পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পাহাড় কাটার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পাহাড়খেকোরা পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে প্রতিনিয়ত। এপর্যন্ত রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার সরঞ্জাম জব্দ ও অর্থ দন্ড করার সত্ত্বেও আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মহোৎসব সাথে চলছে পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতা।
শনিবার (১৩ জুলাই) সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড় নিধনের মহোৎসবে মৃত্যুর মিছিলে অংশ নিতে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর মসজিদ ভিটা এলাকায় আবছার নামে এক ব্যক্তি তার ঘরের পেছনে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে।
টানা বৃষ্টিতে রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু এর মাঝেই থেমে নেই পাহাড় কাটার মহাযজ্ঞ। অথচ দুর্ঘটনা এড়াতে পাহাড়ে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে সরে যেতে মাইকিং করেছে ফায়ার সার্ভিস। বৃষ্টিতে একদিকে পাহাড় ধসের শঙ্কা, অন্যদিকে চলছে পাহাড় নিধন। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ওই পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত বাসিন্দাদের মাটির ঘর গুলো পাহাড় ধসে যেকোনসময় ঘটতে পারে প্রাণহানির মতো ঘটনা। একইচিত্র দেখা গেছে এই গ্রামের আরও একাধিক স্পটে। অন্যদিকে পাশ্ববর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড খলিফাপাড়া এলাকায় দুর্গম এলাকায় সড়কের পাশ থেকেই বিশালাকার পাহাড় কেটে সাবাড় করা হয়েছে। পাহাড়ের গায়ে এস্কেভেটরের চিহ্ন দেখে বুঝা যায়, সম্প্রতিই পাহাড়টা নির্দয়ভাবে কাটা হয়েছে। পাহাড়ের উপরে থাকা ব্যাপক গাছসহ বিপদজনকভাবে কাটা পাহাড়টা যেকোন সময় ধসে পড়ে পাশের বসতঘরসহ সড়কে চলাচলরত মানুষের প্রাণহানির আশংকা রয়েছে। তবে পাহাড় কাটার সাথে সম্পৃক্ত কে এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন স্থানীয়রা।
এছাড়াও উপজেলার একাধিক স্থানে সিন্ডিকেট করে অভিনব পন্থায় চলছে পাহাড় ও কৃষি জমির টপ সয়েল কাটার মহা উৎসব। পরিবেশ অধিদফতরের কঠোর নজরদারিতেও থামানো যাচ্ছে না পাহাড় ও টপ সয়েল কাটা মহোৎসব। উল্টো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অগোচরে বেড়েই চলেছে একের পর এক পাহাড় ও টপ সয়েল কাটার ঘটনা। ইটের ভাটা, পুকুর ভরাট ও ইমারত নির্মাণের প্রতিযোগিতায় পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষাকারী পাহাড় ও টপ সয়েলকে উৎসবের বলী হিসেবে দিচ্ছে বিসর্জন।
তবে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কবরস্থান দখল থেকে বিরত থাকার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। এরপরও সে গাছ লাগিয়ে দিয়েছে। তাকে ডেকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইসলামপুরে পাহাড় কাটার কারণে সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়গুলো প্রশাসনকে বিভিন্ন সময় জানানো হয়েছে। আশাকরি প্রশাসন এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান মেহবুব বলেন, সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলায় সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য। যারা পাহাড় কাটার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :