AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বিলুপ্তপ্রায় শরিফা ফল প্রজন্মের কাছে অপরিচিত


বিলুপ্তপ্রায় শরিফা ফল প্রজন্মের কাছে অপরিচিত

অত্যন্ত সুমিষ্ট স্বাদে সেরা এই ফলটি আতা নামে বেশিরভাগ স্থানে পরিচিত। তবে কোথাও একে মেওয়া এবং কোথাও একে শরিফা বলা হয়। হিন্দিতেও একে শরিফা বলা হয়। সংস্কৃত ভাষায় এর নাম সীতাফলম। 

রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় একসময় বাড়ি আঙ্গিনায় এবং হাট-বাজারে প্রায়ই দেখা এই বিশেষ উপকারী ঔষুধি ফলটি। কালের বিবর্তনে বিলুপ্তপ্রায় ফলটি এখন দেখা মিলে না বললেই চলে। উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়ন ৮নং ওয়ার্ড হাজীপাড়া এলাকায় মোঃ কামালের বাড়ির আঙিনায় গত ৫ বছর আগে লাগানো শরিফা গাছটি ফলন দিয়ে আসছে ৪ বছর ধরে। জ্বালানী তেল ব্যবসায়ী কামাল কাজের তাগিদে ঢাকায় গেলে একটি নার্সারিতে শৈশবের খাওয়া রসালো শরিফা ফলের গাছটি দেখলে কিনে বাড়ির আঙিনায় লাগায়। 

বিলুপ্তপ্রায় শরিফা বা আতা ফল একসময় বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলের মধ্যে একটি। ৮০-৯০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে যাদের জন্ম তারা এই ফলটি সাথে পরিচিত হলেও বতর্মান প্রজন্ম (বিশেষ করে চট্টগ্রামে) কেউ চিনে না বললেই চলে। 

শরিফা এক ধরনের যৌগিক ফল, এটিকে ইংরেজিতে ‘কাস্টার্ড অ্যাপল’, ‘সুগার অ্যাপল’, ‘সুগার পাইন এপল’ বা ‘সুইটসপ’ বলা হয়। ভিতরে থাকে ছোট ছোট কোষ। প্রতিটি কোষের ভেতরে থাকে একটি করে বীজ, বীজকে ঘিরে থাকা নরম ও রসালো অংশই খেতে হয়। পাকা ফলের বীজ কালো এবং কাঁচা ফলের বীজ সাদা।

বাংলাদেশ ও ভারতে এটি বসতবাড়ীর আঙিনায় এবং বনে-জঙ্গলে জন্মে থাকে। তবে থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়ে থাকে। গাছের আকার খুব বড় নয় উচ্চতায় ৩ থেকে ৫ মিটার। শীতকালে এর পাতা ঝরে যায় এবং বসন্তকালে নতুন পাতা গজায়, ফুল ধরে। পাতার আকৃতি বল্লমের মতো, অগ্রভাগ সরু। এর ফুল দেখতে কাঁঠালি চাঁপার মতো যার রঙ হালকা সবুজ থেকে সবুজাভ হলুদ হয়ে থাকে। কাঁচা ফল খাওয়া যায় না। বেলে দো-আঁশ মাটিতে আতা গাছ ভাল জন্মে। বীজ থেকে এর চারা করা হয়। এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল ধরে এবং ৪/৫ মাসের মধ্যে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ফল পেকে যায়।

শরিফাফল হৃৎপিণ্ড আকৃতির হয়ে থাকে। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও শর্করা জাতীয় খাদ্যোপদান রয়েছে। পাকা আতার শাঁস মিষ্টি হয়ে থাকে। খাওয়ার সময় জিভে চিনির মতো মিহি দানা দানা লাগে। এর কিছু ভেষজ গুণ রয়েছে। যেমন পাকা আতার শাঁস বলকারক, বাত-পিত্তনাশক ও বমনরোধক।

অত্যন্ত ওষুধি গুণাবলী সমৃদ্ধ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর শরিফা ফলে আছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন (সি, বি6, এ), থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, কৌরেনোইক অ্যাসিড, ফ্যাটি অ্যাসিড।

