AB Bank
ঢাকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

নীতিমালা লঙ্ঘন করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কাজীর দায়িত্বে


নীতিমালা লঙ্ঘন করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কাজীর দায়িত্বে

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বিধি লঙ্ঘন করে একাধিক এমপিওভুক্ত শিক্ষক একইসঙ্গে মুসলিম নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করছেন। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা একইসঙ্গে আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও উপজেলায় এমন ৩ জন নিকাহ রেজিস্ট্রারের তথ্য পাওয়া গেছে যারা একইসঙ্গে এমপিওভুক্ত স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক।

এছাড়া সরকার কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্ট্রার না হয়েও ভুয়া কাজী সেজে নকল বালাম তৈরির মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৭০টি বিয়ে রেজিস্ট্রি ও ৫টি বাল্যবিবাহ সম্পাদন করছেন এমপিওভুক্ত মাদরাসার এক কেরানি। 

আবার নিয়োগপ্রাপ্ত কাজীদের সহকারী হয়ে বালাম বই সংগ্রহ করে অনেকেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাল্যবিবাহসহ শতাধিক বিবাহ নিবন্ধন করছেন বলে তথ্য মিলেছে। 

বিবাহ নিবন্ধন নীতিমালায় বলা আছে সবেতনে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাইরে কোনো নিকাহ রেজিস্ট্রার সরকারি চাকরি বা আর্থিক লাভজনক কোনো কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। কিন্তু উপজেলার নিকাহ রেজিস্ট্রারেরা এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজীদের দায়িত্ব পালন করছেন। 

প্রথম শ্রেণির শ্রীমঙ্গল পৌরসভার দুইটি ওয়ার্ড এবং একটি ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৩জন শিক্ষক। এরমধ্যে ১ জন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ২ জন এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার শিক্ষক। 

শ্রীমঙ্গল কলেজ রোডের উদয়ন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষক কাজী মোহাম্মদ আব্দুল মালেক ২০০৪ সাল থেকে ৪ নং সিন্দুরখান ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করছেন। 

সিন্দুরখান ইউনিয়নের ডুবাগাঁও বাহরুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষক কাজী মুহিবুর রহমান ২০০৪ সাল থেকে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করছেন। ওই শিক্ষক ডুবাগাঁও মাদ্রাসার ইবতেদায়ী কারী পদে ১৯৮২ সালে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। 

এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করতে পারেন কি না জানতে চাইলে কাজী আব্দুল মালেক বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি না। আমি আরও আগেই চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম, স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুরোধে আরও কিছুদিন আছি। আমি দেশের বাইরে চলে যাবো, প্রসেসিং চলছে। 

এ বিষয়ে কাজী মুহিবুর রহমান বলেন, শুধু আমি কেনো পুরো জেলায় আমার মতো ৫০/৬০জন কাজী আছেন। 

এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার নিকাহ রেজিস্ট্রারেরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেদারছে বিবাহ নিবন্ধন করছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে একজনের নামে লাইসেন্স হলেও নিবন্ধনপ্রাপ্ত কাজীরা অনেকের কাছে নকল বালাম বই দিয়ে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাইরে গিয়েও দেদারছে বিবাহ নিবন্ধন করিয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। 

স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বিভিন্ন ইউনিয়নের বাসিন্দা হয়েও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালন করছেন একাধিক কাজী। সিন্দুরখান, মির্জাপুর, সাতগাঁও, আশিদ্রোন ইউনিয়নসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভুয়া কাজী সেজে অনেকে নকল বালাম বই সংগ্রহ করে বাল্যবিবাহ করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। 

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ডুবাগাঁও দাখিল মাদরাসার এমপিএভূক্ত কেরানি জয়নাল আবেদিন বৈধ কাজী না হয়েও কাজী সেজে ভুয়া সিল স্বাক্ষর নকল করে অবৈধভাবে ৭০টি বিবাহ নিবন্ধন ও ৫টি বাল্যবিবাহ রেজিস্ট্রি করেন। পরে তিনি নোটারি পাবলিক মৌলভীবাজার এর মাধ্যমে ভুল স্বীকারোক্তিও করেন। এব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।

