নওগাঁ জেলার পত্নীতলায় এক আদিবাসী পরিবারের উপর দফায় দফায় হামলা চালিয়ে বাড়ী-ঘর ভাংচুর ও নারী-পুরুষকে মারপিট করে লুঠতরাজ চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আহতরা পত্নীতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে।
জানা গেছে, পত্নীতলায় পূর্বশত্রুতার জেরে এক আদিবাসী পরিবারের ঘরবাড়ি ভাংচুরসহ খড়ের পালায় আগুন দিয়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন করে দুর্বৃত্তরা। এব্যাপারে থানায় গত মঙ্গলবার অভিযোগ হলে পুলিশি তদন্ত চলাকালীন সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আবারও দুর্বৃত্তরা লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঐ পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে বাড়ীঘর, দোকানঘর ভাংচুর করে লুটতরাজ করে এবং নারীসহ বৃদ্ধদের জখম করলে ঐ পরিবারের লোকজন দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচার জন্য থানা ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার উষ্টি গ্রামের আদিবাসী হরেন এর ছেলে শনিরাম (৪৩) তার পরিবারকে নিয়ে উষ্টি গ্রামে বসবাসরত অবস্থায় বাড়ির পাশে উষ্টি তকিপুর পুরাতন জামে মসজিদের জায়গা লীজ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত সেখানে টিনের চালা দিয়ে মুদি দোকানের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল।
এমতাবস্থায় প্রায় ছয় মাস পূর্বে তকিপুর হাটপুকুর এলাকার মৃত সানচ্চার ছেলে বিষ্ণু তিগ্যাসহ তার সঙ্গীরা শনিরামের ঐ জায়গা দখলের চেষ্টা করে ও শনিরামসহ তার পরিবারকে বেধে মধ্যযুগিয় কায়দায় মারপিট, ভাংচুর ও লুটতরাজ চালায়। এ ব্যাপারে মামলা চলমান অবস্থায় গত মঙ্গলবার আবারো বিষ্ণু তিগ্যা (৪৪), একই এলাকার মৃত মংলুর ছেলে দিনেশ তিগ্যা (৩৫), মৃত শুকা তিগ্যার ছেলে রবীন্দ্রনাথ তিগ্যা (৪৮), রবীন্দ্রনাথের ছেলে সুজন তিগ্যা (২২), মৃত নবীন তিগ্যার ছেলে লিটন তিগ্যা (৩২), মৃত সুরেন তিগ্যার ছেলে দুলাল তিগ্যা (৫০), মৃত নবানুরের ছেলে মহাদেব (৩৬), মৃত সৃনাচ্চার ছেলে নরেশ তিগ্যা (৫১), মৃত সাঞ্চার ছেলে কালু তিগ্যা (৪১), বিষ্ণু তিগ্যার ছেলে রাজ কুমার (২০), মালেক হোসেন (৪৫), মৃত মানছা তির্গার ছেলে নকুল তিগ্যা (৩২), গবরা তিগ্যার ছেলে কালিপদ তিগ্যা (৫৫), মৃত হাকিম উদ্দিনের ছেলে সামসুল হক (৫৬), নেওয়ার ছেলে মালেক (৪৫) লাঠিসোটা, লোহার রড, হাসুয়া নিয়ে জোর পূর্বক ঐ জায়গা-জমি দখলের উদ্দেশ্যে শনিরামের উপর হামলা চালায়। শনিরামের চিৎকারে তার স্ত্রী মিনা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ছুটে আসলে তাদেরকেও আঘাত সহ শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। একপর্যায়ে তাদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে গ্রামের লোকজন ছুটে আসলে দুর্বৃত্ত বিষ্ণু সহ তার সঙ্গীরা দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
এসময় দুর্বৃত্তরা শনিরামের বসতবাড়ি, দোকানের ফ্রিজ সহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভাংচুর করে, খড়ের পালায় আগুন ধরিয়ে দেয়, ৩০টি আমের গাছ উপরে ফেলে এবং তার জমির চারপাশের বাঁশের বেড়া ভেঙ্গে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন করে মালামাল লুটতরাজ করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় শনিরাম পত্নীতলা থানায় দুর্বৃত্তদের নামে অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশের তদন্ত চলমান থাকা অবস্থাতেই আবারও বিষ্ণু তিগ্যা সহ তার সঙ্গীয়রা বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় শনিরামের পরিবারের উপর হামলা চালিয়ে গুরত্বর আহত করে, ভাংচুর ও লুটতরাজ চালিয়ে নারী ও বৃদ্ধদের জখম করে। আহতরা হলো, বক্স এর স্ত্রী আরতি (৩০), হরেন (৫৮), হরেন এর স্ত্রী মালতি (৫০) ও শনিরামের স্ত্রী মিনা (৩৫)।
এ ঘটনায় উষ্টির তকিপুর পুরাতন জামে মসজিদ কমিটির সহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে, দুর্বৃত্তদের দ্রুত বিচার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাফফর হোসেন জানান, আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।
একুশে সংবাদ/সা.আ
আপনার মতামত লিখুন :