শরিফা ফলে থাকা কৌরেনোইক অ্যাসিড ও ভিটামিন সি ক্যারোটিনয়েডের মতো শক্তিশালী যৌগ দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ অক্সিডেটিভসম্পন্ন স্ট্রেস ক্যান্সার, হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এর প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও হৃৎপিণ্ড সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগ যেমন স্ট্রোক,হৃদরোগ ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। এতে উচ্চ ফাইবার থাকায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার মতো হজমের সমস্যা দূর করে।

অন্যদিকে, চোখ ভালো রাখতে এতে রয়েছে লুটেইন ও রিবোফ্লাভিন নামের ক্যারোটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা চোখের প্রধান অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মধ্যে একটি। তাই চোখে ছানি পড়া ও দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া সংক্রান্ত সমস্যার অন্যতম ওষুধ এই ফল। এর থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ত্বক ও চুলের জন্য বেশ উপকারী, ফলের নরম অংশ ত্বক ও চুলে ব্যবহার করলে তা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে পারে শরিফা ফলে থাকা ভিটামিন সি। 

চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট হর্রটিকালচার সেন্টারের উপসহকারী উদ্যান কর্মকর্তা মোঃ আবদুল খালেক জানান, প্রস্তাবিত কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে দেশের অপ্রচলিত ও বিলুপ্তপ্রায় ফল উৎপাদন ও সম্প্রসারণ কর্মসূচি। এই কর্মসূচিতে হারিয়ে যাওয়া ফল আতা, শরিফা, বিলিম্বি, করমচা, গাব, বিলাতিগাব, বিচিকলা, গোলাপজাম, ডেওয়া, আঁশফল, জামরুল, বেল, কদবেল, চালতা, তিতিজাম ইত্যাদি ফল নতুন করে উৎপাদন করবে। এর ফলে কর্মসূচিভুক্ত এলাকায় বিলুপ্তপ্রায় ফল চাষের মাধ্যমে অপ্রচলিত ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। মিশ্র ফল বাগান হওয়ায় কৃষক বাগান থেকে সারা বছর ফল সংগ্রহ করতে পারবে। কর্মসূচিভুক্ত এলাকায় বসবাসরত জনগণের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে। কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও শরিফা ফল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ নানান উদ্যোগ গ্রহণ করছে এবং মাঠ পর্যায়ে এই ফলের চাষাবাদ বাড়ানোর কাজ চলমান।

বিশিষ্ট কৃষি গবেষক সাংবাদিক মোহাম্মদ আজাদ হোসাইন বলেন, বর্তমানে নগরায়ণ এবং জঙ্গল ধ্বংস করে ফসলের খেত তৈরির ফলে এসব অপ্রচলিত ফল গাছ আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে চলেছে। বিলুপ্তির হাত থেকে এসব অপ্রচলিত ফলকে বাঁচাতে হলে এখনি চাষের আওতায় আনতে হবে। এ ফলের বাণিজ্যিক মূল্যও কম নয়। 

তিনি আরো জানান, যেসব ফলের অস্তিত্ব আছে, খুজে পাওয়া যায় কিন্তু সচরাচর দেখা যায় না এবং দেশের সব এলাকায় জন্মায় না বা কোনো কোনো এলাকাতে স্বল্প পরিসরে জন্মায় তাদের বলা হয় অপ্রচলিত ফল। দেশে প্রায় ১৩০ ধরনের অপ্রচলিত ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে। যার মধ্যে প্রায় ৭০ ধরনের অপ্রচলিত ফল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে এবং স্বল্প পরিসরে চাষও হয়ে থাকে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে অপ্রচলিত ফলের চাষ বৃদ্ধি করতে পারলে আবার দেশে সর্বত্র এই ফলগুলো পাওয়া যাবে এবং সন্তানরা পাবে পুষ্টি ও ঔষধি গুণে ভরপুর এসব অপ্রচলিত ফলের স্বাদ।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!