও উপজেলার কয়েকটি কাচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় দোকানে দ্রব্যমূল্যের কোন তালিকা টানানো নেই। ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামত দামে পণ্য বিক্রয় করছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মরিচ ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় কিনে খুচরা বাজারে দোকানদাররা বিক্রি করছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়। কেজিতে খুচরা ব্যবসায়ীরা ৬০ থেকে ৮০ টাকা বেশি নিচ্ছে। বর্তমানে মরিচের দাম বেশি হওয়ায় অতিষ্ঠ ক্রেতারা। কেউ কেউ কাচা মরিচ না কিনে শুকনো মরিচের গুঁড়া বা প্যাকেট কিনছেন। আবার শুকনা মরিচ প্রকারভেদে ৪০০-৪২০ টাকা কেজি দরে কিনতে বাধ্য হচ্ছে ক্রেতারা।

শ্রীপুর কাচা বাজারে বাজার করতে আসা পোশাক কারখানার কর্মী ইমরান হোসেন বলেন, আমরা যারা গার্মেন্টসে চাকরি করি তারা ২৫ কেজির এক বস্তা চাউল ১৩৫০ টাকা দিয়ে কিনে থাকি। সে মতে বর্তমান বাজারে এক কেজি চাউলের দাম ৫৪ টাকা। বাজারে কাচা মরিচ কিনতে এসে দেখি চার কেজি চাউলের দামেও এক কেজি কাচা মরিচ কিনতে পারছি না। চাউলের চেয়ে তিনগুণ দাম বেশি কাচা মরিচের। তাই কাঁচা মরিচ না কিনে শুকনা মরিচের গুঁড়া কিনলাম।



শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী বাজারে সবজি ক্রেতা ও কৃষি শ্রমিক আব্দুল জব্বার বলেন, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের মিল নাই। সারাদিন ইনকাম হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কয়েকদিন বৃষ্টি থাকায় কোনোদিন কাজ করতে পারি, কোনোদিন পারি না। তিনি বলেন, পেঁয়াজ ১০০, রসূন ২৫০, আদা ২৪০, কাকরোল ৭০, বরবটি ৭০, আলু ৬০, বেগুণ ৭০, ডাল ১৪০, ডিম প্রতি কেস (৩০ পিছ) ৩৬০, পটল ৪০, ঝিঙ্গা ৮০, পুঁইশাক ৪০, কচুর মুখি ১০০, ঢেঁড়স ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, দেড় কেজি ওজনের রুই মাছ ৩৯০, সরপুঁটি ২২০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০ টাকা, মৃগেল ৩০০ টাকা, শিং মাছ (মাঝারি) ৪০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২৫০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ৩৪০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সব কিছুর দামই বেশি। গরিব মানুষ বাঁচবে কিভাবে? একটু বৃষ্টি নামলেই ব্যবসায়ীরা অজুহাত দেয় আমদানি নাই। তাই প্রত্যেকটি কাচামালের দাম বেড়েছে।

নিত্যপণ্যের বাজার মূল্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্রেতারা বলেন, নিয়ম থাকলেও প্রতিদিন বাজাররের মূল্য তালিকা নির্ধারণ করা হয় না। বাজারের অধিকাংশ দোকানে দ্রব্যমূল্যের তালিকা নেই। যদিও দুই একটি দোকানে আছে সেটিও ৫/৬ মাস আগের নির্ধারণ করা তালিকা। বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই প্রতিদিন বাজার মূল্য নির্ধারণ হয় না। এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা তাদের নিজ ইচ্ছামত দামে পণ্য বিক্রয় করছেন। এমন অনিয়ন্ত্রিত বাজারমূল্যে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ক্রেতা সাধারণেরা।

শ্রীপুর ও মাওনা বাজারের কয়েকজন দোকানদার জানান, তাদেরকে দ্রব্যমূল্যের কোন তালিকা দেয়া হয়নি। বাজার মূল্যের তালিকা সম্পর্কে তারা জানেনই না। তারা বলেন সরকারীভাবে যদি কোন নিয়ম-কানুন করে থাকে সেটা আমাদেরকে জানালে আমরা সেটি পালন করার চেষ্টা করব।

শ্রীপুর বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন জানান, পৌরসভা থেকে বাজার মনিটরিংয়ের জন্য বা বাজারমূল্য নির্ধারণের জন্য কেউ আসে না। তাই আমরা নিজেরাই দাম নির্ধারণ করি। আমরা প্রত্যেকটি পণ্যই পাইকারী কিনে তার চেয়ে ৭/১০ টাকা বেশি খুচরা বিক্রয় করি।

শ্রীপুর পৌরসভার কাজীপাড়া (০১ নং ওয়ার্ড) এলাকার কাজী আকতার হোসেন (৫০) বলেন, বাজার মনিটরিং না থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা চড়া দামে তাদের ইচ্ছামতো পণ্য বিক্রি করছে।

কেওয়া বাজারের খুচরা বিক্রেতা সুমন ও মাসুম জানান, আড়তদাররা মরিচ সাপ্লাই দিতে পারছে না। তাই বেশি দামে মরিচ কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও মরিচ বাসি হলে পচে যায় এবং ওজনে কম হয়। তাই বাধ্য হয়ে একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বাজার বেশি হওয়ায় ক্রেতারা কাঁচা মরিচ কিনছে না। অনেকেই প্যাকেটের গুঁড়া মরিচ কিনছে।

মাওনা চৌরাস্তা কাচামাল আড়তের ব্যবসায়ী বাবুল আহম্মেদ জানান, আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে মালামাল নিয়ে আসি। আগে জামালপুর থেকে নিয়ে আসতাম। এখন রংপুর, ঠাকুরগাঁও থেকে নিয়ে আসতে হচ্ছে। যখন যে বাজারে যেমন পাওয়া যায় আমরা সেখান থেকেই নিয়ে আসি। আজকে প্রতি পাল্লা বেগুণ প্রকারভেদে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

অপর ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, কাঁচা মরিচ রংপুর, দিনাজপুর থেকে আসতো। চলতি বর্ষা মৌসুমে ওইসব এলাকার মরিচ চাষিদের ক্ষেতে পানি জমে গাছ মরে যাওয়ায় বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাইকারি প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি করতেছি। তবে শুনছি খুচরা বাজারে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শ্রীপুর পৌরসভার খাদ্য পরিদর্শক তৌফিক খান বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের জন্য অফিসিয়ালভাবে আমাকে কোনে কার্যক্রম নিতে বলে নাই। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা অফিসার জাকির সাহেব। উনি খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে। বাজার মনিটরিংয়ের বিষয়টি তিনি দেখবেন।

এ বিষয়ে শ্রীপুর পৌরসভার খাদ্য নিরাপত্তা অফিসার জাকির হোসেন বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের জন্য আলাদা একজন ডিলার আছে। তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না এবং জানেন ন।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোভন রাংসা সাংবাদিকদের জানান, দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতি এটা রাষ্ট্রের বিষয়। রাষ্ট্রের বিষয়টা আমরা শ্রীপুরে বসে সিদ্ধান্ত দিতে পারব না। আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতেছি এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতেছি। আর মূল্য তালিকা এটাও চলমান রয়েছে। এ বিষয়টি ভোক্তা থেকে শুরু করে সবাই দেখে।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!