AB Bank
ঢাকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কালাইয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার নামে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের টাকা লুটপাট


Ekushey Sangbad
আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই, জয়পুরহাট
০২:৪৯ পিএম, ২৯ জুলাই, ২০২৪
কালাইয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার নামে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের টাকা লুটপাট

জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলায় অনিয়ম, দুর্নীতি এবং প্রতারণার মাধ্যমে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু মনীশ চৌধুরী জানান, তিনি ‘এসো গড়ি, সোনার বাংলা’র দুর্নীতির বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে  তুলে ধরেছেন। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সরকারের টাকাগুলো এভাবে লুটপাট হতে দেখে তারা হতাশ।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)’ এর অধীনে ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৮-১৪ বছর বয়সের ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। কালাই উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৭০টি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনা করার জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার দায়িত্বে রয়েছে লিড এনজিও ‘সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস, জয়পুরহাট’ ও সহযোগী সংস্থা ‘এসো গড়ি, সোনার বাংল ‘। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, তারা নিরবিচ্ছিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কর্তৃপক্ষের বিধি অনুযায়ী প্রতিটি শিখন কেন্দ্রে ২৫-৩০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে কোনো কেন্দ্রেই ৩০ জন শিক্ষার্থী নেই। অধিকাংশ শিখন কেন্দ্রে ১০-১২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা বিভিন্ন মাদ্রাসা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী। আবার কোনো কোনো কেন্দ্রে শিক্ষার্থীই আসে না, ক্লাসও হয় না। শুধু কাগজ-কলমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখানো হয়েছে।

সরকারি অর্থ লোপাটের উদ্দেশ্যেই শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন না করে তারা নামমাত্র মানুষের ঘরের বারান্দা, রান্না ঘর, আঙ্গিনা, গোয়াল ঘর এবং দোকান ঘরে সাইনবোর্ড দিয়ে এসব শিখন কেন্দ্র স্থাপন করেছে। যেখানে কোনো ক্লাস হয় না।

অন্যদিকে উপজেলা মনিটরিং কর্মকর্তাদের জন্য প্রতিমাসে বরাদ্দকৃত ১৫ হাজার টাকা ঠিক রেখে সুপারভাইজার ও শিক্ষকদের বেতন সব কিছুতেই অনিয়ম হয়েছে। প্রতিজন সুপারভাইজার মাসিক পাবেন ১৫ হাজার টাকা কিন্তু তাদের দেওয়া হচ্ছে ১০/১২ হাজার টাকা ও প্রতিশিক্ষক যেখানে মাসিক ৫০০০ টাকা পাবেন বলে কথা ছিল, সেখানে তাদের দেয়া হচ্ছে ৩৫০০ টাকা। শিক্ষা কেন্দ্রগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত ভাড়া ও সাজসজ্জার খরচও আত্মসাৎ হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য মাসিক ভাড়া ১,৫০০ টাকা এবং ডেকোরেশনের জন্য বরাদ্দ ৫,০০০ টাকা। ৪৮ মাসের জন্য শিক্ষার্থীদের বরাদ্দকৃত মাসিক ভাতা জনপ্রতি ১২০ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও সেটাও তাদের দেওয়া হয় না। কার্পেটের জন্য ৫,০০০ টাকা এবং ফ্যান কেনার জন্য ৩,০০০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও বাস্তবে কিছুই সরবরাহ করা হয়নি। এছাড়া টিউবলাইট, পানির জার, স্টিলের ট্রাঙ্ক, জাতীয় পতাকা, সাইনবোর্ড, হাতলযুক্ত টুল, স্কুল ব্যাগ, স্কুল ড্রেস, শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড, টিচিং এইডস এবং গেমস উপকরণের অধিকাংশ সরঞ্জামই সরবরাহ করা হয়নি। কিন্তু বাস্তবে এই অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট করা হয়েছে।

উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ‘এসো গড়ি, সোনার বাংল ‘ সংস্থাটি নামমাত্র সাইনবোর্ড থাকার বিষয়ে ফারুক হোসেন, আমজাদ হোসেন, শফিকুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, আবু জাফর, আইনাল হোসেন, আজিবর রহমান, আব্দুল জলিল, সাহিদুর রহমান, শাজেদ আলি, সোহেল মিয়া জানান, কাগজ-কলমে ছাত্রছাত্রী দেখানো হলেও বাস্তবে কোনোদিন কেন্দ্রে ১০-১২ জনের বেশি শিক্ষার্থী আসে না। বেশিরভাগ সময় শিখন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকে। মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীদের এখানে ভর্তি দেখিয়ে সরকারের অর্থ লুটপাট ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে না। তাদের মতে, এভাবে সাইনবোর্ড সর্বস্ব দুই একটি শিক্ষাকেন্দ্রে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থী নিয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কেন্দ্র সচল দেখানো হয়েছে।

অভিভাবক ওয়াহেদ আলী,সোহায়েব হোসেন, জালালুদ্দিন মন্ডল, নূরজাহান খাতুন, জাহাঙ্গীর হোসেন, গোলাম সরোয়ার, নায়েব আলী, রিক্তা বেগম, জাহানারা বিবি, আকলিমা বিবি, রোকেয়া বেগম, মাহবুবা খাতুন জানান, ভর্তির সময় আমাদের বাচ্চাদের অনেক কিছু দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল ‍‍`এসো গড়ি, সোনার বাংলা’র কর্মকর্তারা। কাপড়-চোপড় এবং ব্যাগ দেওয়ার কথা থাকলেও শুধু বই আর খাতা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি।

‘এসো গড়ি, সোনার বাংলা’র কালাই উপজেলা প্রোগ্রাম ম্যানাজার জাহাঙ্গীর আলম জানান, কার্যক্রম পরিচালনায় কিছুটা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। তারা জেলা অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের জরিপ অনুযায়ী ঝরেপড়া শিক্ষার্থী নেই। তাহলে ৭০টি শিখুন কেন্দ্রে ২১০০ শিক্ষার্থী কোথায় থেকে এসেছে, সে প্রশ্নের কোনো জবাব তিনি দেননি।

‘এসো গড়ি, সোনার বাংলা’র নির্বাহী পরিচালক মো. গাওছুল আজমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমবার দিনাজপুর এবং দ্বিতীয়বার ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন কেটে দেন।

তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের স্কুল এলাকায় কোনো ঝরেপড়া শিক্ষার্থী নেই। বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপানুষ্ঠানিক স্কুল চালাচ্ছে ‘এসো গড়ি, সোনার বাংলা’। বেনামি ভূয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে তারা সরকারি টাকা লুটপাট করছে। তিনি উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে এই এনজিও‍‍`র বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

জয়পুরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিপুল কুমার জানান, ‘এসো গড়ি, সোনার বাংলা’ এনজিও‍‍`র দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে তিনি অবগত হয়েছেন। এবিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো হবে।

 

একুশে সংবাদ/সা.আ

Link copied!