জানা যায়, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ১ ও ৭ নং ওয়ার্ডের কাজী আব্দুল হক ২০১৪ সালে উপজেলার ছাবুরা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি নিকাহ রেজিস্ট্রার থেকে ইস্তফার জন্য জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে দরখাস্ত জমা দেন। কিন্তু ৯ বছর পার হলেও ওই কাজীর ইস্তফাপত্র গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডকে শূন্য ঘোষণা করে এখন পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়নি কাউকে। এরপর থেকে অদ্যাবধি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ১০ বছর যাবত শ্রীমঙ্গল প্রথম শ্রেণির পৌরসভার ১ ও ৭ নং ওয়ার্ডে কাজী না থাকায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডবাসী দীর্ঘদিন ধরে বিবাহ নিবন্ধন কার্যক্রম চালাতে ভোগান্তিতে পড়েন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল হক বলেন, পৌরসভার ১ ও ২ নং ওয়ার্ড দীর্ঘদিন থেকে শূন্য আছে। আমি অনেক আগেই কাজী পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। 

এব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা রেজিস্ট্রার এসএম সোহেল রানা জানান, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাজী আব্দুল হক সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছেন তা ঠিক, অব্যাহতির আবেদন দিয়েছেন এটাও সঠিক। কিন্তু চাইলেই মিনি অব্যাহতি নিতে পারেন না। অব্যাহতির বিষয়টি এখন পেন্ডিংয়ে আছে। আর ওয়ার্ড শূন্য ঘোষণা করতে হয় মন্ত্রণালয় থেকে। কাজী আব্দুল হকের অব্যাহতিপত্র গ্রহণ করে ওয়ার্ড শূন্য ঘোষণা করে নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে আমি ২০২৩ সালের ৩০ মে আইন ও বিচার-৭ মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছি। এখনও চিঠির রিপ্লে আসেনি। 

এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দিলীপ কুমার বর্ধন বলেন, এমপিভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে যারা কাজীর দায়িত্ব পালন করেন তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। আমি মৌখিকভাবে জেলা শিক্ষা অফিসারকেও জানিয়েছি। 

জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার ফজলুর রহমান বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদেরও কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ম্যানেজিং কমিটির কেউ বিষয়টি আমাকে লিখিতভাবে জানায়নি। কোনো শিক্ষক যদি একসাথে দুইটি সুবিধা ভোগ করে থাকেন প্রথমে সেটি দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ম্যানেজিং কমিটির। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোনো মাদরাসা বা স্কুল ম্যানেজিং কমিটি আমাকে জানালে এব্যাপারে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এসব বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা রেজিস্ট্রার এস এম সোহেল রানা মিলন বলেন, নিকাহ রেজিস্ট্রারকে যেই ওয়ার্ডের জন্য লাইসেন্স দেয়া হয়েছে সেই ওয়ার্ডের বেসরকারি চাকরি করতে পারবেন। তবে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাইরে সবেতনে একসাথে দুইটি চাকরি করা যাবে না। যদি কোনো নিকাহ রেজিস্ট্রার মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা, ২০০৯ এর বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন বা কোনো শর্ত ভঙ্গ করে থাকেন তথ্য দেন, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে আইন ও বিচার বিভাগ মন্ত্রণালয়-৭ এর সিনিয়র সহকারী সচিব সাইদুজ্জামান শরিফ বলেন, এসব তথ্য আমার হোয়াটসঅ্যাপে দেন। কোনো নিকাহ রেজিস্ট্রার যদি বিধি লঙ্ঘন করে তাহলে তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডটি শূন্য ঘোষণা করে দ্রুত করে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

 

একুশে সংবাদ/বিএইচ

Link copied!